ঢাকা ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রংপুর অঞ্চলে মাছের ঘাটতি ৪৯ হাজার মেট্রিক টন

রংপুর অঞ্চলে মাছের ঘাটতি ৪৯ হাজার মেট্রিক টন

রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় গত ৫ বছরে মাছ উৎপাদন প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন বাড়লেও এখনো ঘাটতি রয়েছে ৪৯ হাজার মেট্রিক টন। পানি স্বাদু হওয়ায় রংপুর অঞ্চলের নদী-নদী, খাল-বিলে একসময় ২০০ প্রজাতির মাছের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল। কালের বিবর্তনে জলবায়ুর পরির্বতন ও পরিবেশগত কারণে প্রায় ৩০ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষ মাছের অপর্যাপ্ততায় আমিষ জাতীয় খাদ্যের অভাবে স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে। তবে মৎস্য বিভাগ বলছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় মাছের ঘাটতি পূরণে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রংপুর বিভাগের রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় জেলার ৫৮টি উপজেলায় গড়ে তোলা হয়েছে মাছের জন্য একাধিক অভয়াশ্রম। বিশেষ করে দেশি মাছ চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। আগামী দুয়েক বছরের মধ্যে এই অঞ্চলে মাছের ঘাটতি থাকবে না। রংপুর মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় দেড় কোটির উপর মানুষের বাস। শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্ক মিলে একজন মানুষের গড়ে প্রতিদিন মাছের চাহিদা ৬০ গ্রাম। সেই হিসেবে একজন মানুষের প্রতিবছর মাছের চাহিদা প্রায় ২২ কেজি। কিন্তু চাহিদা অনুয়ায়ী মাছ খেতে পারছে না এই অঞ্চলের মানুষ। ফলে সারা বছরই মাছের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। প্রতিবছর এ অঞ্চলের মাছের চাহিদা ৩ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। এর বিপরিতে এবছর উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৯১ হাজার ৮ মেট্রিক টন। সেই হিসেবে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে ৪৯ হাজার মেট্রিক টন। তিস্তার উজানে বাঁধ নির্মিত হওয়ায় এ অঞ্চলে পানিশূন্যতা বিরাজ করছে। দিনাজপুর অঞ্চলের কাঁকর ও বালুযুক্ত মাটির পানির ধারণ ক্ষমতা কম। সর্বত্রই প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হওযায় মাছের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তবে এই অঞ্চলে পানি স্বাদু হওয়ায় খুব দ্রুত মাছের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন মৎস্য বিভাগ। সূত্র মতে রংপুর বিভাগে অর্ধশত নদী, খাল প্রায় ৪ লাখ হেক্টর, ৮৩৭টি বিলে ৪০ হাজার ২৮৮ হেক্টর, ২ লাখ ৪৮ হাজার ৭০২টি পুকুরে ১২ হাজার ২৬৯ হেক্টর জমিতে মাছ চাষ হয়। এছাড়া বর্ষাকালে প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ হয়। মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের সৃষ্টি পরিবেশগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিতে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ায় জলাশয়গুলোতে পড়েছে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব। দারি, টিলা, কালা বাটা, ঘোড়া, পুটি, বোয়াল, চিতল, গজার, রিটা, বট শিং, ঘাউড়া, সালবাইম, কাচকি, ফলি, শিল বাইলা ইত্যাদি দেশি প্রজাতির মাছ হারিয়ে যেতে বসলেও কিছু কিছু দেশি মাছের উৎপাদন আগের চেয়ে বেড়েছে। রংপুর জেলা মৎস্য অফিসার মো. বদরুজ্জামান মানিক বলেন, চলতি বছর রংপুর জেলায় ৬২০৬৯ মেট্রিক টন মাছের উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু চাহিদা রয়েছে ৬৩০৯৬ মেট্রিক টন। তাই ঘাটতি ১০২৭ মেট্রিক টন রয়েছে। রংপুর মৎস্য অধিদপ্তররের অতিরিক্ত পরিচালক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, এ অঞ্চলে মাছের ঘাটতি পূরণে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে দেশি পাবদা, টেংরা, শিং, মাগুর ইত্যাদি মাছের উৎপাদন বাড়াতে সরকারিভাবে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মৎস্য অভয়াশ্রম সংরক্ষণ ও মেরামত, সম্প্রসারণ কার্যক্রম চলছে। এছাড়া মৎস্যকে যান্ত্রিকিকরণের প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হলেন এ অঞ্চলে মাছের ঘাটতি থাকবে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত