ঢাকা ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কমছে ফসলি জমি

খুলনার নদ-নদীতে বাড়ছে লবণাক্ততা

খুলনার নদ-নদীতে বাড়ছে লবণাক্ততা

বছরের পর বছর ধরে খুবই কম বৃষ্টিপাত, উজানের নদী থেকে পানিপ্রবাহ একেবারে কমে যাওয়া এবং বঙ্গোপসাগর থেকে অধিক পরিমাণে পানি ওপরে উঠে আসায় খুলনার নদ-নদীগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েছে লবণাক্ততা। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, উজান থেকে একটি নদী দিয়েই খুলনার নদ-নদীতে পানি প্রবাহিত হয়, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অন্যদিকে সাগর থেকে একাধিক নদ-নদীর মাধ্যমে অধিক পরিমাণে লবণাক্ত পানি ওপরে উঠে আসছে। উজানের সামান্য মিঠাপানি সাগরের লবণাক্ত পানিকে মিঠাপানিতে পরিণত করতে পারছে না। বৃষ্টিপাতের পরিমাণও ১০ বছর আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। যে কারণে প্রতি বছরই খুলনার নদ-নদীতে লবণাক্ততার পরিমাণ বাড়ছে। একই সঙ্গে নদ-নদীর তলদেশও ভরাট হচ্ছে। নদ-নদীতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ফসলি জমিতেও প্রবেশ করছে লবণাক্ত পানি। এতে পতিত জমির পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। খুলনা মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অমরেন্দ্র নাথ বলেন, উজানের পানি না আসায় এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়ায় ১০ বছরের মধ্যে খুলনার নদ-নদীগুলোতে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি লবণাক্ততা বেড়েছে, যা নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, সবশেষ গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে খুলনার রূপসা নদীতে লবণাক্ততার মাত্রা পাওয়া যায় ৩২ ডিএস/মি, সাগর থেকে উঠে আসা শিবসা নদীতে ৩৬ ডিএস/মি, কাজিবাছা নদীতে ৩৫ দশমিক ২ ডিএস/মি, কপোতাক্ষ নদে ২৬ দশমিক ৩ ডিএস/মি এবং পশুর নদে সর্বোচ্চ ৩৭ ডিএস/মি। যা ৫ বছর আগেও ২৫-২৬ ডিএস/মি এর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এ কর্মকর্তা আরো বলেন, খুলনায় উজানের পানি আসে একটি মাত্র নদীপথে। পদ্মা নদী থেকে গড়াই, মধুমতি ও ভৈরব নদ হয়ে রূপসা নদীতে পড়ে মিঠাপানি। রূপসা হয়ে কাজিবাছা ও পশুরের মাধ্যমে চলে যায় সাগরে। কিন্তু সেই উজানের পানির পরিমাণ এতই কমে গেছে যে, লবণ-পানিকে ঠেলে মিঠাপানি নিচে নামতে পারছে না। মিষ্টিপানির আধারগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে ফসলি জমিতেও লবণাক্ততা দিন দিন বাড়ছে।

লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে ফসলি জমির পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমছে বলে জানান কৃষি অধিদপ্তর খুলনার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মোছাদ্দেক হোসেন। তিনি বলেন, লবণাক্ততার কারণে আমাদের অনেক জমি পতিত থাকার পাশাপাশি এক ফসলিতেই থেকে যাচ্ছে। দুই ফসলিতে (বছরে দুইবার ফসল ফলানো) পরিণত করা সম্ভব হচ্ছে না। বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় মিঠাপানির আঁধারগুলো নষ্ট হচ্ছে। জমিতে মিঠাপানির সেচ দিতে পারলে জমিতে লবণাক্ততা কমে যায়। কিন্তু সেই উপায়ও নেই। খুলনার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী এলাকার কৃষক আলাউদ্দিন সানা বলেন, পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় আমাদের এলাকার সবচেয়ে প্রমত্তা কপোতাক্ষ নদ এখন মৃতপ্রায়। এ নদের পানি এখন এতটাই লবণাক্ত যে তা ব্যবহার করার উপায় নেই। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে এ নদীতে চিংড়ি মাছ ধরা ছাড়া আর কোনো কাজেই আসে না, সেচ দেয়া তো দূরের কথা। খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান সরদার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে নদী ও জমিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বাড়ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত