সড়কে অবৈধ অটোরিকশার দাপট

যানজটে নাকাল রংপুর নগরবাসী

প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আব্দুর রহমান মিন্টু, রংপুর

অসহনীয় যানজট ভোগান্তি আর চরম দুর্ভোগের রংপুর মহানগরী। অবৈধ অটো রিকশার দাপটে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। সিটি করপোরেশন থেকে দেয়া হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার অটো রিকশার নিবন্ধন কার্ড। কিন্তু চলাচল করছে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার অটোরিকশা। ২০৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় চলছে এসব তিন চাকার ইজিবাইক। ফলে যানজট লেগেই থাকছে এই নগরীতে।

প্রশাসনের তৎপরতা থাকলেও ছোট ছোট সড়ক দিয়ে অটোরিকশা ঢুকে পড়ে শহরের অলিতে-গলিতে। এসব অটো রিকশার দাপটে অতিষ্ঠ নগরবাসী। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে সময় লাগছে ১ থেকে ২ ঘণ্টা। ফলে, যথাসময়ে গন্তব্য স্থানে পৌঁছতে হিমশিম খেতে হচ্ছে যাত্রী ও চাকরিজীবীদের।

অটোচালক স্বাধীন মিয়ার দাবি, লাইসেন্স নিয়েও শহরের ভেতরে প্রবেশ করতে জটিলতা ও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। যাদের লাইসেন্স নেই, তারা টাকার বিনিময়ে শহরে ঢুকছে। এমনিতেই ভাড়া কম, অন্যদিকে অবৈধ অটোর দাপটে বৈধ অটো রিকশার চালকরা জিম্মি তাদের কাছে। অটোচালক শফিকুল আলম জানান, ঈদের সময় শহরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না পুলিশ। যদিও প্রবেশ করা হয় তাও আবার যানজটে ভোগান্তি আর দুর্ভোগে পড়তে হয়। রাস্তায় সময় লেগে গেলে যাত্রীদের গালিগালাজ শুনতে হয়। অটোযাত্রী ফারুক হোসেন জানান, শাপলা থেকে জাহাজ কোম্পানি আসতে সময় লেগে গেছে ১ ঘন্টা। যানজট নিরসনে পুলিশ কাজ করলেও অটোরিকশা বেশি হওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে যাত্রী হয়রানি আর ভোগান্তির শেষ নেই। রংপুর মেডিক্যাল থেকে আসা অটো রিকশার যাত্রী শামীমা ইয়াসমিন জানান, রোগী নিয়ে মেডিক্যালে যেতে সময় লেগেছে প্রায় ২ ঘণ্টা। চার মাথা থেকে মেডিক্যাল মোড় যেতে সময় লাগে ৩০ মিনিট সেখানে ২ ঘণ্টা লেগে যায়। নিরসনের উদ্যোগ নেই সিটি করপোরেশন কিংবা প্রশাসনের। ঈদকে সামনে রেখে নগরীতে প্রতিদিনই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ডিসি মো. মেনহাজুল আলম জানান, সুপার মার্কেট, মিনি মার্কেট, সিটি বাজার ও বিভিন্ন শপিং মলের সামনে অবৈধ পার্কিংসহ ব্যাটারিচালিত অটো-রিকশার দৌরাত্ম্য নগরীতে নতুন করে উপদ্রব সৃষ্টি করছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। তবে, সিটি করপোরেশন অবৈধ অটোরিকশার ওপর অভিযান করার জন্য চিঠি দিয়েছে পুলিশকে। ট্রাফিক বিভাগ বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে যাদের কাগজ নেই, সেসব যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সরেজমিন দেখা গেছে, শহরের সিটি বাজারের সামনে থেকে সুপারমার্কেটের মোড় হয়ে পায়রা চত্বর ও জাহাজ কোম্পানির মোড় পর্যন্ত প্রায় ২ থেকে ৩ কিলোমিটার সড়কের আশপাশে বিপণিবিতান, বাজার ও গুরুত্বপূর্ণ অফিস অবস্থিত। অটোরিকশার কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে প্রতিদিন যানজটের কবলে পড়তে হয় নগরবাসীকে। আবার সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীর আশায় অটোরিকশাগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এতে মুহূর্তেই অটো ও চার্জার রিকশার দীর্ঘ সারি হয়ে যায়।

শহরের জাহাজ কোম্পানি মোড় এলাকায় চারদিক থেকে চারটি সড়ক এসে মিলেছে। এ মোড়ের চারদিকেই বিপণিবিতান। সড়কের মধ্যে অটোরিকশার স্ট্যান্ড দেখা যায়। এই মোড়ের পাশে শহরের প্রধান ব্যবসায়ীকেন্দ্র হাঁড়িপট্টি, লোহাপট্টি ও বেতপট্টি। এই এলাকার ছোট সংযোগ সড়কগুলোয় কেনাকাটা করতে এসে দীর্ঘ সময় মানুষকে যানজটে আটকে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

রংপুর সিটি করর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান, রংপুর শহর এলাকায় যানজটমুক্ত রাখতে অনেকবার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে যানজট নিরসনে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। রমজান মাসে শহর পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিছু নিয়ন্ত্রণহীন যানবাহন ও অটো চলাচল করায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। অটোরিকশা যাতে শহরে প্রবেশ করতে না পারে, দ্রুত তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।