ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি

রাবির সাত শিক্ষার্থীর নামে মামলা

প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ছয় শিক্ষার্থীসহ সাতজনের নামে মামলা করেছে প্রশাসন। গত মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় এ মামলাটি করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে, কেবল তাদের বিরুদ্ধেই মামলাটি করা হয়েছে। রাজশাহী নগরীর মতিহার থানার ওসি হাফিজুর রহমান গতকাল বুধবার এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতে পাবলিক পরীক্ষা অপরাধ, ১৯৮০ আইনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। ক্যাম্পাস খোলার পর মামলাটি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মামলার আসামিরা হলেন- রাবি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়াছির আরাফাত (২০), ফিশারিজ বিভাগের আলিফ হোসেন (২০), লোকপ্রশাসন বিভাগের আল শামস তামিম (১৯) ও ফোকলোর বিভাগের নজরুল ইসলাম (২০)। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছেন।

এছাড়া লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিশির আহমেদ (২১), ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ফজলুল করিম মাহিন (২৩) ও আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী শফিউল্লাহ (২৬) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় তিন ইউনিটে অন্যের হয়ে অংশ নিয়েছেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় তিনটি ইউনিটে প্রায় ২ লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। পরীক্ষায় ইয়াছির আরাফাতের হয়ে শিশির আহমেদ, আলিফ হোসেনের হয়ে ফজলুল করিম মাহিন, আল সামস তামিমের হয়ে শফিউল্লাহ ও নজরুল ইসলামের হয়ে প্রক্সি পরীক্ষা দেন শিশির আহম্মেদ। পরীক্ষা চলাকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রে শিশির, মাহিন ও শফিউল্লাহ পরীক্ষার্থী না হওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষার হলে প্রবেশ করে প্রক্সি পরীক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষায় অংশ নেন। ফলে তারা পাবলিক পরীক্ষা অপরাধ আইন, ১৯৮০-এর আওতায় অপরাধ করেছেন।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা ও অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রক্টর দপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রক্সি পরীক্ষার্থীদের অসদুপায় অবলম্বন থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করেন। কিন্তু তারা সেটা উপেক্ষা করে অসদুপায়ে একজনের হয়ে আরেকজন পরীক্ষা দিয়েছেন। এর আগে গত বছরের ২৬ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ‘প্রক্সি’ দেয়ার সময় চারজনকে আটক করা হয়। পরে তাদের এক বছর করে কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক হওয়ার পর বায়েজিদ খান নামের একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে বেরিয়ে আসে জালিয়াতি চক্রের মূলহোতার নাম।

তার ভাষ্যমতে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময় ‘প্রক্সি’ দেওয়ার জন্য ‘এক্সপার্ট’ হিসেবে তাদের ভাড়া করে আনেন। তন্ময়ের নির্দেশে বায়েজিদ প্রক্সি দিতে আসেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানান। এ ঘটনায় ৪ আগস্ট ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য তাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করেন। এই ‘মূল হোতার’ বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, তাদের কাছে যে তথ্য-উপাত্ত রয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে তারা অভিযোগ পেয়েছেন। কিন্তু যথাযথ তথ্য-প্রমাণ না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

ছাত্রলীগ নেতা তন্ময়ের বিরুদ্ধে মামলা না করার বিষয়ে রাবি প্রক্টর বলেন, ভর্তি পরীক্ষার সময় বায়েজিদকে যখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তখন সে তন্ময়ের নাম বলে। এই বিষয়টি অধিকতর তদন্তের জন্য গোয়েন্দা সংস্থা তাকে আটক করে নিয়ে যায়। বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থা দেখছেন। আমাদের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তথ্য-উপাত্ত না থাকায় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।