বরিশাল সিটি ভোট

তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের কদর বেড়েছে

প্রকাশ : ২২ মে ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

‘বরিশাল সিটি করপোরেশনে অনেকেই মেয়র ছিল, কিন্তু আমরা খাইয়া আছি নাকি না খাইয়া আছি কেউ খোঁজ নেয়নি। মেয়র হিরণের আমলে আমাদের কিছু কাজ হইছে, এরপর আরো মেয়র ছিল কিন্তু আমাগো কোনো কাজ হয়নি। তারা তৃতীয় লিঙ্গের কোনো খোঁজখবর নেয়নি। আবার নতুন মেয়র হইতাছে আমরাও আশাবাদী। হ্যারা আমাগো খোঁজখবর নেবে, এ আশা তো করি। এক প্রার্থীর বউ আমাগো কাছে আইস্যা খোঁজখবর নেয়ার কথা বইল্যাও গেছে। তিনি বলেছেন, আমাদের নিয়ে কাজ করবে। তাই আমরা এখন আবারো কিছুটা আশাবাদী।’ গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন বরিশাল নগরের রসুলপুর কলোনির বাসিন্দা ও তৃতীয় লিঙ্গের ছালমা।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত দ্বিতীয় পরিষদের সাবেক মেয়র ছিলেন প্রয়াত শওকত হোসেন হিরণ। তাকে স্মরণ করে তৃতীয় লিঙ্গের শান্তা বলেন, শুধুমাত্র হিরণ মেয়র থাইক্যা আমাগো লাইগ্যা কিছু কাজ করছে। আমাগো লাইগ্যা যে কাজ করবে, সুখে-দুঃখে আমাগো পাশে থাকবে তার পাশে আমরাও থাকমু। তার জন্য খালি আমাগো কয়েকটা ভোট না, মাঠে নেমেও দরকার হইলে প্রচারণা চালাব।

কিউট নামে তৃতীয় লিঙ্গের আরেকজন বলেন, বিভিন্ন জায়গায় সরকার তৃতীয় লিঙ্গের লাইগ্যা নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। কিন্তু আমরা এহানে আমাগো যোগ্যতায় ভালো থাকার চেষ্টা করছি। এহন এ নির্বাচনেও আশা বানতাম না, তয় খোঁজ যখন ভোটের আগে নেয়া শুরু হয়েছে তাই কিছুটা হলেও আশাবাদী পাশে থাকার লোক হয়তো এ নির্বাচনের পর পাব।

রসুলপুর কলোনিতে বসবাসকারী তৃতীয় লিঙ্গের বয়োজ্যেষ্ঠ কবির সিকদার কবরী। যাকে স্থানীয়ভাবে গুরুমা ডাকেন তৃতীয় লিঙ্গের অন্যরা। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের চাওয়া-পাওয়া তো অনেক বেশি না। আমরা অন্য মানুষগুলোর মতো স্বাভাবিকভাবেই থাকতে চাই। আর এ চাওয়াকে প্রধান্য দিয়ে যে আমাদের পাশে থাকবে তাদের পাশে থাকতে দোষ কী। তিনি বলেন, ভোটের আগে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শওকত হোসেন হিরণ আমাদের কাছে যেমন আসছিল, তেমনি মেয়র হওয়ার পরও আসত, খোঁজখবর নিত। কলোনিতে কিছু উন্নয়নমূলক কাজও সে করছে। সে বেঁচে থাকলে হয়তো আমরা আরো ভালো থাকতাম। কিন্তু তার মৃত্যুর পর আর কেউ আমাদের কাছে আসেনি। তয় এবার আওয়ামী লীগের যে প্রার্থী হইছে তার বউ ‘লুনা’ আইসা গেছে আমাগো কাছে। আমাগো কাছে দোয়া চাইছে প্রার্থীর লাইগ্যা, সেইসঙ্গে পাশে থাকার কথাও বলছেন। খুব ভালো লাগছে তিনি আমাগো সবাইরে একলগে লইয়্যা নাস্তাও খাইছেন। তিনি আরো বলেন, আমাগো এখানে কারো আসতে বাধা নেই। আমাগো আর কয়টা ভোট আছে

নগরে, ৫০ টারও কমই হবে। তবে আমার সাফ কথা আমাগো যে খোঁজ রাখবে, আমরাও তারই খোঁজ রাখব।

রসুলপুর কলোনির বাসিন্দা ও সংগ্রামী নারী শাহানাজ বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের বলে ওদের সবাই এড়িয়ে চলতে চায়। যদিও গত কয়েক বছরে এ মনোভাব কমেছে। তবে এতদিন পর কোনো প্রার্থীর বউকে প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের কাছে যেতে দেখলাম। হিরণ ভাইয়ের বউরেও ওদের খোঁজ নিতে দেখেছি। আর এরপর এলো খোকন ভাইয়ের বউ। তো লুনা আপারে পাইয়া ওরা খুব খুশি হইছিল, তারে তো ওরা নাস্তা করাইছে খুব সম্মানও দেখাইছে। লুনা আপাও ওগো ঘরের মেঝেতে বইসা কথা কইছে, নাস্তা খাইছে। ওরা এর থেকে বেশি কিছু তো চায় না।

এদিকে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারদের ওপর গুরুত্ব দেয়ার বিষয়ে নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাতের স্ত্রী লুনা আব্দুল্লাহ বলেন, শুধু ভোট নয়, আমি চাই সমাজের সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে। তাই ভোটের থেকেও বড় কথা হচ্ছে, মানুষের খোঁজ নেয়া। তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে তাদের কাছে আসা যাবে না, প্রার্থীর জন্য দোয়া চাওয়া যাবে না এমনটা কোথাও নেই। তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এরইমধ্যে তাদের ভোটের অধিকার দিয়েছেন, বাড়িঘর দিয়েছেন। এছাড়া তাদের কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও ভাতা দিচ্ছেন। আমিও তাদের কাছে এসেছি, তাদের কথা শুনেছি। তারা যাতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে, তাদের কর্মসংস্থান হয়, ভাতা পায় সে চেষ্টা থাকবে। বরিশালে আগে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের কোনো খোঁজ নেয়া হয়নি, এটা শুনে আমিও অবাক। আগামীতে তাদের জন্য আমরা ভালো কিছু করার চেষ্টা করব।