‘দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রতিটি ওয়ার্ডে স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন করা হবে’
প্রকাশ : ০৩ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রতিটি ওয়ার্ডে ন্যূনতম ২০০ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। গতকাল মঙ্গলবার নগর ভবনের মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির তৃতীয় সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এ তথ্য জানান। গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
ব্রিফিংকালে শেখ তাপস বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে ন্যূনতম ২০০ সদস্য নিয়ে আমরা স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করতে চাই। যেকোনো দুর্যোগ পরবর্তী তাৎক্ষণিকভাবে এসব দল যেন প্রস্তুত থাকে, সাড়া দিতে পারে- আমরা সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাই। এসব দলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্কাউটসে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী, বিএনসিসি, রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা থাকবে। বয়সসীমা থাকবে ১৬ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত। প্রত্যেক ওয়ার্ডে যেসব মার্কেট রয়েছে, সেসব মার্কেটের নিরাপত্তারক্ষীরাও এ দলে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। তবে তাদের বয়সসীমা শিথিল করা হবে। আগামী ৩০ মে’র মধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডেই এসব স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন করা হবে। স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণ ও মহড়া আয়োজনের আগামী বাজেট থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে জানিয়ে মেয়র তাপস বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী আমরা একটা নির্দেশিকা প্রণয়ন করব। সেটার আলোকে বাৎসরিক সূচি প্রণয়ন করব। প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা প্রতি তিন মাসে এবং পরবর্তীতে প্রতি মাসে স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে অঞ্চলভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও মহড়ার আয়োজন করব। যেমন- কোনো বড় স্থাপনা চিহ্নিত করে সে স্থাপনায় দুর্যোগ হলে কী কী করণীয়? এভাবে স্থাপনাকেন্দ্রিক অঞ্চলভিত্তিক আমরা মহড়া করবো। সেজন্য আগামী বাজেট থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দুর্যোগ মোকাবিলা খাতে অর্থ বরাদ্দ রাখবে। এসব প্রশিক্ষণ ও মহড়ায় যে ব্যয় হবে তা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বহন করবে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা ইতোমধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক স্থায়ী কমিটি গঠন করেছি। কমিটির পর্যালোচনা ও সুপারিশ অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যও বাজেটে আর্থিক বরাদ্দ রাখা হবে। যাতে করে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আমরা মানবিক কারণেও দাঁড়াতে পারি। এছাড়া, আমরা দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দক্ষিণ সিটিতে একটি জরুরি সাড়া দান কেন্দ্র বা ইমার্জেন্সি রেসপন্স সেন্টার প্রতিষ্ঠা করছি। আগামী জুনের মধ্যেই এটি চালু হবে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় ‘দুর্ঘটনাস্থলে সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনায় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা’বিষয়ক একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আজকের বৈঠকে আমরা ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক এবং পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া কমিটিতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন, ডিএমপি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, ডিসিসিআই, জেলা প্রশাসন ও রেড ক্রিসেন্টের প্রতিনিধি থাকবে। কমিটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী দুর্যোগ মোকাবিলায় নির্দেশিকা প্রণয়ন করবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ তাপস বলেন, রাজউক এরই মধ্যে ৪২টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং ১৯৭টি ভবন সংস্কারের সুপারিশ করেছে। এ তালিকা আগামী ৭ দিনের মধ্যে রাজউক আমাদেরকে হস্তান্তর করবে। ৪২টি ভবন সেটা সরকারি বা বেসরকারি যা-ই হোক না কেন তা কতদিনের মধ্যে ভেঙে ফেলা যায় এবং ১৯৭টি ভবন সংস্কার করে তা কতদিনের মধ্যে ব্যবহার উপযোগী করা যায় সে বিষয়েও আমরা আশু পদক্ষেপ নেব। সেজন্য পরে আবারও কমিটির বৈঠক ডাকা হবে। এখন থেকে প্রতি প্রান্তিকে আমরা কমিটির সভা করব।
করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার সামির সাত্তার, দক্ষিণ সিটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সিরাজুল ইসলাম ভাট্টি, করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক কমিটির সদস্যদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক লে. কর্নেল মো. রেজাউল করিম, বিএনসিসি’র লে. কর্নেল রাশেদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. ফিরোজ উদ্দিন, রাজউক সদস্য মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দিন আহমদ, বিআরটিএ’র পরিচালক এটিএম কামরুল ইসলাম, বিটিসিএল’র উপ-মহাব্যবস্থাপক এএম আব্দুল্লাহ পাটওয়ারী, তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপক মো. আব্দুর রউফ, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. এমদাদুল হক, ঢাকা জেলা প্রশাসন, ডিপিডিসি, গার্লস গাইড, বাংলাদেশ স্কাউটস, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, গণপূর্ত অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ক্যাব, বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর, বিসিআইসি, আনসার ভিডিপি, ডিআরআরও-এর প্রতিনিধিরা এবং করপোরেশনের কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।