তিন মাসে ৭৮ লাখ টাকার ম্যানহোলের ঢাকনা গায়েব

প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ময়মনসিংহ ব্যুরো

ময়মনসিংহ নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে সড়ক ও ফুটপাতের নিচ দিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেন ও ঢাকনাসহ ম্যানহোল স্থাপন করা হয়। অন্তত ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে ৩৪৫ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই ম্যানহোলের ঢাকনাসহ বক্স সিস্টেমের ড্রেন। কিন্তু ম্যানহোলের ঢাকনাগুলো স্থাপনের কয়েক মাস না যেতেই ভাটিকাশর, বলাশপুর, কেওয়াটখালী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নতুনবাজার এলাকা, ব্রহ্মপল্লীসহ বিভিন্ন এলাকায় ম্যানহোলের ঢাকনা গায়েব হয়ে গেছে। সড়কগুলোতে ম্যানহোলের ঢাকনা গায়েব হয়ে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে নারী-শিশু, বৃদ্ধসহ সব বয়সি মানুষকে। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনাও। স্থানীয়রা বলেন, দিনে ঢাকনাগুলো স্থাপন করার পর রাতেই গায়েব হয়ে যায়। ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন (মসিক) থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, গত তিন মাসে অন্তত ৩০০ ঢাকনা চুরি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নগরীর কেওয়াটখালী এলাকায় অন্তত ২০০ ঢাকনা চুরি হয়েছে। এছাড়া ভাটিকাশর ও বলাশপুর এলাকা থেকে ১৫০টির বেশি ঢাকনা চুরি হয়েছে। আর অন্যান্য এলাকাগুলো মিলে আরো প্রায় ১৫০টি ঢাকনা হাওয়া হয়ে গেছে। মসিক সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে মাঝে মধ্যে দুয়েকটি ঢাকনা চুরি হলেও গত তিন মাস ধরে চুরির প্রবণতা বেড়ে গেছে। সরেজমিন ভাটিকাশর ও বলাশপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চকচকে কনক্রিটের সড়ক, টাইলস করা ফুটপাত, মাটির গভীর দিয়ে নালা ব্যবস্থা। মাঝেমধ্যে ম্যানহোল। তবে বেশিরভাগ ম্যানহোলেই নেই ঢাকনা। ঢাকনাহীন এসব ম্যানহোলে গাছের অংশ, ইট কিংবা বাঁশ দিয়ে সতর্ক অবস্থা সৃষ্টি করা হলেও অধিকাংশই পড়ে আছে খালি অবস্থায়। বৃষ্টিতে কোথাও কোথাও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে ঢাকা পড়েছে পানির নিচে। এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে সাধারণ মানুষ। ভাটিকাশর এলাকার বাসিন্দা রুমা আক্তার বলেন, পুরো সড়কজুড়ে ম্যানহোল ঢাকনাবিহীন। স্কুলপড়ুয়া তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে আমার খুব দুশ্চিন্তা হয়। কয়েক দিন আগেই কয়েকজন ছেলে খেলতে গিয়ে গর্তে পড়ে গেছে। একই এলাকার সেজান রহমান সৈকত নামে এক যুবক বলেন, সিটি কর্পোরেশন দিনে ঢাকনা লাগিয়ে গেলে রাতেই চুরি হয়ে যায়। তাই ওই অবস্থায়ই এখন ফাঁকা পড়ে আছে। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে সবাইকে। মাদকসেবীরা এগুলো চুরি করে ভাঙারি হিসেবে বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে মাদক গ্রহণ করে। কর্তৃপক্ষের উচিত সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা। সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, সড়কে স্থাপন করা ঢাকনাগুলোতে খরচ ২১ হাজার টাকা এবং ফুটপাতে স্থাপন করা ঢাকনাগুলো ১২ হাজার টাকা। সড়কে স্থাপিত প্রায় ২০০ ঢাকনা ও ফুটপাতে স্থাপিত প্রায় ৩০০ ঢাকনা মিলে অন্তত ৭৮ লাখ টাকার ঢাকনা চুরি হয়েছে গত তিন মাসে। হঠাৎ, ঢাকনা চুরি বেড়ে যাওয়ায় অনেকের সন্দেহের তীর ঢাকনা স্থাপনের কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দিকে। সেই সন্দেহ আরো দানা বাঁধবে সিটি কর্পোরেশনের ঠিক পেছনে হরিকিশোর রায় সড়কটিতে গেলে। শাশীলজ জাদুঘরের পেছনে দেয়ালঘেঁষা ফুটপাতে বেশ কয়েকটি ঢাকনা নেই ম্যানহোলের। তাতে কনক্রিটের স্লাব দিয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে দুটি ঢাকনা স্থাপনা করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের। লোহার ঢাকনায় এমনটিই লেখা রয়েছে। এই ঢাকনাগুলো ২০২৩ সালেই নির্মিত।