ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে ছাদ পর্যবেক্ষণ করে মশার আবাসস্থল খুঁজে পাওয়া সহজ হওয়ায় ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনরা। গত মঙ্গলবার আন্দরকিল্লা পুরাতন নগর ভবনের কে.বি. আবদুচ ছত্তার মিলনায়তনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) পরিচ্ছন্ন বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তারা এ পরামর্শ দেন। এতে, চসিকের কাউন্সিলর বিভিন্ন বিভাগ ও শাখা প্রধানসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ড্রোন ব্যবহারের কারণে প্রতিটি বাড়িতে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠতে হচ্ছে না। অল্প সময়েই অনেকগুলো বাড়ির ছাদে মশা জন্মানোর মতো পানি আছে কি না তা খুঁজে বের করা যাচ্ছে? এ সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ভবিষ্যতে মশার আবাসস্থল নির্ধারণে এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে। পাশাপাশি মশা নিধনে ওষুধ ক্রয় ও প্রয়োগেও বিশেষজ্ঞ মতামত ও প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, জরিমানার মতো শাস্তিমূলক পদক্ষেপের চেয়ে জনসচেতনতায় আমি জোর দিচ্ছি। ড্রোন দিয়ে ছাদে পানি দেখলে বাড়ির মালিকদের সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে। তবে, যাদের ছাদে খুব বেশি দিন পানি জমে আছে কেবল তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রাম চলমান আছে। করোনা যেভাবে মোকাবিলা করেছি, সন্ধ্যার মধ্যে যেভাবে কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কার করেছি, সেভাবে সবাইকে নিয়ে ডেঙ্গুও প্রতিরোধ করব।
সভায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে মশার জীবনপদ্ধতি বদলে যাচ্ছে, তাই মশা নিধনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তিনি বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করার আহ্বান জানান। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তার বলেন, জ্বর দেখা দিলে ব্যথানাশক ওষুধ খেলে ডেঙ্গু আরও মারাত্মক রূপ ধারণ করে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া যাবে না।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী চট্টগ্রামের সবগুলো স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করার পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে ডেঙ্গুর জন্য বিশেষায়িত সেবা চালুর আহ্বান জানান। চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, চসিকের পক্ষে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা সেবা দেওয়া হচ্ছে। আমরা একদিনে ৬০ জনের পরীক্ষা করে মাত্র ৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত পেয়েছি।
সুতরাং আতঙ্কিত না হয়ে লক্ষণ দেখা দিলেই টেস্ট করুন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করলে ডেঙ্গু ভালো হয়। ডেঙ্গু ও মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে চসিকের গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে মেয়রের একান্ত সচিব ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম জানান, চট্টগ্রামে মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করতে ম্যালেরিয়া ও মশক নিধন কর্মকর্তা নিয়োগ করে পৃথক শাখা গঠন করা হয়েছে এবং লোকবল নিয়োগ করা হয়েছে।
মশক নিধন কাজে নিয়োজিত ২২০ জন স্প্রে-ম্যান থেকে ৪০০ জনে উন্নীত করা হয়েছে। ৩০০টি স্প্রে মেশিন ও ১২০টি ফগার মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে ১০ হাজার লিটার এডাল্টিসাইড ও ৩ হাজার লিটার লার্ভিসাইড মজুত রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা টিমের সুপারিশের আলোকে মসকুবান নামীয় ভেষজ ওষুধ ব্যবহার শুরু করা হয়েছে। ৫ হাজার লিটার ন্যাপথা মজুত রয়েছে। এডাল্টিসাইড হিসেবে ইনভেন্ট লিকুইড ইনসেক্টিসাইড, লার্ভিসাইড হিসেবে টেমিফস ৫০ ইসি ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ এলডিও এবং এইচএসডি (কালো তেল) কেনা হচ্ছে।