ঢাকা ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রংপুরে বিএনপির কার্যক্রম

উপজেলা-পৌর কমিটিতে পদবঞ্চিত ত্যাগীরা

* নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ * বিভিন্ন উপজেলায় কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ-সভা
উপজেলা-পৌর কমিটিতে পদবঞ্চিত ত্যাগীরা

রংপুর জেলায় বিএনপির কার্যক্রমকে গতিশীল করতে জেলার আট উপজেলা ও তিনটি পৌরসভায় বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে দলটির জেলা সভাপতি-সম্পাদক। গত মঙ্গলবার রাতে জেলা আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর পরই কমিটির তালিকাসহ পদ-পদবির বিষয়টি ব্যক্তিগত ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।

বিভিন্ন উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই ত্যাগী ও দুর্দিনের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে অযোগ্য, নানা অপকর্মের সাথে জড়িত ও রাজনীতিতে সক্রিয় নয়, এমন ব্যক্তিদের পদ দেয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এসব কমিটিতে অনেক সিনিয়র নেতা ও নির্যাতিত-ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নও করা হয়েছে বলে কেউ কেউ অভিযোগ তুলেছেন। এছাড়া বদরগঞ্জ, পীরগাছা ও পীরগঞ্জ উপজেলায় একই ব্যক্তি বার বার শীর্ষ পদ আকড়ে ধরে রাখছেন। মিঠাপুকুর উপজেলা সদর, পীরগাছা, বদরগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিক্ষোভও অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বদরগঞ্জ, রংপুর সদর উপজেলা ও গঙ্গাচড়ায় পদ বঞ্চিতরা সভা করেছেন। বদরগঞ্জ পৌরসভার কমিটি নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছে দুই পক্ষ।

ঘোষিত কমিটিগুলো হলো, রংপুর সদর, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ উপজেলা ও কাউনিয়ার হারাগাছ পৌরসভা, বদরগঞ্জ ও পীরগঞ্জ পৌরসভা। নেতাকর্মীরা জানান, দুর্দিনে দলের জন্য কাজ করেছেন এমন ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে স্বজনপ্রীতি করে অদক্ষ ও অসাংগঠনিকদের কমিটির শীর্ষ পদ দেয়া হয়েছে। ঘোষিত এসব কমিটিতে অনেক ত্যাগী ও প্রবীণ নেতার স্থান হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বঞ্চিতদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের এপ্রিলে পূর্বের কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে সাইফুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও আনিছুর রহমান লাকুকে সদস্য সচিব করে রংপুর জেলা বিএনপির কমিটি অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর থেকে তারা জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি গঠনে কার্যক্রম শুরু করেন। প্রতিটি উপজেলা ও পৌরসভায় জেলা নেতাদের উপস্থিতিতে কর্মীসভা করা হয়। তবে কমিটি ঘোষণা না করে কর্মী সভার কয়েক মাস পর হঠাৎ করে মঙ্গলবার রাতে জেলা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব স্বাক্ষরিত রংপুর সদর, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ উপজেলা ও কাউনিয়ার হারাগাছ পৌরসভা, বদরগঞ্জ ও পীরগঞ্জ পৌরসভার কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে রংপুর নগরীসহ জেলা ও বিভিন্ন উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা গেছে। অনেকেই মূল্যায়ন না পেয়ে নিষ্ক্রিয় থাকারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এছাড়া ত্যাগী ও সিনিয়রদের পদ মূল্যায়নে জ্যেষ্ঠতা মানা হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে। সব মিলিয়ে নব ঘোষিত কমিটি নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে আসন্তোষ বিরাজ করছে।

দলীয় সূত্র জানায়, রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় সদস্য সচিব পদপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক, উপজেলা যুবদল ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শরিফুল ইসলাম ডালেস, অথচ তাকে কমিটিতে ৫নং যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। অথচ তিনি দীর্ঘদিন ধরে পীরগাছা উপজেলায় দলের জন্য নিবেদিতভাবে কাজ করছেন। তার নেতৃত্বে বিএনপিও অঙ্গ সংগঠনের বৃহৎ একটি অংশ চলে। একইভাবে মিঠাপুকুর উপজেলায় সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ খাজানুর রহমান খাজা, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাজেদুর রহমান রানা, ইউপি চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ তালুকদার, সাবেক ছাত্রদল সভাপতি সাদেকুল ইসলাম, শিল্পপতি ডা. মমতাজ হোসেন, আখতার হোসেন ও সাবেক স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি একেএম রুহুল্ল্যাহ জুয়েলকে শীর্ষ কোন পদে রাখা হয়নি। অথচ তারা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব পদপ্রত্যাশী ছিলেন। একইভাবে পীরগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম সেবু মন্ডলকে বাদ দেয়া হয়েছে। তার স্থানে উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল আজাদকে পদ দেয়া হয়। রংপুর সদর উপজেলায় মিজানুর রহমান রন্টু, আজহার আলী, আব্দুল আজিজ খোকা, আব্দুল কাইয়ুম যাদুসহ অনেকে ত্যাগীরা পদবঞ্চিত হয়েছে। গঙ্গাচড়া উপজেলায় বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আখেরুজ্জামান মিলনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। প্রতারণা মামলায় বর্তমানে জেল হাজতে থাকা বাস্তুহারা দলের সাবেক নেতা নাজমুল হুদাও যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পেয়েছেন। কাউনিয়া উপজেলার বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিকে সদস্য পদে রাখা হয়। তার স্থানে সদস্য সচিব করা হয় একটি ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি মোজাহারুল ইসলাম বাবলুকে। অথচ এই উপজেলায় বিএনপিকে দীর্ঘদিন ধরে সু-সংগঠিত করে আসছেন তিনি। তরাগঞ্জ উপজেলায় সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমানকে সদস্য করা হলেও কমিটিতে স্থান পাননি সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম। একই অবস্থা রংপুর সদর, পীরগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায়। ঘোষিত এসব কমিটি নিয়ে দলের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ কমিটি বাতিল করে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের দাবি করেন। অন্যথায় গণপদত্যাগসহ নানা কর্মসূচীর হুশিয়ারিও দেন তারা। অনতিবিলম্বে তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মী নিয়ে পুনরায় কমিটি গঠনের জন্য দলের হাইকমান্ডের কাছে জোর দাবি জানান তারা।

তাদের অভিযোগ, কমিটি গঠনের কথা ছিল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। সম্মেলনের মাধ্যমে। অথচ ঘোষণা করা হয়েছে প্যাড তান্ত্রিকভাবে। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে নানা অপকর্মের সাথে জড়িত, অজনপ্রিয় ও অচেনা মুখকে পদ দেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত