তীব্র গরমে অতিষ্ঠ রংপুরের জনজীবন

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আব্দুর রহমান মিন্টু, রংপুর

চলতি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলে আবহাওয়ার পারদ উঠানামা করছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। ফলে কয়েক দিনের টানা তাপদাহে অতিষ্ঠ রংপুরের জনজীবন। প্রখরতাপে ভাইরাসজনিত জ্বর, সর্দি, কাশি দেখা দিয়েছে বাড়িতে বাড়িতে। বিদ্যুতের নাজুক অবস্থার কারণে নাকাল হয়ে পড়েছে এই অঞ্চলে মানুষ। তীব্র তাপদাহের কারণে জীববৈচিত্র্যেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব।

গরমের এই তীব্রতায় প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না কেউই। তবে রিকশা চালকসহ খেটে খাওয়া মানুষরা জীবিকার তাগিদে বের হলেও ঘুরে ফিরছেন ছায়াতলে। আগামী এক সপ্তাহ এ গরম থেকে স্বস্তির কোনো আভাস নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গতকাল শুক্রবার দুপুরের দিকে রংপুর নগরীর স্টেশন, জাহাজ কোম্পনি মোড়, শাপলা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তীব্র গরমে পথঘাট অনেকটাই ফাঁকা। তবে, কেউ কেউ জীবিকার তাগিদে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন অসহ্য গরমে শরীর ভিজিয়ে।

শুক্রবার দুপুরে রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার রংপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বিভাগের দিনাজপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রংপুরের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকালে সূর্যেন আলো ফুটতেই গরম শুরু হয়। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গরমের তীব্রতাও বাড়তে থাকে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অসহ্য গরম থাকে। সন্ধ্যার পর গুমোট হয়ে ওঠে পরিবেশ, রাতেও ভ্যাপসা গরম থাকে। এছাড়া বিদ্যুতের সমস্যা তো রয়েছেই। অনেকে তাপদাহ থেকে বাঁচতে দিনে দুই থেকে তিনবার পর্যন্ত গোসল করছেন। নগরীর আনসারী মোড় এলাকার রিকশা চালক ভুপেন নাথ বলেন, ‘গরমে রিকশা চালিয়ে যাওয়ার সময় মনে হয় মাথার মগজ সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। আগের তুলনায় যাত্রী সংখ্যাও অনেক কম। তাই গাছের নিচে বসে শরীরটাকে আরাম দিচ্ছি।

স্টেশন এলাকার শ্রমিক নাদিম বলেন, ভাই আমরা পেশাদার লেবার। সহজে কাবু হই না। কিন্তু গত কয়েক দিনের গরমে কাবু হয়ে গেছি। এই আবহাওয়া আর দুই একদিন থাকলে আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যাবে।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা বেড়েছে। আগামী এক সপ্তাহ একই অবস্থায় থাকবে। এসময় অতি প্রয়োজন ছাড়া দিনের বেলায় বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রচণ্ড গরমের কারণে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীসহ জ্বর, সর্দি ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গত সাত দিনে অন্তত ৩০-৪০ জন রোগী হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গরমে অনেকেই হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। তাই এই সময় সাবধানে চলাফেরা উচিত। বেশি বেশি করে ডাবসহ তরল জাতীয় ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়াই ভালো। বিশেষ করে এই সময়ে শিশু-কিশোর ও বয়স্কদের আরও সতর্কভাবে চলাফেরা করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশি বেশি করে তরল জাতীয় শরবত, ডাবের পানি পান করা উচিত।