গাজীপুর সাফারি পার্ক

বাইরে হিংস্র প্রাণী, জানালা খোলা রেখে চলছে পর্যটকবাহী বাস

প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  গাজীপুর প্রতিনিধি

গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ৮টি পর্যটক বাস রয়েছে। প্রায় ১০ বছর আগের কেনা এসব বাসে থাকা এসি মাঝেমধ্যেই বিকল হয়ে পড়ে। তাই প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ পর্যটকদের অনেক সময় বাঘ-সিংহ-ভালুক বেষ্টনীতেও বাসের জানালা খুলে দিতে দেখা যায়। এতে যেকোনো সময় বড় রকমের অঘটনও ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের কোর সাফারির বাঘ-সিংহ-ভালুক বেষ্টনীতে প্রবেশ করতে রওনা হয় পর্যটকবাহী একটি বাস। বেষ্টনীতে প্রবেশ করার আগেই চালক আল আমিন বাসে থাকা দর্শনার্থীদের বাইরে হাত বা মাথা বের না করার জন্য সতর্ক করে দেন। কিন্তু বাসটিতে এসি বিকল থাকায় পর্যটকদের সঙ্গে থাকা শিশুরা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে কান্নাকাটি শুরু করলে অনেক অভিভাবককে বাসের জানালা খুলে দিতে দেখা গেছে। বাসটি হিংস্র ওই সব প্রাণীর বেষ্টনীতে ঢুকলেও বাসের জানালা বন্ধ করেননি তারা। কিছু পর্যটক ওই জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরে হাত বের করে ছবি তুলতে থাকেন। চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ৮টি বাসের মধ্যে ৬টিতেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বিকল রয়েছে। তাই নিষেধ করার পরও অনেক সময়ই বাসের জানালার কাচ খুলে দেন দর্শনার্থীরা। এতে চালক ও পর্যটকরাও আতঙ্ক ও ভোগান্তিতে থাকেন। ফলে টেনশন নিয়েই আনন্দ উপভোগ করতে হচ্ছে পর্যটকদের।

সাফারি পার্ক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার দুপুরে পর্যটক নিয়ে ভ্রমণ তথা পরিদর্শনকালে বাঘ বেষ্টনীর গর্তে পড়ে পর্যটক বাসটি বিকল হয়ে যায়। এসময় পর্যটকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং চিৎকার শুরু করেন। পরে চালক ও পার্ক কর্তৃপক্ষ অনেক রিস্ক নিয়ে প্রায় ৩০ মিনিট পর পর্যটকদের উদ্ধার করে। সাফারি পার্ক প্রাতিষ্ঠার সময়ে ৮টি এসি বাস ও ২টি জিপ গাড়ি নিয়ে পার্কের পর্যটক ও কর্মকর্তাদের পরিবহন সেক্টর যাত্রা শুরু করে। কয়েক বছর ধরেই বাসগুলোর অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েছে। এসিও নষ্ট হয়ে গেছে। এসি ও বাসগুলো মেরামত না করেই এখন চালাতে হচ্ছে। বাসগুলো সচল করা গেলেও ছয়টি বাসের এসি মেরামত করা সম্ভব হয়নি। ময়মনসিংহ থেকে পার্কে আসা গৃহবধূ শারমিন আক্তার বলেন, ছোট শিশুসহ ১০ জন পার্কে এসেছি। কোর সাফারি পার্কে বিদেশি প্রাণী দেখতে বাসে উঠে দেখি তাতে এসি সচল নেই। পরে জানতে পারি এসি বিকল। কিছুদূর চলার পরে গরমে যাত্রীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। একসময় আমার সঙ্গে থাকা শিশুসন্তানও গরমে অতিষ্ঠ হয়ে কান্না শুরু করে। এমতাবস্থায়, বাসের জানালা খুলে দিয়ে তার কান্না থামাই। টাকা দিয়ে টিকেট কেটেও উৎকণ্ঠা আর ভোগান্তির মধ্য দিয়ে আমাদের আনন্দ ভোগ করতে হয়েছে। একই কথা জানালেন নরসিংদীর মাধবদী এলাকা থেকে পার্কে আসা আব্দুর রাজ্জাক নামের এক পর্যটক। শরিফুল ইসলাম নামের এক দর্শনার্থী ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, কিছুদিন আগে ঢাকা চিড়িয়াখানায় এক হায়ে না শিশুর হাত কামড়ে ধরে ছিড়ে নেয়। আর সাফারি পার্কে মানুষগুলোকে বাস বন্দি করে বাঘ-সিংহের কাছে পাঠানো হচ্ছে কোনো নিরাপত্তা ছাড়াই। যদি কোনো দর্শনার্থী আক্রমণের শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে দায়ভার কে নেবে? এ ব্যাপারে পার্কের দেখভালের দায়িত্বে থাকা ঢাকা বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ কর্মকর্তা শারমীন আক্তার জানান, বিষয়গুলো পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম আমাকে অবগত করেছেন। তবে সরকারি কোনো বরাদ্দ না পাওয়ায় নতুন বাস ক্রয় করা সম্ভব নয়। তাই এসব মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাস্তাও সংস্কার করে দেওয়া হবে।