শতবর্ষী কারমাইকেল কলেজ

আবাসন সংকটে নাকাল শিক্ষার্থীরা

প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আব্দুর রহমান মিন্ট, রংপুর

উত্তর জনপদের অন্যতম প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রংপুর কারমাইকেল কলেজ। ১৯১৮ সাল থেকে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ ২০২২ সালের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাঙ্কিংয়ে ৩১টি মানদণ্ডে দেশের প্রথম সেরা সরকারি কলেজও নির্বাচিত হয়েছে।

দেশের অন্য কলেজের তুলনায় সার্বিক মানে এগিয়ে থাকলেও সংকট পিছু ছাড়ছে না কারমাইকেল কলেজের। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট, পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকা, ক্যানটিনে নিম্নমানের খাবারসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত ঐতিহ্যবাহী এ কলেজটি। অবিভক্ত বাংলার গভর্নর লর্ড ব্যারন কারমাইকেলের নাম অনুসারে কলেজটির নাম রাখা হয় ‘কারমাইকেল কলেজ’। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এ প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রি কোর্সের পাশাপাশি স্নাতকে ১৮টি এবং স্নাতকোত্তরে ১৬টি বিষয়ে পড়ানো হয়।

আবাসন সংকট : বর্তমানে কলেজটিতে ২১ হাজার ছাত্রছাত্রীর বিপরীতে আবাসনের সুবিধা পান মাত্র ১ হাজার শিক্ষার্থী। বাকিরা কলেজের আশপাশের মেসে থাকেন। ২১ হাজার শিক্ষার্থীর আবাসনের জন্য মাত্র সাতটি হল রয়েছে। বসবাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বন্ধ রাখা হয়েছে দুটি ছাত্রহল। আবার নির্মাণকাজ শেষ হলেও সিট বরাদ্দ দেয়া হয়নি আরও দুই হলে। ফলে আবাসন সংকটে নাজেহাল শিক্ষার্থীরা।

কলেজের সাতটি হলের মধ্যে গোপাল লাল ও কাশিম বাজার (কেবি) হল রয়েছে ছাত্রদের জন্য। এ দুই হলে মাত্র ১৯৬ জন শিক্ষার্থী থাকতে পারেন। আবাসন সংকট কাটাতে নতুন করে ছাত্রদের জন্য শেখ কামাল হল নির্মাণ করা হয়েছে। হলটিতে ১৩২ ছাত্র থাকতে পারবেন। উদ্বোধনও করা হয়েছে। কিন্তু এখনও ছাত্রদের সিট বরাদ্দ দেয়া হয়নি। এছাড়া বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় ওসমানী ও কারমাইকেল হলটি বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে সিট সংকট কাটছে না।

কলেজটিতে ছাত্রীদের জন্য চারটি হল থাকলেও তিনটিতে থাকতে পারেন তারা। নতুন করে ১৩২ আসনের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হল নির্মাণ করা হলেও শিক্ষার্থীরা এখনও বরাদ্দ পাননি। চালু থাকা তিন হলে ৬১০ জন ছাত্রী থাকতে পারেন। এর মধ্যে বেগম রোকেয়া ছাত্রীনিবাসে ১৫৬, তাপসী রাবেয়া ছাত্রীনিবাসে ৩৫৪ ও জাহানার ইমাম ছাত্রীনিবাসে ১০০ ছাত্রী থাকতে পারেন।

শিক্ষক সংকট : কলেজের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, কলেজে ২১ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ১৮৮ জন শিক্ষক রয়েছেন। অর্থাৎ গড়ে ১১১ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক কলেজটিতে পাঠদান করেন। বর্তমানে সৃষ্ট পদের চেয়ে ৫৩ জন শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে। তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগে ১১ জন শিক্ষকের জায়গায় আছেন মাত্র একজন শিক্ষক। মার্কেটিং বিভাগে ১২ জনের জায়গায় দু’জন, ফিন্যান্স বিভাগে ১২ জনের জায়গায় তিনজন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ১২ জনের জায়গায় দু’জন, দর্শনে ১২ জনের জায়গায় সাতজন ও ইসলামের ইতিহাসে ১২ জনের জায়গায় মাত্র আটজন শিক্ষক পাঠদান করছেন।

নিরাপত্তাহীনতায় শিক্ষার্থীরা : পুরো কলেজ ক্যাম্পাসে নির্দিষ্ট কোনো সীমানাপ্রাচীর নেই। ফলে নিয়মিত ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আনাগোনা থাকে। সন্ধ্যার পর কলেজ ক্যাম্পাসে বসে বহিরাগত মাদকসেবীদের আড্ডা। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন শিক্ষার্থীরা। কলেজের পশ্চিম পাশের ৮০০ মিটার সীমানাপ্রাচীরের কাজ শুরুর কথা থাকলেও হয়নি। অন্যদিকে বহিরাগতদের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

বেদখল জমি : প্রতিষ্ঠার শুরুতে কারমাইকেল কলেজে ৩০০ একর জমি থাকলেও এখন তা কমে ২০৩ একর হয়েছে। এর মধ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় অধিগ্রহণ করেছে ৭৫ একর ও রংপুর ক্যাডেট কলেজ নিয়েছে ২২ একর। তবে কলেজ ক্যাম্পাসের প্রায় দুই একর জায়গা দখল করে রেখেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করেও জায়গা দখল নিতে পারছে না কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও কৃষি কমিটির সদস্য তানজিউর রহমান বলেন, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জোরপূর্বক প্রায় ছয় বিঘার মতো জমি দখল করে দোকানপাট তুলেছেন। আমরা উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছি।

এছাড়া শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে নেই পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা। ক্যানটিনের খাবার অত্যন্ত নিম্নমানের। আসবাবপত্র ভাঙাচোরা। শিক্ষকরাও থাকেন পরিত্যক্ত ভবনে।

অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র মুসফিকুর বলেন, হলগুলোতে মানসম্মত খাবার পরিবেশন করা হয় না। ১ মাসে খাওয়া বাবদ প্রায় ২ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু ভাতের সঙ্গে শুধু সবজি পাওয়া যায়। মাঝেমধ্যে মাছ অথবা ব্রয়লার মুরগির এক টুকরো মাংস দেয়া হয়। আবার হলে কোনো পাঠকক্ষ নেই। ফলে চাইলেও একটু নিরিবিলি পড়ার পরিবেশ পাই না।

ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাহিদ হাসান দিপু বলেন, পরিত্যক্ত আবাসিক বাসভবনে ঝুঁকি নিয়ে বাস করছি। আবাসিক ভবন সংস্কারের কোনো উদ্যোগ কর্তৃপক্ষ নিচ্ছে না।

সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ প্রফেসর ড, আমজাদ হোসেন বলেন, আমরা শিক্ষক সংকট নিরসন, শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা সমাধান, অডিটোরিয়াম নির্মাণ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান হবে।