ঢাকা ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চালু হলো ভোলাগঞ্জ বর্ডার হাট

চালু হলো ভোলাগঞ্জ বর্ডার হাট

আড়াই বছর পর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে সিলেট জেলার প্রথম সীমান্ত হাটটি গতকাল শনিবার উদ্বোধন করা হয়েছে। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সীমান্তে এই হাট বসবে, যার উল্টো দিকে রয়েছে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া হিলস।

বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ ও ভারতের সহকারী হাইকমিশনার নীরাজ কুমার জয়সওয়াল যৌথভাবে এই হাট উদ্বোধন করেন। সকাল ১০টায় উদ্বোধনের পর এই হাটে ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম শুরু হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো: মজিবর রহমান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন, ভারতের সোহরা সিভিল সাব ডিভিশনের এসডিও শ্রীমতি হেমা নায়াক (আইএএস), সিলেট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শামীম আহমদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আমজদ, জেলা পরিষদের সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আপ্তাব আলী কালা, জেলা পরিষদের সদস্য তামান্না আক্তার হেনা, গোয়াইনঘাট সার্কেল এএসপি প্রবাস কুমার সিংহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ভারতের ইস্ট খাসি হিলস ডিস্ট্রিক্টের পুলিশ, বিএসএফ, কাস্টমসসহ সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের প্রতিনিধিরা এবং ভারত-বাংলাদেশ বর্ডার হাট ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশের ২৬টি ও ভারতের ২৪টি মিলিয়ে হাটে ৫০টি দোকান আছে। উদ্বোধনী দিনই হাটে দুই দেশের ক্রেতা-বিক্রেতা ও উৎসাহী মানুষের ভিড় ছিল। হাটে দুই দেশের দোকানিদের স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত দ্রব্য, পান-সুপারি, সবজি, নানা জাতের মসলা, জুতা, প্রসাধনসামগ্রী বিক্রি করতে দেখা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এখানে সীমান্ত হাট চালু হওয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের উপকার হবে। এর পাশাপাশি দুই দেশের সীমান্ত এলাকার মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হবে। পাড়ুয়া এলাকার বাসিন্দা রহমত আলী সীমান্ত হাটে স্টল বরাদ্দ পেয়ে উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, বর্ডার হাট চালু হওয়ায় আমরা খুশি। অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, এই হাটে দুই দেশের মানুষ যেমন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন, তেমনি সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠবে। ভারতের সহকারী হাইকমিশনার নীরাজ কুমার জয়সওয়াল বলেন, এখানে সীমান্ত হাট চালু হওয়ায় দুই দেশের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবেন। পাশাপাশি দুই দেশের মানুষের সুসম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে।

জানা গেছে, এই সীমান্ত হাট প্রতি সপ্তাহে শনিবার ও বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলমান থাকবে। হাটের মধ্যে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি হবে এবং হাটের ৫ কিলোমিটার এলাকার বাসিন্দারা পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের সুযোগ পাবেন। এরই মধ্যে আবেদনকারী বিক্রেতাদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে ২৪ জন বিক্রেতা বাছাই করা হয়। পরবর্তীতে অন্যান্য আবেদনকারী বিক্রেতাদের লটারির মাধ্যমে সুযোগ দেয়া হবে। আবেদনকারী ক্রেতাদের মধ্যে বর্ডার হাট ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সিলেটের স্বাক্ষরে কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেতা ও সাংবাদিকদের ভিজিটর কার্ডের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। হাটে একজন ক্রেতা একদিনে সর্বোচ্চ ২০০ ডলারের সমমান বাংলাদেশি টাকায় পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। প্রবেশ ফি বাবদ কার্ডধারী একজন ক্রেতাকে দৈনিক ৩০ টাকা ও বিক্রেতাকে দৈনিক ৭০ টাকা প্রদান করতে হবে। ওই টাকা বর্ডার হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমোদনক্রমে এই হাটের সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করা হবে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং জানান, এই সীমান্ত হাট দুই দেশের মানুষের মধ্যে পারস্পারিক মেলবন্ধন ও সৌহার্দ্যরে সম্পর্ক সৃষ্টি করবে। পাশাপাশি চাহিদামাফিক পণ্য বিপণনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে বাণিজ্যিক উন্নতির সাথে সাথে চোরাচালান অনেকাংশে কমে যাবে। পর্যটনের ক্ষেত্র প্রসারিত হবে। শুল্কমুক্ত আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা বেশি লাভবান হবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে সীমান্তে হাট স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। ওই দিন সীমান্ত-সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়েছিল। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ ও মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পাহাড়ের সীমান্তে হাট চালুর সিদ্ধান্ত হয়। এরপর সীমান্তের ১২৪৮/১২ এস এবং ১১ এস পিলারের কাছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ ১০ নম্বর এলাকা এবং ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া হিলস এলাকায় দুই দেশের সমপরিমাণ ১ একর ৫০ শতক জায়গায় সীমান্ত হাট নির্মাণ করা হয়।

২০১৯ সালে নির্মিত এ হাট করোনায় আটকে ছিল। ২০২০ সালের ২৬ মার্চ এবং পরবর্তীতে ডিসেম্বরে এ হাট চালুর কথা ছিল। কিন্তু, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দুই দফা তারিখ পেছানো হয়। এরপর বন্যার কারণে হাটের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হচ্ছিল না। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় উভয় দেশের সীমান্ত হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগে হাটটি চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত