রংপুর স্বাস্থ্য বিভাগের ২২টি গাড়ি ৩০ বছর ধরে পড়ে আছে

প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রংপুর ব্যুরো

রংপুর সদর হাসপাতাল সংলগ্ন সিভিল সার্জন ওয়ার্কশপ মাঠে খোলা আকাশের নিচে নষ্ট হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগের অ্যাম্বুলেন্সসহ ২২টি গাড়ি। বছরের পর বছর ধরে একই জায়গায় অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকায় চুরি হয়ে গেছে এসব গাড়ির যন্ত্রাংশ। দীর্ঘদিনেও নিলামে বিক্রি করতে না পারায় সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদেশি সংস্থা আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এই গাড়িগুলো নষ্ট হওয়ার পর মেরামত না করে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে তা যত্রতত্র ফেলে রাখা হয়েছে। এসব যানবাহনের কোনোটি ১৫ থেকে ২০ বছর আবার কোনোটি ৩০ থেকে ৩৫ বছর ধরে পড়ে আছে। সরেজমিন দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় বেশিরভাগ গাড়ির ইঞ্জিনসহ যন্ত্রপাতিও নেই গাড়িতে। সুযোগ বুঝে চোরেরা চুরি করে নিয়ে গেছে। এখন শুধু গাড়ির বডিগুলোই পড়ে আছে। ২২টি গাড়ির মধ্যে বেশ কয়েকটি গাড়ি এখনো সংস্কার করার মতো রয়েছে। আর বাকিগুলো নিলামে বিক্রি হলেও কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হতো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আমরা অফিসের লোকজনের কাছ থেকে শুনেছিলাম এসব গাড়ি বিদেশি সংস্থা ইউনিসেফ দিয়েছিল। কিন্তু রংপুরে আনার পর সেভাবে ব্যবহার করা হয়নি। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা হয়। পরিচয় প্রকাশে অনীহা জানিয়ে তিনি বলেন, তার চাকরি হয়েছে ১৯৯১ সালে, পরের বছর তিনি রংপুরে যোগদান করেন। ওই সময় থেকে এসব গাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখে আসছেন। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার এসব গাড়ি নিলামে বিক্রির জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়, বিআরটিএসহ বিভিন্ন অফিস থেকে লোকজন এসে এসব গাড়ি দেখে গেছে। কিন্তু পরবর্তীতে কোনো অগ্রগতি চোখে পড়েনি। আরেক কর্মচারী বলেন, আমি ২০০৭ সাল থেকে এখানে চাকরি করছি। যোগদান করার শুরুতে যেমন দেখেছি, এখনো খোলা আকাশের নিচেই গাড়িগুলো পড়ে রয়েছে। মাঝেমধ্যে মনে হয় এসব বেওয়ারিশ। অনেক কিছুই খোয়া গেছে। অকেজো গাড়িগুলো নিলামে বিক্রি আর বাকিগুলো সংস্কার করে জনগণের সেবার আওতায় আনা সম্ভব বলে মনে করেন সচেতন মহল। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ৩০ বছর কিন্তু কম সময় নয়, এই দীর্ঘ সময়েও এসব গাড়ি কেন নিলামে বিক্রি করা সম্ভব হয়নি সেটা খতিয়ে দেখা উচিত।

রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, গাড়িগুলোর তালিকা আমাদের স্টোর কিপারের কাছে রয়েছে।

এগুলো বিআরটিএ কর্তৃক ব্যবহার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা আমাদের স্টোর বিষয়ক কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে নিলামযোগ্য গাড়িগুলো সরকারি নিয়মে বিক্রি করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা জমা করব। দীর্ঘদিনেও নিলাম প্রক্রিয়া আলোর মুখ না দেখায় গাড়িগুলোর যন্ত্রাংশ খোয়া গেছে, এতে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি যন্ত্রাংশ যাতে চুরি না হয়, সেই ব্যবস্থা আমরা নেব। আমার এসব গাড়ির ব্যাপারে আবারও বিআরটিএ’র কাছে মতামত চাইব। যেসব গাড়ি সচল করা সম্ভব, প্রয়োজনে সেগুলো আমরা রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহার উপযোগী করার চেষ্টা করতে পারি।