রাজশাহীতে হঠাৎ বেড়ে গেছে তরমুজের দাম

প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজশাহীতে বেড়েছে তরমুজের দাম। চারদিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি তরমুজের দাম বেড়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। বর্তমানে বাজারে খুচরায় তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। হঠাৎ করে তরমুজের দাম বৃদ্ধিতে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ফলে দাম নিয়ে বাগবিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে।

তবে বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে বরিশাল, দিনাজপুর, চুয়াডাঙ্গা, পটুয়াখালীর তরমুজ দ্রুত সময়ের মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু বাজারে চাহিদা কমেনি। এখন বাজারে তরমুজের চাহিদা থাকায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। গত রোববার রাজশাহী নগরীর শালবাগানে আড়তগুলোতে পাইকারে অনুভব ও মধুমালা নামের তরমুজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬৫ টাকা দরে। এছাড়া বাংলালিংক তরমুজ বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ৪০ টাকা দরে। তবে বাংলালিংক তরমুজের স্বাদ কিছুটা কম। আর অনুভব ও মধুমালা তরমুজ খেতে তুলনামূলক মিষ্টি বেশি। তাই দাম বেশি হলেও ক্রেতারা ঝুঁকছে এই তরমুজের দিকে।

খুচরায় তরমুজ ক্রেতা সম্রাট করিম বলেন, গত শনিবার বাংলালিংক তরমুজ কিনেছিলাম প্রতি কেজি ৫০ টাকা দরে। তরমুজ আকারে ছোট ছিল। বড়গুলো ৫৫ টাকা প্রতি কেজি চাচ্ছিল। পাশেই ছোট আকারের বাহানের (মাচায় ঝুলন্ত) তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে। তরমুজের এতো দাম বেশি হলে মানুষ কিনে খাবে কীভাবে।

ক্রেতা শফিক ইসলাম বলেন, এ বছর তরমুজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে গেল বলে মনে হচ্ছে। কয়েকদিন আগে সব জায়গায় তরমুজ বিক্রি করতে দেখা গেল। কিন্তু এখন সেইভাবে চোখে পড়ছে না। যে দুই একজন ভ্রম্যমাণ ব্যবসায়ীকে চোখে পড়ছে, তারা দাম বেশি বলছে। দাম বেশির কারণে অনেকেই তরমুজ বিক্রি করছেন না। সব জায়গায় তরমুজের দাম বেশি চাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। ছোট আড়াই কেজি ওজনের একটা তরমুজ কিনেছি নগরীর ভদ্রা মোড় এলাকা থেকে ৮০ টাকা দরে।

নগরীর শালবাগানের চাচা ভাতিজা ফল ভাণ্ডারের বিক্রেতা খন্দকার মনিরুজ্জামান মিনার বলেন, সাধারণত রাজশাহীতে বরিশাল, পটুয়াখালী থেকে তরমুজ নিয়ে আসেন ব্যবসায়ী ও চাষিরা। প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০টি ট্রাকে তরমুজগুলো আনা হতো। কিন্তু সেখানে বৃষ্টির কারণে আগেই নষ্ট হয়ে গেছে তরমুজ। ফলে সেই জায়গাগুলো থেকে তরমুজ আসছে না। তবে এখন খুলনা, দিনাজপুর ও জয়পুরহাট থেকে রাজশাহীতে তরমুজ আসছে।

তিনি বলেন, রাজশাহীতে তরমুজের চাহিদা ভালো আছে। তবে তরমুজ কম। প্রতিদিন দুই থেকে তিন ট্রাক তরমুজ রাজশাহীতে নিয়ে আসা হচ্ছে। চাহিদা বেশি থাকায় ট্রাক থামার পরেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে তরমুজগুলো। আমার আড়তে অনুভব ও মধুমালা নামের তরমুজ বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকা প্রতি কেজি দরে। এছাড়া বাংলালিংক তরমুজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরে।

খুচরা বিক্রেতা শমসের আলী বলেন, ৮০ টাকা দরে তরমুজ অনেকেই কিনছেন। আবার অনেকেই দাম শুনে চলে যাচ্ছেন। কী করবো আমরা বেশি দামে কিনছি। হালকা লাভ রেখে বিক্রি করছি। তবে তুলনামূলক ক্রেতা কম। রাজশাহী ফল ব্যবসায়ী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি শাহিন হোসেন কালু জানান, বৃষ্টির কারণে তরমুজ আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। নিঃস্ব হয়েছেন অনেক চাষি ও ব্যবসায়ী। বাজারে তরমুজ অল্প। তার উপরে চাহিদা বেশি। এখন দাম বেশি চাষি পর্যায়ে। তবে রাজশাহীতে যে দামে বিক্রি হচ্ছে, আসলে সেটা ততটা বেশি না। ক্রেতা বা গ্রাহক পর্যায়ে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা প্রতি কেজি তরমুজ হলে ভালো হয়। কিন্তু গ্রাহক পর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা তরমুজ বিক্রি করছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে। কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, ব্যবসায়ীরা বলছে সরবারহ কম। চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেশি। তবে তরমুজ যে সব জায়গায় উৎপাদন হচ্ছে সেখানে দাম কম। মোকামে তরমুজ বিক্রি হয় পিস হিসেবে। বর্তমানে ৬০ থেকে সর্বোচ্চ ১৮০ টাকা প্রতি পিস তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে কিনে বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে। তিনি আরও বলেন, দালালদের সিন্ডিকেটে বাজারে তরমুজের দাম বেশি। আমরা সরকারকে বলছি মোকামে ও ব্যবসায়ীদের পাকা রশিদ বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে। তাহলে দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এছাড়া পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ক্যাবের বাজার মনিটরিং অব্যহত রয়েছে।