নারায়ণগঞ্জে এক বছরের ব্যবধানে বিক্রি ১১ লঞ্চ

প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শরীফ সুমন, নারায়ণগঞ্জ

যাত্রীদের চলাচলের স্বার্থ বিবেচনা করে গেল বছরে নারায়ণগঞ্জ থেকে ৫টি রুটে ৪৯টি সানকেন (নিচু) ডেকের লঞ্চকে চলাচলের অনুমতি দেয়া হলেও এরই মধ্যে কমতে শুরু করেছে সানকেন (নিচু) ডেকের লঞ্চের সংখ্যা। যাত্রী সংকটের কারণে লোকসানের অজুহাতে একের পরে এক লঞ্চ বিক্রি করে ফেলছেন মালিকরা। গত এক বছরের ব্যবধানে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থেকে চলাচলরত ১১টি সানকেন (নিচু) ডেকের লঞ্চ বিক্রি করে দিয়েছেন মালিকপক্ষ। লঞ্চ মালিকদের বক্তব্য যাত্রী সংকটে একদিকে লোকসানের ঘানি টানতে হচ্ছে অপরদিকে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর তাদের লঞ্চগুলোকে মডিফাই করার প্ল্যান অনুমোদন দিচ্ছে না। যে কারণে অনেকেই তাদের লঞ্চগুলোকে স্ক্র্যাব আকারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যায় ‘এমভি-এসকেএল-৩’ নামে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় এমভি সাবিত আল হাসান নামের লঞ্চডুবিতে নারী ও শিশুসহ ৩৪ জন নিহত হয়। চলতি বছরের ২০ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজ রূপসী-৯-এর ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এম.এল আফসার উদ্দিন ডুবে ১০ জন মারা যান। এ ঘটনার পরপরই নারায়ণগঞ্জ থেকে চলাচলকারী সব সানকেন ডেকের লঞ্চকে ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রায় ৩৪ দিন বন্ধ থাকার পর ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে যাত্রী সাধারণের চলাচলের স্বার্থে প্রাথমিকভাবে ১৮টি লঞ্চ চালু করা হয়। পর্যায়ক্রমে ৪৯টি লঞ্চের অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। এসব লঞ্চ চলাচলের জন্য কিছু শর্তাবলিজুড়ে দিয়েছিল বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। যার মধ্যে ছিল সানকেন (নিচু) ডেক বিশিষ্ট নৌযানের স্থলে হাইডেক (উঁচু) বিশিষ্ট নৌযান প্রতিস্থাপন করতে হবে। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারকৃত লঞ্চগুলো নির্দিষ্ট লেইনে চলাচল এবং সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারকৃত প্রত্যেকটি লঞ্চে চলাচলের আগে বাধ্যতামূলতভাবে ভিএইচএফ সংযোজন, সার্ভে সনদে উল্লেখিত মাস্টার ও ড্রাইভার দ্বারা লঞ্চ পরিচালনা করা এবং সার্ভে সনদে উল্লেখিত সংখ্যক জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামাদি লঞ্চের বা নৌযানের যথাস্থানে রাখা নিশ্চিত করতে হবে। নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল বলেন, বর্তমানে যাত্রী সংকটের কারণে লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। লঞ্চ ঘাটে প্রবেশ ফি ১০ টাকার পাশাপাশি মালামালের জন্য বাড়তি টাকা দিতে হয়। সড়কপথে এ বাড়তি টাকা খরচ করতে হয় না। ইজারাদাররা যাত্রীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা আদায় করছেন।

যে কারণে যে যাত্রী একবার এখান দিয়ে যায়, সে পরে আর এই পথে যাতায়াত করে না। তাই এই লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ইজারা পদ্ধতি বাতিল করা প্রয়োজন। লোকসানের ঘানি টানতে টানতে গত এক বছরে কমপক্ষে ১৫টি লঞ্চ স্ক্র্যাব আকারে বিক্রি করে দিয়েছেন মালিকরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী বছরে হয়তো এই লঞ্চ টার্মিনাল থেকে লঞ্চ চলাচলই বন্ধ হয়ে যাবে।