ঢাকা ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রংপুর জেলায় ভুট্টার বাম্পার ফলন

রংপুর জেলায় ভুট্টার বাম্পার ফলন

রংপুর জেলায় ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছর একরে ৯০ থেকে ১১০ মণ ভুট্টার ফলন আশা করেছিলেন কৃষকরা। তারা এ বছর পাবেন একরে ১৪০ থেকে ১৭০ মণ ভুট্টা। গত বছরের চেয়ে দামও প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় বাজিমাত করবেন তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গতবার জেলায় রবি মৌসুমে ১৯ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছিল। যেখানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৩৬ মেট্রিক টন। আর চলতি খরিপ মৌসুমে ১০ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে সব জাতের ভুট্টা চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ২০৬ মেট্রিক টন।

মিঠাপুকুর উপজেলার ১৬নং মির্জাপুর ইউনিয়নের ভুট্টাচাষি মো. খাইরুজ্জামান জানান, গতবছরের চেয়ে এবার ফলন ভালো পেয়েছেন। তিনি আশা করছেন এ বছর এক একর জমিতে ভুট্টা চাষ করে ১০০ মণ পাবেন। ওই এলাকার বর্গচাষি আব্দুর রাজ্জাক জানান ৪৪ শতাংশ জমিতে ভুট্টা চাষ করছেন। আশা রাখছেন ফলন ভালো হয়েছে। দাম ভালো পাবেন। গতবছর আর এক বর্গাচাষি আরজুর মা ২৪ শতাংশ জমিতে ভুট্টা চাষ করে ২০ মণ পেয়েছেন। তিনি বলেন, ভুট্টাতে খরচ কম ফলন বেশি। তাই দাম বেশি পেয়েছেন।

জেলার পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ও তাম্বুলপুর ইউনিয়নের তিস্তার চর ঘুরে দেখা গেছে, বালুচরে সবুজ আর সোনালি ফসলে ভরা। ক্ষেতগুলোতে কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত কৃষকরা। কেউ ধান কাটছেন, কেউ ভুট্টা উত্তোলনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এছাড়াও বালুচরে রয়েছে বাদাম, ডাল, মরিচ, বেগুন, শিম, কপি, পেঁয়াজ, রসুনসহ নানা ফসলের ফলন।

পীরগাছা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। যার মধ্যে খরিপ-১ মৌসুমে ১ হাজার ৯৫০ এবং রবি মৌসুমে ২ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ ভুট্টা চাষ করা হয়েছে তিস্তার চরাঞ্চলে। পীরগাছার তিস্তা চরের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত বছরে বালুচরে নানা জাতের ভুট্টা চাষ হলেও এ বছর তিস্তা সিডস কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের নুতন জাত ডালিয়া-৪৪৫৫ ও বাসুধা-১৬৫৫ চাষ বেশি হয়েছে। পীরগাছার কান্দিনার চর গ্রামের ভুট্টা চাষি জামাল মণ্ডল, দামুস্বর গ্রামের আব্দুল হক, ময়নুল ইসলামসহ আরো কয়েকজন জানান, গত বছর স্থানীয় দোকানির কথায় তারা কয়েক জাতের ভুট্টা চাষ করেছিলেন। কিন্তু ফলন ভালো হয়নি। চলতি বছর ডালিয়া-৪৪৫৫ ও বাসুধা-১৬৫৫ জাতের ভুট্টা চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। এবার ফলনের সঙ্গে ভালো দাম পেয়ে খুশি তারা। একই এলাকার কৃষক জিল্লুর রহমান বলেন, গত বছর দেড় একর জমিতে ভুট্টা চাষ করে ৯০ মণ ফলন পেয়েছিলাম। সেই জমিতে এবার ১৪০ মণ ভুট্টার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাড়াই করে আরো ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জানা গেছে, গত বছর প্রতি মণ (৪০ কেজি) কাঁচা ভুট্টা ৪০০ এবং শুকনা ভুট্টা ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে। সেটি এ বছরে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা প্রতি মণ ৮০০ টাকা এবং শুকনা ১ হাজার থেকে ১১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মো. তাজুল ইসলাম নামে এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের এ জাতটি নতুন। আমরা কৃষকদের নির্ভয়ে চাষ করতে অনুরোধ করেছি। কোনো ধরনের সমস্যা হলে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাসে তারা চাষ করে এখন লাভের মুখ দেখছেন। আসলে কৃষকদের মনে আস্থা আনাটাই বড় ব্যাপার।

রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল জানান, চলতি বছর ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার ৮ উপজেলায় ও তিস্তার চরাঞ্চলে ভুট্টার চাষাবাদ প্রতি বছর বাড়ছে। এ বছর ফলনও অনেক ভালো হয়েছে। এর মধ্যে পীরগাছা, কাউনিয়া ও গঙ্গাচড়ার তিস্তার চর ও চরবেষ্টিত এলাকায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় ২১ হাজার ৪৩০ হেক্টর জমিতে সব জাতের ভুট্টা চাষ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ৮৪ মেট্রিক টন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত