ঢাকা ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রংপুরে জাল সনদে বহাল তবিয়তে দুই শিক্ষক

রংপুরে জাল সনদে বহাল তবিয়তে দুই শিক্ষক

রংপুর সদর উপজেলার চন্দনপাট ইউনিয়নের উত্তর চন্দনপাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অন্য প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি ও দুইজন সহকারী শিক্ষক জাল সনদ দিয়ে চাকরি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, ১৯৯১ সাল থেকে উত্তর চন্দনপাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সেখানে গিয়ে আমরা জানতে পারি, প্রধান শিক্ষক সপ্তাহে তিন দিন স্কুলে ক্লাস নেন। বাকি দুই দিন স্কুলে আসেন না।

সরকারি প্রধান শিক্ষক হয়েও সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে আবু বক্কর সিদ্দিক তার নিজ এলাকায় নিজস্ব অর্থায়নে বেসরকারিভাবে সালেহিয়া হাফিজিয়া নূরানী মাদ্রাসা ও লিল্লাহ্ বোর্ডিং নামের প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৪ সাল থেকে পরিচালনা করে আসছেন। সেখানে তিনি গভর্নিং বডির সভাপতি। এর পাশাপাশি দীর্ঘদিন থেকে চন্দনপাট ইউনিয়নের কাজির দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

এদিকে, প্রধান শিক্ষকের প্রশ্রয়ে স্কুলের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আব্দুর রশিদ ও লুৎফর রহমান অবৈধভাবে ভুয়া সনদের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি বেতন-ভাতাসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছেন।

সহকারী শিক্ষক লুৎফর রহমান জানান, তিনি ১৯৯৪ সাল থেকে উত্তর চন্দনপাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি এসএসসি পাসের সার্টিফিকেট দিয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। স্কুলটি ২০১৩ সালে সরকারিভুক্ত হয়। তিনি শিক্ষক থেকে সহকারী শিক্ষক পদে উন্নিতর জন্য উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দেন। সেই পরীক্ষায় ফেল করেন। পাস করাতে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের হুমায়ুন কবির লেবুর কাছে টাকা দেন। তিনি তাকে পাস করিয়ে দেবেন বলে টাকা নিয়ে পরবর্তীতে এইচএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট দেন।

লুৎফর রহমানকে সহকারী শিক্ষক আব্দুর রশিদের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, আমরা একই সঙ্গে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দিই। একসঙ্গেই ফেল করি। আমরা দুজনই পাসের জন্য হুমায়ুন কবির লেবুকে পাস করার জন্য টাকা দিই। লেবু আমাদের এইচএসসি পাসের সার্টিফিকেট দেন। সহকারী শিক্ষক আব্দুর রশিদকে মুঠোফোনে এশাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে উত্তর চন্দনপাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক মুঠোফোনে বলেন, আমি এখন স্কুলে যেতে পারব না। আমি মাদ্রাসায় আছি আপনারা এখানে আসেন কী বক্তব্য লাগবে দিচ্ছি। পরে মাদ্রাসায় খবর নিয়ে জানা যায়, তিনি মাদ্রাসা তালা মেরে চলে গেছেন। বারবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি কেনো সাড়া দেননি।

এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এএম শাহজাহান সিদ্দিক বলেন, প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক ও সহকারী শিক্ষক আব্দুর রশিদ ও লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। কোনো শিক্ষক অন্য প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডির সদস্য বা সভাপতি হতে পারেন না। এরই মধ্যে জেনেছি, আবু বক্কর সিদ্দিক একটি মাদ্রাসার পরিচালনা বোর্ডের সভাপতি। এটি উনার অসৎ আচরণের পর্যায়ভুক্ত অপরাধ। তদন্ত করে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সহকারী শিক্ষক আব্দুর রশিদ ও লুৎফর রহমানদের সার্টিফিকেট সংক্রান্ত বিষয় যাচাই-বাছাই করে সত্যতা পাওয়া গেলে পদক্ষেপ নেব।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত