ঢাকা ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রংপুরের অর্থনীতিতে আশীর্বাদ

জুনে বাজারে আসবে হাঁড়িভাঙ্গা আম, টার্গেট ২৫০ কোটি টাকা

জুনে বাজারে আসবে হাঁড়িভাঙ্গা আম, টার্গেট ২৫০ কোটি টাকা

অতি সুমিষ্ট, আঁশহীন, হাঁড়িভাঙ্গা আমের চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। কয়েক বছর ধরে ফলন ভালো হওয়ায় বেড়ে চলেছে আম উৎপাদনের পরিধিও। রংপুর সদর, মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জ উপজেলার বিস্তৃত এলাকার ফসলি জমি, বাগানসহ উঁচু-নিচু ও পরিত্যক্ত জমিতে হচ্ছে এই হাঁড়িভাঙ্গা আমের চাষ।

সারা দেশে জনপ্রিয়তার তালিকায় থাকা এই আম জুনের ১৫-২০ তারিখের মধ্যে গাছ থেকে পাড়া শুরু হবে। তবে আবহাওয়া প্রতিকূলে বা প্রচন্ড গরম থাকলে সপ্তাহখানেক আগেও বাণিজ্যিকভাবে বাজারে হাড়িভাঙ্গা আম বিক্রি করতে পারবে আমচাষিরা।

টেকসই অর্থনীতির জন্য হিমাগার স্থাপন, আধুনিক আমচাষ পদ্ধতি বাস্তবায়ন, গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনসহ হাঁড়িভাঙ্গাকে জিআই পণ্য হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়েছে আম চাষি, ব্যবসায়ী ও রংপুরের মানুষজন। আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি বছর ২২০-২৫০ কোটি টাকার আম বিক্রির আশা স্থানীয় আম চাষিদের। তবে আবহাওয়া ভালো থাকলে হাঁড়িভাঙ্গাসহ বিভিন্ন জাতের আম দেশের চাহিদা মিটিয়ে এবারও বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। এদিকে রংপুর অঞ্চলে হাঁড়িভাঙ্গা আমের ফলন বেশি হলেও ফজলি, এছাহাক, ছাইবুদ্দিন, সাদা ল্যাংড়া, কালা ল্যাংড়া, কলিকাতা ল্যাংড়া, মিশ্রিভোগ, গোপালভোগ, আম্রপালি, সাদারুচিসহ আরও নানা প্রজাতির আম উৎপাদন হয়ে আসছে। এসব আমের ভিড়ে এখন সবচেয়ে বেশি চাহিদা হাড়িভাঙ্গার। একটি হাঁড়িভাঙ্গা আমের ওজন ২শ থেকে সাড়ে ৪শ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। জানা গেছে, এক সময়ে বছরের পর বছর ধরে রংপুরে ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন হয়ে আসছিল। তবে ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় দিন দিন বেড়েছে হতাশা। এখন সেই হতাশার ছাপ কেটে গেছে। স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় হাঁড়িভাঙ্গা আম বদলে দিয়েছে এখনকার চাষিদের পরিচয়। ধানচাষিরা এখন আমচাষি। প্রতি বছর আম চাষ করে লাভবান হচ্ছে আমচাষিরা। এতে বদলে গেছে রংপুরের হাজার হাজার আমচাষি ও কৃষকের ভাগ্য। যেন হাঁড়িভাঙ্গা আম রংপুরের অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবছর রংপুর জেলায় ১ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় বেশি। তাছাড়া ঝড় কিংবা বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় আমের তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে ১ মাসের অধিক দাবদাহ থাকায় কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তারপরও গত বছরের তুলনায় এবারে বেশি আমের ফলন হয়েছে।

সরেজমিন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর, রূপসি, সর্দারপাড়া, আখিরাহাট, মাঠেরহাট, পদাগঞ্জ, গোপালপুর, পাইকারেরহাট, কদমতলা, তেকানী, বালুয়া, লালপুকুর, মৌলভীবাজার, হেলেঞ্চা, ছড়ান, দুর্গাপুর, সদরের পালিচড়া, সদ্যপুষ্করণী, কাটাবাড়ি, শ্যামপুর ও বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর, নাগেরহাট, কুতুবপুর, বদরগঞ্জ, ওসমানপুর, খিয়ারপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার দু’পাশে রয়েছে হাঁড়িভাঙ্গা আম গাছ। এ দেখে যেন মনে হয় সবুজ বিপ্লব। ধানসহ বিভিন্ন ফসলি জমির আইলে আইলে লাগানো হয়েছে আমের গাছ। বসতবাড়ির পরিত্যক্ত জায়গা, পুকুরপাড়, বাড়ির উঠান বাদ পড়েনি। এসব আম গাছে এখন দোল খাচ্ছে অপরিপক্ব হাঁড়িভাঙ্গা।

গত কয়েক বছরের মতো এবারও হাঁড়িভাঙ্গার বাম্পার ফলন হয়েছে। যদিও হাঁড়িভাঙ্গার দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় চাষি এবং ব্যবসায়ীরা। প্রতি বছর কম বেশি শত কোটি টাকার ওপরে বিক্রি হয় হাঁড়িভাঙ্গা আম। কিন্তু আমের জন্য খ্যাত শ্যামপুরের পদাগঞ্জ হাটের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছেন চাষিরা। সঠিক সময়ে আম বাজারজাত ও পরিবহন সুবিধা বাড়ানো না গেলে রয়েছে লোকসানের আশঙ্কা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, জুনের শেষ সপ্তাহে বাজারে মিলবে পরিপক্ব হাঁড়িভাঙ্গা আম। এর আগে বাজারে হাঁড়িভাঙ্গা আম পাওয়া গেলেও তা অপরিপক্ব হবে। হাঁড়িভাঙ্গার প্রকৃত স্বাদ পেতে জুনের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে।

বর্তমানে বাগানগুলোতে আমের পরিচর্যা চলছে। নির্ধারিত সময়ে আম বাগান মালিক ও চাষিরা গাছ থেকে হাঁড়িভাঙ্গা আম পাড়তে পারবেন। এরপর থেকে শুরু হবে বাজারজাত। তবে চাষি ও ব্যবসায়ীদের দাবি- আবহাওয়া প্রতিকূলে বা প্রচণ্ডগরম থাকলে জুনের শুরুতেই বাণিজ্যিকভাবে বাজারে হাঁড়িভাঙ্গা আম বিক্রি শুরু হবে।

মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ ইউনিয়নের আমচাষি আমজাদ হোসেন বলেন, তার বাবা নফল উদ্দিন পাইকারের হাত ধরে পদাগঞ্জসহ এ অঞ্চলে হাঁড়িভাঙ্গা আম চাষের যাত্রা শুরু হয়েছে। এখন বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রসারণ হয়েছে। ১০/১২ বছর আগেও তিনি শুধু ধান, ভুট্টা আর পাটচাষ করতেন। কিন্তু এখন গ্রামে গ্রামে হাঁড়িভাঙ্গা আম গাছের বাগানের পর বাগান তৈরি হয়েছে। এবার আমের ভালোই ফলন হয়েছে। তার মতো সদরের পালিচড়া এলাকার শাহজাহান মিয়া, রুন্টু মিয়া ও নাগেরহাটের সালাম বিশ্বাস একই কথা বলেছেন।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, এখন ব্যাপকভাবে হাঁড়িভাঙ্গা আম চাষ হচ্ছে। খুব বেশি পরিশ্রম ও অর্থ বিনিয়োগ করতে না হওয়ায় মানুষ আমচাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। চাষি, ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকদের কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন জানান, জুনের শেষ সপ্তাহে হাঁড়িভাঙ্গা আম বাজারে আসবে। এই আম বাজারজাত করতে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সেটি মনিটরিং করা হবে। বিশেষ করে পরিবহনে ব্যবসায়ীদের কোনো হয়রানির শিকার হতে না হয়, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত