ছাদ থেকে ফেলে কিশোরী বধূকে হত্যাচেষ্টা

প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বরিশালে বিয়ের সাত মাসের মাথায় যৌতুকের দাবিতে কিশোরী বধূকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে বরিশাল নগরের রুপাতলী হাউজিং এলাকার ২২ নং সড়কের সারা-জারা ভবনের সামনে থেকে কিশোরীকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা। কিশোরী বধূর নাম জান্নাতুল ফেরদৌসি। নগরের রুপাতলী শেরেবাংলা সড়কের দিনমজুর রিপন হাওলাদারের মেয়ে সে। তার বয়স ১৪-১৫ বছর হবে বলে দাবি করেছেন স্বজনরা।

অভিযুক্ত স্বামীর নাম রাকিব হোসেন। পেশায় অটোরিকশাচালক, রুপাতলী ভাসানী সড়কের বাসিন্দা তিনি। কিশোরীর মা নুপুর বেগম জানান, তার মেয়ে রুপাতলী এলাকার এ ওয়াহেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। সাত মাস আগে অটোরিকশাচালক রাকিব হোসেনের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করে সে। মেয়ে নিখোঁজের পর থানায় জিডিও করেন তিনি। পরে ছেলের বাবা বিয়ের বিষয়টি জানিয়ে মীমাংসা করেন।

নুপুর বেগম বলেন, মেয়ে ভাসানী সড়কের স্বামীর বাসায় থাকতো। দুই মাস আগে মেয়েকে বাসায় দিয়ে যায় তার স্বামী রাকিব। তখন বলে দুই লাখ টাকার ফার্নিচার দিয়ে মেয়েকে পাঠিয়ে দেবেন। কিন্তু সামর্থ্য না থাকায় মেয়েকে না পাঠানোর সিদ্বান্ত নিই। কিন্তু কয়েকদিন আগে ফের রাকিবের কাছে চলে যায় আমার মেয়ে। এরপর আর মেয়ের খোঁজ নিইনি। নূপুর বেগম আরও বলেন, রাত ১০টার দিকে এক লোক আমাকে হাসপাতালে আসতে বলে। হাসপাতালে গেলে মেয়ে শুধু এটুকুই আমাকে বলেছে, তার স্বামী তাকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছে।

একই কথা জানিয়ে কিশোরী বধূর বাবা রিপন হাওলাদার বলেন, যৌতুকের দাবিতে জামাই, শাশুড়ি ও ননদ খুব মারধর করত। তারাই আমার মেয়েকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়েছে। কীভাবে ও কয় তলা থেকে ফেলেছে, সেই কথা মেয়ে কিছুই বলতে পারেনি। এদিকে ঘটনাস্থল রুপাতলী হাউজিংয়ের ২২ নং সড়কের সারা-জারা ভবনে গিয়েও সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কিশোরী বধূকে উদ্ধার করা ওই ভবনের প্রতিবেশি মো. নিজাম বলেন, আমি নামাজ পড়তে বের হব। হঠাৎ করে উপর থেকে কিছু পড়ার শব্দ শুনতে পাই। পরে দেখি ভবনের সামনে রাস্তায় কিছু পড়ে আছে। চিৎকার শুনে কাছে গিয়ে দেখি অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে এক কিশোরী। সঙ্গে সঙ্গে ৯৯৯-এ কল করে অ্যাম্বুলেন্স এনে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিই। পাঁচতলা সারা-জারা ভবনের মালিক স্বপন সরদার জানিয়ে তার ছেলে মেহেদি বলেন, মেয়েটি কীভাবে এখানে এলো বা কয়তলা ছাদ থেকে তাকে ফেলা হয়েছে তার কিছুই বলতে পারছি না। এ সময় ঘটনাস্থলে আসা কোতয়ালি মডেল থানার এসআই জোবায়ের বলেন, কি ঘটেছে তা জানার জন্য এসেছি। প্রকৃত ঘটনা এখনো জানতে পারিনি। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ওপর থেকে পড়ে যাওয়ায় দুই পা ভেঙে হাড় বের হয়ে গেছে। এছাড়াও মাথায় আঘাত পেয়েছে মেয়েটি। পা ভেঙে যাওয়ায় তাকে হাসপাতালের মহিলা অর্থোপেডিক্স ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান চিকিৎসকরা। মহিলা অর্থোপেডিক্স ওয়ার্ডের সেবিকা তমালিকা হালদার বলেন, অজ্ঞান অবস্থায় নিয়ে আসা হয় ওই কিশোরীকে।