নুহাশপল্লীতে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় হুমায়ূন স্মরণ

প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  গাজীপুর প্রতিনিধি

যদি মন কাঁদে তবে চলে এস..., মরিলে কান্দিস না আমার দায়... এরকম কালজয়ী বহু গান কিংবা কোথাও কেউ নেই নাটকের বাকের ভাই চরিত্রসহ নাটক, উপন্যাস, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে যিনি সমৃদ্ধ করেছেন, পাঠকদের বইমুখী করেছিলেন সেই জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের একাদশ মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে নানা আয়োজনে। নন্দন কানন নুহাশপল্লীতে তার পরিবারের স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীরা লেখককে স্মরণ করলেন ফুল দিয়ে, জানালেন আন্তরিক শ্রদ্ধা। আর অমর এ কথাসাহিত্যিকের কবর জেয়ারত শেষে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে অনুমতি ছাড়া হুমায়ূন আহমেদের নাটক সিনেমা প্রদর্শন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। সরেজমিন দেখা গেছে, স্বপ্নের নুহাশপল্লী মূল ফটক পেরিয়েই সবুজ ঘাসে আবৃত বিরাট মাঠ, পাশেই পাকা বসতঘর বা বাংলো যেখানে হুমায়ূন আহমেদ বাস করতেন। তার পাশেই হুমায়ুন আহমেদের ম্যুরাল ও অর্গানিক ফর্মে ডিজাইন করা ডিম্বাকৃতির একটি সুইমিংপুল। এরপর একটু সামনে এগোলেই হাতের ডান পাশে রয়েছে বিভিন্ন গাছের বড় উদ্যান। রঙে রাঙ্গা সিঁড়ি, পানির সরোবরে পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে রূপবতী মৎস্যকন্যা। এর পাশে বিরাট রাক্ষসের মূর্তি। এছাড়া, কনক্রিট দিয়ে তৈরি ডাইনোসরের মতো প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের অনুকীর্তি, দাবার গুটির প্রতিকৃতি, হরেকরকম কবুতর ও ঘর, মাটির তৈরি ঘর। হুমায়ূন আহমেদ নিজে বৃষ্টি পছন্দ করতেন। প্রায় প্রতি বছর তার মৃত্যু ার্ষিকীতে বৃষ্টি ঝরলেও গত মঙ্গলবার দিনটি ছিল রৌদ্রস্নাত। শ্রাবণ আকাশে মেঘ নেই, নেই বৃষ্টির জলধারা। কিন্তু তবু বিরহের কান্না যেন অগণিত পাঠকের হৃদয়ে। নুহাশ পল্লীর মাঠ, ঘাট যেন গভীর শূন্যতায়। ২০১২ সালের বৃষ্টিস্নাত এমন দিনে এখানেই লিচুতলায় শায়িত হন নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদ। প্রতিবারের মতো এবারও হুমায়ুন পরিবার, তার ভক্ত, কবি, লেখক আর নাট্যজনরা ফুল হাতে শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করেন নুহাশপল্লীর লিচুতলায়। ময়মনসিংহ এলাকা থেকে এসেছেন কমলরঞ্জন। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ে বড় হয়েছি। সিনেমা দেখার ক্ষেত্রে আমাদের বিধিনিষেধ ছিল। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র চললে অভিভাবকরা সেটি দেখার অনুমতি দিতেন। কোথাও কেউ নাটকের বাকের ভাই চরিত্রের যেদিন ফাঁসি হয় সেদিন অঝোরে কেঁদেছি। তার লেখা গান, ছবির মাধ্যমে তিনি আমাদের মধ্যে চিরন্তন’। লেখক এবং সংবাদিক ইজাজ আহমেদ মিলন বলেন, হুমায়ূন আহমেদ ৫০ বছর ধরে বাঙালি পাঠক সমাজকে আনন্দ দিয়েছেন এবং বাংলা ভাষা যতদিন থাকবে ততদিন হুমায়ূন আহমেদ পঠিত হবে। তিনি লেখার মাধ্যমে পাঠককে একটি অন্য জগতে নিয়ে যেতেন। বিষয়টি যারা হুমায়ূন আহমেদের লেখা পড়েছেন তারাই কেবল বলতে পারবেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার অনেকগুলো কাজ আছে। বাংলা সাহিত্যে তিনিই বাঙালিকে বইমুখী করতে পেরেছিলেন’। গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে কবর জিয়ারত করতে আসেন হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। কবর জিয়ারত শেষে তিনি গণমাধ্যমকে হুমায়ূনের স্বপ্ন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন। দুই ছোট সন্তান অকালে পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছে এই ব্যাপারটি ভীষণ কষ্টতাড়িত করে বলে স্মৃতি কাতর হয়ে যান তিনি। এ সময় ওটিটি প্ল্যাটফর্মে হুমায়ূন পরিবারের অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন নাটক ও সিনেমা প্রদর্শন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন শাওন।

হিমুদের কার্যক্রম : প্রতি বছরের মতো এবারও একদল হিমু-রুপা নুহাশ পল্লী আসেন। তারা সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করার পর মাঠে হুমায়ূন আহমেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ গ্রহণ করেন তারা।

কোরআন খতম ও এতিমদের খাওয়ানো : লেখকের মৃত্যুবার্ষিকীতে নুহাশ পল্লীতে কোরআন খতম, দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। দুপুরে দুই শতাধিক এতিমকে খাওয়ানো হয়।