রাজশাহীর চার মার্কেট অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে

প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাজশাহী ব্যুরো

রাজশাহী নগরীর চারটি মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা মার্কেটগুলো হলো- নগরীর আরডিএ মার্কেট, সাহেববাজার কাপড়পট্টি, সোনাদীঘী মোড়ের সমবায় মার্কেট ও নগরীর সুলতানাবাদ নিউমার্কেট। সোমবার সকালে ব্যানার টানিয়ে ও মাইকিং করে এসব মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। মার্কেট চারটির প্রবেশপথে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ব্যানার টানিয়ে দেয়া হয়। ব্যানারে লেখা রয়েছে, ‘অগ্নিনিরাপত্তার দিক থেকে এই মার্কেট খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।’

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাজশাহী বিভাগের উপ-পরিচালক ওহিদুল ইসলাম বলেন, নগরীতে তীব্র তাপমাত্রা বিরাজ করছে। সচেতন না হলে যেকোনও মুহূর্তে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে, নগরীর আরডিএ মার্কেট, কাপড়পট্টি, সমবায় মার্কেট ও নিউমার্কেটে তেমন কোনো অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেই। আমরা এ বিষয়ে বারবার চিঠি দিলেও মার্কেট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আরডিএ মার্কেটের আশপাশে কোনো পুকুরও নেই। ফলে, অগ্নিকাণ্ড ঘটলে পানির অভাবে আগুন নেভাতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে। ওয়াসা পানি দিলেও তা পর্যাপ্ত হবে বলে মনে হয় না।

তিনি বলেন, এছাড়া মার্কেট চারটির সিঁড়িতেও মালামাল রাখা হয়। ফলে আগুনের ঘটনা ঘটলে মানুষ সহজে নামতেও পারবেন না। আর আরডিএ মার্কেটের ভেতরে এলোমেলোভাবে বৈদ্যুতিক তার রয়েছে। ফলে সহজেই আগুনের ঘটনা ঘটতে পারে। এসব কারণে মার্কেট দুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ে মাইকিং ও ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার ব্যানার টানানোর সময় উপস্থিত ছিলেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাজশাহী সদর দপ্তরের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুর রউফ, ওয়ার হাউজ ইন্সপেক্টর মোজ্জাম্মেল, ওমর ফারুক, সেলিম, আব্দুল্লাহ, তৌহিদুর রহমান, দিয়য়ানাতুল হক দিনার, স্টেশন কর্মকর্তা লতিফুর বারিসহ ওই স্টেশনের লিডার ও ফায়ার ফাইটাররা।

সরেজমিন দেখা গেছে, নগরীর আরডিএ মার্কেটে একের ভেতর সব রয়েছে। এক ছাদের নিচেই মুদি, কাপড়, কসমেটিকস, ইলেকট্রনিকস, কোকারিজসহ নষ্ট কোকারিজ মেরামত প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান। কিন্তু নিরাপত্তায় ‘শূন্য’। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। উদ্বিগ্নতার সঙ্গে যেন অসহায় স্থানীয় প্রশাসনও। ভেঙে ফেলার পরামর্শও দিয়েছিলে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির। কিন্তু আপত্তি ব্যবসায়ীদের। ফলে, চরম ঝুঁকি নিয়েই চলছে মার্কেটটি। মার্কেটের ভেতরে ঢুকলে আলো-বাতাস ঢোকার পরিবেশ খুঁজে পাওয়া যায় না। আগুন লাগলে দমকল বাহিনীর গাড়ি ঢোকার পথই নেই, আশপাশে নেই পানির আধারও।

ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশন, এমনকি মার্কেটটির নির্মাণকারী সংস্থা রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও (আরডিএ) মনে করে, এখানে চরম ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করছেন ব্যবসায়ীরা। ঝুঁকি বিবেচনা করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি মার্কেটটি ভেঙে ফেলার সুপারিশ করেছে।

নগরীর সাহেববাজার এলাকায় অনেক আগেই রাস্তার পাশে নানা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। ১৯৮৬-৮৭ সালের দিকে সড়ক সম্প্রসারণের কারণে ব্যবসায়ীরা উচ্ছেদ হন। তখন সড়কের পাশেই মার্কেট বানিয়ে ১৩৭ জন ব্যবসায়ীকে পুনর্বাসন করে আরডিএ। এজন্য এটি ‘আরডিএ মার্কেট’ নামেই পরিচিত। তিনতলা এই মার্কেটে এখন দোকানের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। কেনাকাটার জন্য নগরীর মধ্যবিত্তদের প্রথম পছন্দ এই মার্কেট। যেকোনো উৎসবের আগে মার্কেটের ভেতরে ভিড়ের কারণে পা ফেলার জায়গা থাকে না।

কয়েকজন ক্রেতা জানান, মার্কেটগুলো ভেতরের অবস্থা অনেক বাজে। এখানে বাজার করতে এতে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তাই মার্কেটগুলো ভেঙে নতুন করে পরিকল্পনা অনুযায়ী করা উচিত।

ফায়ার সার্ভিস ২০১৯ সালের এপ্রিলে এই মার্কেটকে ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করে। ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল আবারও ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে মার্কেটের প্রবেশপথে একটি পোস্টারও সাঁটিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু রাতারাতি গায়েব হয়ে যায়। আরডিএ’র পুনর্বাসিত সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলী দাবি করেন, এই মার্কেটে তেমন ঝুঁকি নেই। পরিবেশও ঘিঞ্জি না। তবে মার্কেটের আশপাশ দিয়ে মাকড়সার জালের মতো বিদ্যুতের তার টানার কারণে অগ্নিকাণ্ডের একটু ঝুঁকি আছে।

মার্কেট ভাঙার পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি দাবি করেন, এই মার্কেটের বয়স বেশি দিন না। এখনই ভাঙবে কেন? আর ভাঙলে নতুন করে নির্মাণ করতে সময় লাগবে। এতদিন ব্যবসায়ীরা কোথায় ব্যবসা করবে? আমাদের কোথায় পুনর্বাসন করা হবে? মার্কেট ভাঙার বিষয়ে আলোচনা করলে আমরা এই বিষয়গুলো জানিয়েছি। এরপর আর ভাঙার প্রক্রিয়া হয়নি।