পরিচ্ছন্ন রাজশাহীতেও চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু

প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাজশাহী ব্যুরো

পরিচ্ছন্ন নগরী রাজশাহীতে প্রতিনিয়তই বাড়ছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। চলতি মাসের শুরুতেই আলাদা ডেঙ্গু রোগীদের সেবায় আলাদা ওয়ার্ড চালু করেছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবুও ক্রমেই ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে জেলার ডেঙ্গু পরিস্থিতি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হিসেবে খ্যাত নগরীর ৩৮ শতাংশ বাড়িতেই মিলেছে এডিস মশার লার্ভা। সম্প্রতি নগরীর ১৫টি এলাকার ৭৫টি বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষায় ২৮টি বাড়িতেই লার্ভার উপস্থিতি পায় স্বাস্থ্য বিভাগ। কোনো এলাকার ব্রুটো ইনডেক্স (এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের একক) ২০ শতাংশের উপরে হলেই সেই এলাকাকে ‘ ডেঙ্গু ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

তবে রাজশাহী নগরীতে ব্রুটো ইনডেক্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬ দশমিক ৬৭ শতাংশে। অর্থাৎ রাজশাহী অধিকতর ডেঙ্গু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাই রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগকে পৃথক চিঠি দিয়েছেন রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ও রামেক হাসপাতাল পরিচালক। তাই জরুরিভাবে ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা আসা উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রামেক হাসপাতালের তথ্যমতে, গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি হয়েছেন ৬৪ জন। এদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন চারজন রোগী। সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ৪৬ জন রোগী। হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ১৭ জন রোগী। এদের মধ্যে হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন আছেন একজন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের সবার শরীরেই ডেঙ্গু ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত একজনের (৪০) মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার (৮ জুলাই) সকাল পৌনে ১০টার দিকে হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি মুন্সীগঞ্জের একটি প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি সার্ভিসের কর্মী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে জ্বর নিয়ে ঈদের পরদিন বাড়ি আসেন। পরে গত ২ জুলাই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ৪ জুলাই তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। জানতে চাইলে রামেকের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ইনচার্জ ডা. তানজিলুল বারি বলেন, হাসপাতালে ক্রমশই রোগী বাড়তেছে। সারা দিনে সাতজন রোগী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে ১৭ জন রোগী ভর্তি আছেন, সংখ্যাটা আরো বাড়তে পারে। প্রথম দিকে ঢাকা থেকে আগত সব রোগীই পাচ্ছিলাম। এখন দুই-তিনজন করে রাজশাহীর লোকাল রোগীও পাওয়া যাচ্ছে, যারা রিসেন্ট ঢাকায় যাননি।

এই মুহূর্তে এমন দুইজন রোগী আছেন যারা স্থানীয়ভাবেই আক্রান্ত হয়েছেন। ধীরে ধীরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপের দিকেই অগ্রসর হচ্ছে বলে মনে করেন এই চিকিৎসক। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ বলেন, রামেক পরিচালক বলেন, সিটি করপোরেশনের মেয়র, সিভিল সার্জন, ডিসিসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠির মাধ্যমে ডেঙ্গুর সর্বশেষ পরিস্থিতি জানানো হয়েছে। আমাদের এখানে এখন পর্যন্ত ৬৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। প্রতিরোধের ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রতিরোধের উদ্যোগ তো আমাদের নেওয়ার নেই। প্রতিরোধের পুরো কাজটাই সিটি কর্পোরেশনের। জনগণকে সচেতন করা, লার্ভা নির্মূল করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান করা সব সিটি কর্পোরেশনের কাজ। হাসপাতালের কাজ হচ্ছে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া, পুরো পরিস্থিতি সংশ্লিষ্টদের জানানো। তারপরও সবাইকে সচেতন করার জন্য স্বপ্রণোদিতভাবে সমন্বিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ক্যাম্পেইন করেছি।