ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে জেলার বিনোদন কেন্দ্র, দর্শনীয় স্থান ও পার্কগুলোয় বিরাজ করছে উপচেপড়া ভিড়। ছোট-বড় সব বয়সি মানুষের উপস্থিতিতে রঙিন হয়ে উঠছে ঈদ উৎসব। ঈদের দিন সকাল থেকে রংপুরের দর্শনীয় স্থান, বিনোদন কেন্দ্র ও শিশু পার্কগুলো ঘুরে বিভিন্ন বয়সি মানুষের ঢল দেখা গেছে। দুয়েকটিতে বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ থাকলেও বাকি বিনোদন কেন্দ্র ও পার্কে ঢুকতে হচ্ছে দর্শনীর বিনিময়ে।
তিস্তানদীবেষ্টিত গঙ্গাচড়ার মহিপুর ঘাটে রংপুর-লালমনিরহাট জেলার মানুষের পারাপারে নির্মিত হয়েছে গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতু। এই সেতুর নিচে জেগে ওঠা পানিশূন্য বালুচর আর সবুজ ক্ষেতে ছিল দর্শনার্থীর আনাগোনা। আর হাঁটু পানিতে ছুটে বেড়াচ্ছে নৌকা আর ছোট ছোট স্পিডবোট। নদীকেন্দ্রিক দর্শনীয় এসব স্থানে বিনোদন কেন্দ্র বা পার্ক গড়ে তোলা সম্ভব হলে ভবিষ্যতে উত্তরের পর্যটন শিল্প বেশ সমৃদ্ধ হবে বলে জানান দর্শনার্থীরা। এছাড়া রংপুর চিড়িয়াখানা বিনোদন উদ্যান, রংপুর শিশুপার্ক, তাজহাট জমিদার বাড়ি ও জাদুঘর, সিটি চিকলি বিনোদন পার্ক, প্রয়াস সেনাপার্ক, চিকলি ওয়াটার পার্ক ও রূপকথা থিম পার্কে টিকিটের জন্য দর্শনার্থীদের লম্বা লাইন দেখা যায়। কাউনিয়া উপজেলার মানুষের ঈদ-পূজাঁসহ বিভিন্ন উৎসবে বিনোদনের তেমন কোনো প্রাকৃতিক ও নান্দনিক জায়গা না থাকায় তিস্তা রেলওয়ে ও সড়ক সেতুকে বিনোদনের একমাত্র স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে বিনোদনপ্রেমী মানুষরা। মুসলমান সম্প্রদায়ের দুই ঈদ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গা পূঁজা আর বাংলা নববর্ষে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে তিস্তা নদীর পাড়ে সেতু এলাকায়। তিস্তা পাড়ের নির্মল হাওয়া, নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা ও নৌকা ভ্রমন আনন্দ প্রিয় মানুষকে ক্ষনিকের জন্য হলেও অন্য জগতে নিয়ে যায়। কেউ কেউ শ্যালো চালিত আবার কেউ ডিঙ্গি নৌকা ভাড়া করে তিস্তা নদীর এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন। তিস্তা সেতুর উত্তর প্রান্তে শিশুদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে তিস্তা পার্ক। কিন্তু দক্ষিণে অর্থাৎ কাউনিয়া প্রান্তে শিশুদের জন্য এ ধরেনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় শিশুদের শুধু সেতুর উপর হাঁটাচলা করে মলিন মুখে বাড়ি ফিড়তে হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির মুখে কাউনিয়া প্রান্তে বিনোদনের জন্য পার্ক নির্মাণের কথা শোনা গেলেও তার কোনো বাস্তবায়ন নেই। ঈদের দিনে তিস্তা সেতুর নিচে গ্রামীণ ঐতিহ্য নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা বিনোদন প্রেমীদের একটু আলাদা আনন্দ দেয়। তিস্তা সেতু পাড়ে ঘুরতে আসা বিনোদন প্রেমী বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি আ. ছালাম, ব্যাংকার নুর আমিন, ছাত্র ইমরান জানান, তিস্তা সেতুর দুই প্রান্তে রেল ও সড়ক জনপদের সরকারি অনেক জায়গা রয়েছে এটিকে পর্যটন শিল্পের আওতায় এনে পিকনিক স্পটসহ বিনোদন পার্ক গড়ে তোলা হলে সরকারের যেমন রাজস্ব আয় হবে তেমনি শিশুসহ বিনোদন প্রেমী মানুষ নির্মল বিনোদন সুবিধা পেত। বালাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আনছার আলী জানান, এখানে একটি বিনোদন স্পট তৈরির চেষ্টা করছি। নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মনোনীতা দাস জানান, একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এখানে একটি বিনোদন স্পট তৈরির পরিকল্পনার কথা শুনেছি। আশা করছি হবে। আনন্দের তেমন কিছু না থাকলেও ঈদের দিন থেকে শুরু করে ঈদের ৪/৫ দিনে হাজার হাজার মানুষের পদভরে মুখরিত হয়ে উঠেছে কাউনিয়ার তিস্তা সেতু এলাকা। এসব বিনোদন কেন্দ্রে জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ নজরদারিও রয়েছে। ঈদকে কেন্দ্র করে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে যাতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি না হয়, সেজন্য পুলিশ বিশেষ নজরদারি করছে বলে জানিয়েছেন রংপুর ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান।