বরিশালে পোশাকের দামে চিন্তিত ক্রেতারা

অনেকেই ছুটছেন ঢাকায়

প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদ কেনা-কাটায় কিছুটা ব্যস্ততা বেড়েছে বরিশালের বিভিন্ন শপিংমলসহ বিপণিবিতানগুলোয়। তবে ঈদ বাজার যেভাবে জমে ওঠে, সেই রকম প্রাণবন্ত ভাব নেই মার্কেটগুলোয়। দিনের বেশিরভাগ সময়ে নামিদামি পোশাক ও জুতোর দোকানগুলো থাকছে ক্রেতাশূন্য। আর বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত নামিদামির থেকে ফুটপাতের দোকান ও হকার্স মার্কেটগুলোয় ক্রেতাদের উপস্থিতি বেশি থাকছে।

এ বিষয়ে নামিদামি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধিরা বলছেন, এবারে বিগত সময়ের থেকে ক্রেতা সমাগম অনেকটাই কম। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা বৃদ্ধির সঙ্গে বেচাবিক্রিও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা। আর ক্রেতারা বলছেন, তুলনামূলকভাবে বরিশালে পোশাকের দাম অনেক বেশি, তাই তারা অনলাইন ও ঢাকামুখী হচ্ছেন ঈদ বাজারের জন্য।

আছিয়া আক্তার নামে এক নারী গণমাধ্যমকে বলেন, দিন দিন বরিশাল শহরে পোশাক-জুতোর দোকান বাড়ছে। ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়া যারা নতুন দোকান দিয়েছেন, তারা সবাই ভালো পোশাক সরবরাহ করেছে। তবে তুলনামূলকভাবে দাম অনেক বেশি মনে হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে অনলাইনে কেনাকাটা করছি। কারণ অনলাইনেও নামিদামি ও বিশ্বস্ত অনেক প্রতিষ্ঠান সুনামের সঙ্গে পণ্য বিক্রি করছে। তন্নী নামে অপর এক ক্রেতা বলেন, জুতা আর পোশাকের ভিন্নতা খুঁজতে হলে গির্জা মহল্লা, চকবাজার, কাঠপট্টি এলাকার দোকানগুলোতে যেতেই হবে। তবে যে দাম তাতে দেখা ছাড়া, কেনার উপায় নেই। আর এতো দাম দিয়ে কিনলে নামিদামি ব্রান্ডের দোকানগুলো থেকে কিনলেই তো ভালো হয়। তাদের যেমন পণ্যের দাম, তেমনি মানও ভালো। তিনি বলেন, কাঁচা বাজারের মতো বরিশালের ঈদ বাজারে পর্যাপ্ত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। নয়তো সাধারণ মানুষ শুধু পোশাক কিনতে গিয়েই নিঃস্ব হয়ে যাবে। অন্যদিকে, নির্ধারিত ও সর্বাধুনিক ডিজাইনের কাপড় কিনতে বরিশাল থেকে অনেক তরুণ-তরুণী ঢাকামুখীও হচ্ছেন। বিভিন্ন পোশাকের দোকান ঘুরে শাকিল হাওলাদার নামে এক কলেজছাত্র বলেন, বরিশালে যে দাম তাতে ঈদে শপিংয়ের জন্য বাজেটের টাকায় শার্ট-প্যান্ট কিনলে জুতা হবে না, আর জুতা হলে শার্ট নয় তো প্যান্ট হবে না, এমন অবস্থা। তবে বাজেটের টাকা নিয়ে যদি ঢাকার নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোডসহ মিরপুরের মার্কেটে যাই, তাতে সব যেমন কেনা হবে, তেমনি ঘোরাও হবে।

এরইমধ্যে অনেকে ঢাকা থেকে ঈদ বাজার করে ফেলেছেন জানিয়ে রবিউল ইসলাম নামে এক যুবক বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে এখন তো সকালে ঢাকায় গিয়ে কাজ সেরে আবার রাতের মধ্যে বাসায় চলে আসা যায়। আমরা চার বন্ধু মিলে গত শনিবার সকালে ঢাকায় গিয়েছি, সারাদিন ঘোরাঘুরির সঙ্গে কেনাকাটা সেরে আবার রাতের বাসে বরিশালে চলে এসেছি। তিনি আরো বলেন, বাসা থেকে যে টাকা দেয়া হয়েছে। তা দিয়ে ঈদ শপিং করার পাশাপাশি বাসের ভাড়া ও ঘোরাঘুরির টাকা খরচ করেও হাতে কিছু এখনো রয়েছে। আর বরিশালে ব্রান্ডের দোকান বাদে যেসব দোকান রয়েছে সেখানে থেকে টি-শার্ট, ফরমাল শার্ট ও প্যান্ট কিনতে যে টাকা খরচ হতো বলতে গেলে তার একটার টাকা দিয়ে দুইটা কিনেছি ঢাকা থেকে। শার্ট-প্যান্ট ছাড়াও এলিফ্যান্ট রোড থেকে অল্প দামে ভালো মানের জুতাও কিনেছি। যে সব জুতা বরিশালে পাওয়াই যায় না। এদিকে বরিশালে কসমেটিকস ও কাপড়ের নির্ধারিত মূল্যের থেকে দ্বিগুণ দামে বিক্রির অভিযোগে গত কয়েকদিন ধরে। এক্ষেত্রে টানা অভিযান পরিচালনা করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আর প্রতিদিনই কোনো না কোনো নামিদামি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করছেন তারা। সর্বশেষ গত বুধবার বরিশাল নগরের দুইটি প্রতিষ্ঠানকে ১৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বরিশাল জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুমি রানী মিত্র জানান, প্রতিটি পণ্যে যেখানে যৌক্তিক একটা লাভ করা যায়, সেখানে বরিশালে ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ লাভ করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। এছাড়া অনেকে অনৈতিকভাবে আলাদা করে সংযুক্ত করেছে ভ্যাট। এগুলোর বিরুদ্ধে অভিযানে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এদিকে চকবাজার, সদররোড, কাঠপট্টি এলাকার নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও সিটি করপোরেশনের সামনের ফুটপাতের দোকান, হাজী মো. মহসিন হকার্স মার্কেট ও সিটি মার্কেটে ক্রেতা সমাগত দিনে দিনে বাড়ছে। আর বেচাবিক্রি ভালো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।