ঢাকা ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রংপুরের টুকরো খবর : তিস্তার পাড়ে

বিনোদন কেন্দ্র ‘আলী বাবা থিম পার্ক

বিনোদন কেন্দ্র ‘আলী বাবা থিম পার্ক

আরব্য উপন্যাসের সহস্র রজনীর ‘আলী বাবা ও চল্লিশ চোর’ গল্পের একটি জাদু শব্দ। এবার সেই গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে বিনোদন কেন্দ্র ‘আলী বাবা থিম পার্ক’। যেখানে গেলেই মনে পড়ে যাবে আরব্য উপন্যাসের আলী বাবা ও চল্লিশ চোরের সেই রূপকথা। ঈদুল আজহা ঘিরে দর্শনার্থীদের পদতচারণায় মুখরিত ‘আলী বাবা থিম পার্ক’। তিস্তা নদীরপাড়ে গড়ে তোলা এই বিনোদন কেন্দ্র এখন ছোট-বড় সব বয়সি মানুষের বিনোদনের খোরাক। আবহমান বাংলার অতীত ঐতিহ্য এবং গ্রামীণ সংস্কৃতির সঙ্গে ‘আলীবাবা ও চল্লিশ চোর’ গল্পের আদলে সাজানো এখানকার স্থাপনা। দৃষ্টিনন্দন এই বিনোদন কেন্দ্রকে ঘিরে প্রকৃতি প্রেমীদের ভিড় বেড়েছে নদীর তীরে। রংপুর শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়ন। এর খুব কাছাকাছি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ সুন্দরগঞ্জ পৌরসভা। সেখান থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে মীরগঞ্জ-চেতন্য-ইমামগঞ্জ বাজার হয়ে সোজা উত্তর দিকে গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম জেলার সম্মিলন স্থানে দাঁড়িয়ে আছে এক নৈসর্গিক প্রাকৃতিক পরিবেশে ‘আলী বাবা থিম পার্ক’। তিস্তা নদী তীরবর্তী আলী বাবা থিম পার্কটি এখন শুধু বিনোদন কেন্দ্রই নয়, এটি সেখানকার চরবাসীকে স্বাবলম্বী করে তোলার স্বপ্ন দুয়ার। এই বিনোদন কেন্দ্রের কোলঘেঁষে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র। বেসরকারি এই সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ঘিরেও প্রকৃতি প্রেমীদের ভিড় বেড়েছে নদীর তীরে। স্থানীয়রা বলেন, বছর দশেক আগেও মানুষ যা ভাবেনি, তাই গড়ে উঠেছে তিস্তাপাড়ে। রাক্ষুসী তিস্তা নদী কখনো শান্ত, আবার কখনো সেখানে পানির হু হু শব্দ আর শব্দ। শুকিয়ে গেলে দেখা যায় শুধুই ধুধু বালুচর। যেখানে গাছগাছালি, পশুপাখি আর মানুষের কোনো অস্তিত্ব কখনো কল্পনাই করা যেত না। এখন ঠিক সেখানেই আলীবাবা থিম পার্ক ও সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অবস্থান।

তিস্তা নদীর তীরে ধুধু বালুচরে ৩০ একর জমির ওপর চমৎকার এক নৈসর্গিক প্রাকৃতিক পরিবেশে নির্মিত হয়েছে আলী বাবা থিম পার্কটি। এর পাশেই চরের ৭০০ একর জমির ওপর বেক্সিমকোর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান তিস্তা সোলার লিমিটেডের সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। আরব্য উপন্যাসের সেই জাদু শব্দ ‘চিচিং ফাঁক’ বলে দরজা খুলে মণিমাণিক্য না মিললেও এই পার্কের দেয়াল থেকে সহজেই চোখের পলক ফেলানো সম্ভব নয়। কারণ, দেয়ালে দেখাবে চোখে পড়বে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, জেরুজালেমের পবিত্র মসজিদ আল-আকসা, পবিত্র কাবা-শরিফ, জর্ডানের মরুভূমির সেই সাহাবি ও খেঁজুর গাছসহ খোদাই করা বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শনের চিত্র। দর্শনার্থীদের বসার জন্য রয়েছে সিমেন্ট দিয়ে গাছের আদলে তৈরি করা বসার চেয়ার, রয়েছে বেঞ্চ। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগিয়ে পরিপাটি করে সাজানো হয়েছে নয়নাভিরাম রাস্তা। সমুদ্রের বড় মাছের খাদ্যসংস্থান কীভাবে হয় ও আগ্নেগিরির গলিত লাভা এবং বড় বড় সাপ কীভাবে মানুষকে দংশন করতে পারে, তাও দেখা যাবে। হাটতে হাটতে পার্কের উত্তরে গেলে নজরে পড়বে নির্মাণাধীন পাহাড়, পানির উপর দিয়ে ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা, পানির ঢেউ। রয়েছে পিকনিক স্পট ও রিসোর্ট সেন্টার। পীরগাছা উপজেলার কান্দি বাজার থেকে ঘুরতে আসা আমিনুল ইসলাম জুয়েল নামের এক দর্শনার্থী জানান, তিস্তা, ঘাঘট ও বুড়াইল নদ-নদী বেষ্টিত পীরগাছাতে তেমন কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই। তবে দর্শনীয় স্থান হিসেবে তিনটি জমিদার বাড়ি, দেবী চৌধুরানীর পুকুর, বিরবিরিয়ার বিল, তিন গম্বুজবিশিষ্ট প্রাচীন মসজিদ এবং সৈয়দপুর ও পাওটানাতে নদীতীরে বোল্ডারপার রয়েছে। এসব স্পটের সাথে এখন নতুন করে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং আলী বাবা থিম পার্ক যোগ হয়েছে। শিল্পীর রংতুলিতে আঁকা ছবির মতোই যেন এখানকার আকাশ। রঙিন মেঘ আর নদীর রূপ অসাধারণ। নদীর কোলঘেঁষে বাঁধের মতো সড়ক ধরে হাটতে হাটতে হারিয়ে যেতে মন চাইবে। কিন্তু এখানে হারিয়ে যাওয়া মানা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত