ঢাকা ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রংপুরে বিরোধী দল-জোটের দৃশ্যমান কর্মকাণ্ড নেই

১০ দাবিতে আন্দোলন
রংপুরে বিরোধী দল-জোটের দৃশ্যমান কর্মকাণ্ড নেই

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ নেতাকর্মীদের মুক্তি-হয়রানি বন্ধ ও গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিসহ ১০ দফা দাবিতে লাগাতার বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় বিএনপির নেতৃত্বে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, পেশাজীবী জোটসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নিয়ে জোট গঠন হয়েছে। রংপুরে ওই সব দল বা জোটের কোনো অস্তিত্ব বা কর্মকাণ্ড নেই বলে বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

তারাও বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা কর্মসূচির সাথে একত্মতা ঘোষণা করে বিক্ষোভ, পদযাত্রা, মানববন্ধন, সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে। এরই মধ্যে তারা পরস্পর বৈঠক করছে। লিয়াজোঁ কমিটিও রয়েছে তাদের। তবে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ রংপুর বিভাগের আট জেলায় এসব জোট বা দলের কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান নয়। এমনকি স্থানীয়ভাবে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই। শুধু তাই নয়, এসব দলের নেতাদের কাউকে চেনেন না বলে একাধিক বিএনপি নেতা জানান। রংপুরে ওই সব দল বা জোটের কোনো অস্তিত্ব বা কর্মকাণ্ড নেই বলে বিএনপির একাধিক নেতা জানান।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘ঢাকায় গণতন্ত্র মঞ্চসহ বেশ কয়েকটি জোট বিএনপির সঙ্গে লিয়াজোঁ করে আলাদা আলাদাভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও দেশের অন্যতম বিভাগ রংপুরে ওই সব জোট বা দলের কোনো কর্মকাণ্ড নেই। তাদের নেতা কারা তা অনেকেই জানেন না। এমনকি রংপুর নগরীসহ বিভাগের বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই ওই দল বা জোটের। তবে জাসদ (রব), গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য এবং গণঅধিকার পরিষদের কিছু নেতাকর্মী গণতন্ত্র মঞ্চের নামে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন। এছাড়া ১২ দলীয় জোটের ব্যানারে নগরীর শাপলা চত্বর এলাকায় বিভাগীয় সমাবেশ হয়। এতে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি দল অংশ নেয়। দুই জোটের পৃথক প্রোগ্রামে হাতেগোনা কিছু নেতাকর্মীকে দেখা গেছে।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) সহ ১২ দলীয় জোটের ঢাকাসহ মানববন্ধন আর সমাবেশ করার কথা গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। তবে রংপুর বিভাগে এই জোটের কোনো দৃশ্যমান কর্মকাণ্ড নেই। একইভাবে এলডিপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এনপিপি, সমমনা পেশাজীবী জোট, গণফোরামসহ বিভিন্ন দলেরও একই অবস্থা; তাদের দলের কথা কাগজ-কলমে আছে বাস্তবে নেই।

তবে রংপুরসহ বিভাগজুড়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্কসবাদি) সহ বামজোটের কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান। তারা জোটের সব কর্মসূচি পালন করছে, তাদের দলীয় কার্যালয়সহ শক্তিশালী সংগঠন রয়েছে। এর ফলে তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতিফলন দেখা যায়। এছাড়া বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক নানা কর্মসূচিও পালন করে আসছে তারা।

এ ব্যাপারে বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) আব্দুল খালেক জানান, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোটসহ বিভিন্ন জোট বিএনপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে সারা দেশে আন্দোলন করছে। তবে ব্যতিক্রম রংপুর বিভাগ। কারণ, এখানে তাদের কারও সঙ্গে বিএনপির কোনো যোগাযোগ নেই। এ ব্যাপারে ওই সব জোট বা দলের সঙ্গে সমন্বয় সভা বা লিয়াজোঁ করার কোনো নির্দেশনা তারা এখনো পাননি।

রংপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দেড় মাস আগে গণতন্ত্র মঞ্চসহ কিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আবারও আলোচনা হবে। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করছি।’

রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামুর জানান, গণতন্ত্র মঞ্চসহ অন্যান্য জোটের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ তেমন নেই। তবে বেশ কিছুদিন আগে কল্যাণ পার্টিসহ কয়েকটি দলের কয়েকজন নেতা তাদের অফিসে এসে কথা বলেছেন। তবে তাদের পদবি বা পরিচয় তিনি জানেন না। তিনি বলেন, বিএনপি লাগাতার কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি পালন করে এলেও ওইসব জোট বা দল নিজেদের মতো করে কর্মসূচি পালন করে আসছে বলে তিনি শুনেছেন। বিএনপির ১০ দফা কর্মসূচি সমর্থন করে যেসব দল বা জোট আন্দোলন করছে তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য ও কুড়িগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন বলেন, তারা ছোট দল হলেও রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুরসহ তাদের প্রত্যেক জেলা ও উপজেলায় কমিটি রয়েছে। সক্রিয় কর্মী বাহিনীও রয়েছে। সম্প্রতি ১২ দলীয় জোটের ডাকে রংপুর বিভাগীয় সমাবেশে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দলটির চেয়ারম্যান বিগ্রেডিয়ার (অব.) সৈয়দ ইবরাহিম রংপুর সফর করেছেন। দলের কার্যক্রম শক্তিশালী করতে মাঠ পর্যায়ে সদস্য সংগ্রহ অভিযানও চলমান রয়েছে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি (জাসদ-রব) রংপুর জেলা সভাপতি আমিন উদ্দিন বিএসসি বলেন, রংপুর জেলা ও মহানগরে দলটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। মাঝেমধ্যে কিছু কর্মসূচি পালনও করেন তারা। গণতন্ত্র মঞ্চের দলগুলোর কার্যক্রম থাকলেও কোনো কার্যালয় নেই বলেও স্বীকার করেন তিনি। নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় সদস্য মোবাখ্খারুল ইসলাম নবাব জানান, রংপুরে তাদের একটি আহ্বায়ক কমিটি আছে। এখনো তাদের কর্মকাণ্ড তেমন দৃশ্যমান না হলেও খুব দ্রুত তারা রংপুরে বড় পরিসরে শোডাউন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম বলেছেন, বিএনপির কথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলনে জনগণের কোনো সমর্থন নেই। তারা বিভিন্ন কর্মসূচিতে লোক ভাড়া করে নিয়ে আসে। বিএনপি মূলত দল ভারি করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছে। কিন্তু জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। আর এসব সাইনবোর্ড সর্বস্ব দল বা জোটের অস্তিত্ব রংপুরে নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত