নারায়ণগঞ্জে ঈদের ছুটির ১০ দিনে ডায়রিয়া আক্রান্ত হাজার ছাড়াল

প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ডায়ারিয়া আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। গত ১০ দিনে গড়ে ১০০ জনেরও বেশি রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে নারায়ণগঞ্জের জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া হিসেবে পরিচিত) ভর্তি হয়েছে বলে জনিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জলবায়ু পরিবর্তন, দূষিত পানি এবং বাইরের খাবার খাওয়ার জন্য বেশিরভাগ রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরু হয়েছে গত ১৯ এপ্রিল থেকে। গত শুক্রবার রাতে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সি রোগীর ভীড়। ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সিনিয়র সাব নার্স মেরী রিমি দিও বলেন, আমাদের এখানে প্রতিদিন ৯০ থেকে ১০০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছে। হিসেব করলে ১৯ তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে। মূলত গত দুই মাস ধরেই এখানে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রথমে শিশুদের সংখ্যা বেশি ছিল। এখন সব বয়সের রোগীই আসছে। আমরা সাধ্যমতো তাদের সেবা দিতে চেষ্টা করছি।

এক রোগীর স্বজন আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমার স্ত্রীর আজ সকাল থেকেই ঘনঘন বমি হচ্ছিল। দুপুরে সে অনেকটা দুর্বল হয়ে যায়। একপর্যায়ে দেখি বিছানা থেকে উঠতে পারে না, এমন অবস্থা। তাই দ্রুত তাকে এখানে এনে ভর্তি করলাম। এখন তাকে স্যালাইন আর অন্যান্য ওষুধ দিয়েছে ডাক্তার। দেখি কি হয়।’

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক গোলাম মোস্তফা বলেন, মে, জুন ও জুলাই এই তিন মাসে গরম বেশি থাকায় স্বাভাবিকভাবেই ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ে। তাছাড়া এখন জলবায়ু পরিবর্তন দূষিত পানি এবং বাইরের খাবারও ডায়রিয়া রোগী বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তাই আমি মনে করি সবার উচিত ডায়রিয়া রোগ এড়াতে ভালো পনি ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা। আমরা সচেতন না হলে এটা আরো বাড়বে।

এদিকে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে চিকিৎসা সরঞ্জামের। তাই অনেক রোগীর স্বজনদের হাসপাতালের বাইরের থেকে ক্যানুলাসহ অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনে আনতে হচ্ছে।

আশ্রাফুল ইসলাম নামে এক রোগীর স্বজন জানান, সরকারি হাসপাতালের নিয়ম হচ্ছে সবকিছু এখান থেকেই দিবে। কিন্তু এই হাসপাতালে ওষুধ থেকে শুরু করে সব আমরাই বইরে থেকে কিনে আনি। অতিরিক্ত বমি হওয়ার জন্য আজকে সন্ধ্যায় ছোট মেয়েটাকে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করছি। কিন্তু সেলাইন দিতে যেই ক্যানুলা লাগে সেটা এখানে নেই। তাই ২০০ টাকা দিয়ে বাইরে থেকে কিনে আনলাম। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে যারা আসছে সবাইকে বাইরে থেকে ক্যানুলা আর ইনজেকশন কিনে আনতে হচ্ছে। আসলে এটা নামেই সরকারি হাসপাতাল।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ও হাসপাতালের চিকিৎসা তত্ত্বাবধায়ক ডা. মশিউর রহমান জানান, প্রতিবছরই এ সময় ডায়ারিয়া রোগী আক্রান্তের সংখ্যা বেশি থাকে। বর্তমানে গড়ে ৮০ জনের মতো ডায়ারিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। আমরা সাধ্যমতো তাদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। ওষুধের কোনো সঙ্কট নেই। তবে মাঝেমধ্যে রাতের বেলায় রোগীর চাপ বেড়ে গেলে তখন ক্যানুলাসহ কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম বইরে থেকে কিনে আনতে বলা হয়েছে যেটা আসলে বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমাদের কাছে সব ধরনের ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণ রয়েছে।