সিলেটে র‌্যাবের যৌথ অভিযান

জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র চার সদস্য গ্রেপ্তার

প্রকাশ : ১০ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সিলেট ব্যুরো

সিলেট শহরতলীর এয়ারপোর্ট রোডের বড়শালা এলাকায় রাতভর অভিযান চালিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে র‌্যাব-৯ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সংস্থাটির গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে সোমবার রাতভর অভিযান শেষে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র অন্যতম শূরা সদস্য ও দাওয়াতি শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ মায়মুন, মো. আবু জাফর, মো. আক্তার কাজী, সালাউদ্দিন রাজ্জাক মোল্লা। এর মধ্যে মায়মুনের বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলায়। আবু জাফর, আক্তার কাজী ও রাজ্জাক মোল্লার বাড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায়। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ২ লাখ টাকাসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব-৯ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তার হওয়া আব্দুল্লাহ মায়মুন অভিনব কৌশলের বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থসংগ্রহ করে নতুন জঙ্গি সংগঠনের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের জন্য অর্থ সহায়তা দিয়ে থাকেন। পাশাপাশি তিনি জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সঙ্গে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সমন্বয়কের কাজ করেন।

তিনি জানান, ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে আট তরুণ নিখোঁজ হয়। পরে নিখোঁজ তরুণদের পরিবার কুমিল্লার কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। নিখোঁজের ঘটনা দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এ পর্যায়ে র‌্যাব ফোর্সেস তাদের উদ্ধারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। নিখোঁজ তরুণদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে র‌্যাব ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামক একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় থাকার তথ্য পায়। র‌্যাব জানতে পারে, এই সংগঠনের সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘কেএনএফ’র সহায়তায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে।

খন্দকার আল মঈন বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে এরই মধ্যে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ সর্বমোট ৬৮ জন এবং পাহাড়ে অবস্থান, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কার্যক্রমে জঙ্গিদের সহায়তার জন্য পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফ’র ১৭ নেতা ও সদস্যকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, সংগঠনের আমির আনিসুর রহমান মাহমুদ, দাওয়াতি কার্যক্রমের প্রধান গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল্লাহ মায়মুন, সংগঠনের উপদেষ্টা শামীম মাহফুজ, অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান রাকিব।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা জানতে পারে, এই নতুন জঙ্গি সংগঠনের অন্যতম শূরা সদস্য ও দাওয়াতি শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ মায়মুন সংগঠনের কয়েকজন সদস্যসহ সিলেট এলাকায় অবস্থান করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এর অংশ হিসেবে গত সোমবার রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র‌্যাব-৯ এর যৌথ অভিযানে সিলেটের এয়ারপোর্ট থানার বড়শালা বাজার এলাকা থেকে এই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় নগদ ২ লাখ টাকা, ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি।

র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন দাবি করেন, গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল্লাহ মায়মুন ২০১৩ সালে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে আনসার আল ইসলাম জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন। সে আনসার আল ইসলামের সিলেট বিভাগীয় প্রধান ছিল। আনসার আল ইসলামের শীর্ষ জঙ্গি নেতা চাকরিচ্যুত মেজর জিয়ার সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল এবং তার বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল। ২০১৯ সালে বগুড়ার একটি সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় সে গ্রেপ্তার হয় এবং এক বছরের অধিক কারাভোগ করে ২০২০ সালের শেষ দিকে জামিনে মুক্তি পায়।