রংপুর শিশু হাসপাতাল

উদ্বোধনের দীর্ঘদিন পরও শুরু হয়নি সেবা কার্যক্রম

প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আব্দুর রহমান মিন্টু, রংপুর

দীর্ঘ প্রত্যশিত ১০০ শয্যার বিশেষায়িত রংপুর শিশু হাসপাতালটি শিশু স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরুর অপেক্ষায় এখন অনিশ্চিত প্রহর গুনছে। জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, হাসপাতালটিতে কাড়িক্ষত স্বাস্থ্যসেবা কবে আলোর মুখ দেখবে? এরইমধ্যে এটি নির্মাণের ৩৬ মাস এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রীর উদ্বোধনের ২ মাস অতিবাহিত হয়েছে। তবে, হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা থেকে এই অঞ্চলের শিশুরা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত রয়েছে।

গত সোমবার সরেজমিন হাসপাতাল চত্বর ঘুরে দেখা গেছে, বর্ণিল সাজে সজ্জিত রংপুর শিশু হাসপাতাল ভবনটিতে নির্জন এক ভুতুরে পরিবেশ বিরাজ করছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন আবাসিক চিকিৎসক, চারজন নার্স এবং নিরাপত্তা প্রহরীরা কর্মহীন অলস সময় কাটা"েছন। এর চত্বরে শিশুদের জন্য নির্মিতি বিভিন্ন খেলার রাইডগুলো ধুলায় মলিন হয়ে রয়েছে।

প্রায় ২ কোটি জনঅধ্যুষিত রংপুর বিভাগের শিশুদের বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্যে মহানগরীর প্রাণ কেন্দ্রে পুরোনো সদর হাসপাতাল চত্বরের প্রায় ১ দশমিক ৭৮ একর জমির উপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এবং স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ৩ বছর আগে রংপুর শিশু হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। ওই সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ভবনটি হস্তান্তর করে। পরে করোনার ডামাডোলে শিশুদের চিকিৎসা সেবার কার্যক্রমের উদ্যোগ বন্ধ রেখে এটিকে করোনার বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

করোনার প্রাদুর্ভাব অনেক আগে মুছে গেলেও অজ্ঞাত কারণে শিশু হাসপাতালের কার্যক্রম আজো শুরু করা হয়নি। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক রংপুর ১০০ শয্যার শিশু হাসপাতালটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ অঞ্চলের মানুষ আশায় বুক বাঁধে। তবে, সে আশা এখন অনিশ্চয়তার প্রহর গুনছে। উদ্বোধনের ২ মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত এর প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংযোগ কিংবা জনবল নিয়োগ করে শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার কার্যক্রম শুরু করা হয়নি।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রংপুর পুরাতন সদর হাসপাতাল চত্বরের প্রায় ১ দশমিক ৭৮ একর জমির উপর প্রায় সাড়ে ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর শিশু হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২ বছর সময় বেঁধে দেয়া হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের আগেই এর কাজ সম্পন্ন করেন। নতুন নির্মিত এই শিশু হাসপাতাল ক্যাম্পাসে তিন তলাবিশিষ্ট মূল হাসপাতাল ভবনে প্রতি তলায় ২০ হাজার ৮৮২ বর্গফুট আয়তনসহ মোট ৬২ হাজার ৮৪৬ বর্গফুট আয়তনের হাসপাতালের প্রথম তলায় জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, চিকিৎসকদের চেম্বার ও প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির ব্যবস্থ্যা রয়েছে। দ্বিতীয় তলায় অপারেশন থিয়েটার ও ব্রোন ইফনিট। তৃতীয় তলায় শিশু ওয়ার্ড এবং কেবিনের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া, ৬ তলাবিশিষ্ট ডাক্তারদের আবাসিক ভবন এবং স্টাফ ও নার্সদের আবাসিক ভবন, তিন তলাবিশিষ্ট সুপারিনটেনডেন্ট কোয়াটার, দুই তলাবিশিষ্ট গ্যারেজ কাম ড্রাইভার কোয়ার্টার, কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সাপ্লাই সিস্টেম, বিদ্যুৎ সাব স্টেশন, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, অভ্যন্তরীণ সড়ক তৈরি করাসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। রংপুর শিশু হাসতালটি চালু হলে এ অঞ্চলের শিশুদের বিনামূল্যে জটিল অপারেশনসহ বিশেষায়িত উন্নত চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাবে।

করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে এক সময় হাসপাতালটিকে করোনা ডিটেকটিভ হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। করোনা পরি¯ি'তি স্বাভাবিক এবং শূন্যের কোঠায় নেমে এলেও দীর্ঘদিন পরেও শিশু হাসতালের প্রয়োজনীয় জনবল এবং শিশু স্বাস্থ্যসেবার যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়নি। ফলে, রংপুর অঞ্চলের শিশুদের জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছুটতে হ"েছ। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সীমাবদ্ধ পরিসরে বর্তমানে এ অঞ্চলের শিশুদের চিকিৎসাসেবায় প্রয়োজনীয় জনবলসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকটে নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। এ কারণে এখানে শিশুদের মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে রংপুরের সিভিল সার্জন ডাক্তার মো. জাহাঙ্গীর কবির জানান, শিশু হাসপাতাল চালুর ব্যাপারে প্রশাসনিক অনুমোদন প্রয়োজন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং জনবল পাওয়া গেলেই এটি চালু করা হবে।

এ ব্যাপারে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাক্তার এবিএম আবু হানিফ জানান, রংপুর ১০০ শয্যার বিশেষায়িত শিশু হাসতালটির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ এবং জনবলের চাহিদা নির্ধারণ করে এসব বরাদ্দের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। দাপ্তরিক কাজ চলছে।

রংপুর সিটি করপোরেশনের সামনে ১০০ শয্যার বিশেষায়িত শিশু হাসতালটির কার্যক্রম দীর্ঘদিনেও চালু না হওয়ার বিষয়ে সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, বিষয়টি আমি জানি। এটি স্থানীয় এমপি এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেখা উচিত। দুঃখজনক হলেও সেভাবে বিষয়টি নেয়া হয়নি। বিষয়টি আমি দেখব।