জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী বলেছেন, শিক্ষকদের দায়িত্ব পালনে এবং আচার-আচরণে কঠোর নিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলা থাকতে হবে। এসব গুণাবলী ক্রমশ হ্রাস পাওয়ায় সমাজে শিক্ষকদের মান-মর্যাদা কমে যাচ্ছে। শিক্ষকতা শুধু চাকরি নয়, এটি মহৎ পেশা। শিক্ষকতা পেশাকে বাণিজ্যিক দৃষ্টিতে দেখা অত্যন্ত গর্হিত। গত শুক্রবার চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার হজরত এয়াছিন শাহ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ‘মাস্টার রুহুল আমিন চৌধুরী স্মারক বক্তৃতা: শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী বলেন, একজন শিক্ষক শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নন, তিনি একজন শিক্ষার্থীর জন্য সারা জীবনের পথপ্রদর্শক। বইয়ের বোঝা নিয়ে মুখস্ত করিয়ে জ্ঞান দানের প্রবণতা পরিহার করতে হবে। ক্লাস নেওয়ার আগে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত পড়াশোনার প্রস্তুতি নিতে হবে এবং পড়াশোনাকে আনন্দময় করে তুলতে হবে। প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবুজ মাঠ, উন্মুক্ত প্রান্তর এবং খেলাধুলার সুযোগ-সুবিধা অবশ্যই রাখতে হবে। শিক্ষার্থীরা বই থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মোবাইলে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে, স্মার্ট ফোনের বাটন টিপে শিক্ষার্থীরা জীবনের মূল্যবান সময় বিনষ্ট করছে। শিক্ষকদের পাশাপাশি পিতামাতাকেও এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। শিক্ষার্থীদের এমনভাবে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, তারা যেন খুব ভোরে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়, নিয়মিত নামাজ পড়ে এবং সত্যনিষ্ঠ জীবন অনুশীলন করে। শিক্ষকদের সময়মতো ক্লাসে হাজির না হওয়া অনেক বড় অপরাধ। এ প্রসঙ্গে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক মুনীর চৌধুরী তার পিতামহ চট্টগ্রামের কৃতী সন্তান ও ভূগোল বিদ্যার খ্যাতনামা শিক্ষক মাস্টার রুহুল আমিন চৌধুরীর জীবনাদর্শন তুলে ধরে বলেন, তিনি একাধারে ৩৬ বছর শিক্ষকতার পাশাপাশি জুরি বোর্ডের সদস্য হিসেবে বিচারকের দায়িত্ব পালন এবং ইউনিয়ন বোর্ডের সদস্য হিসেবে জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন। মাস্টার রুহুল আমিন শুধু শিক্ষক ছিলেন না, তিনি ছিলেন সমাজসেবক, সমাজ সংস্কারক এবং সমাজ সংগঠক। মাটির ঘরে অতি সাদাসিধে জীবনযাপন করে তিনি এখনো স্মরণীয় হয়ে আছেন। তার আদর্শ অনুসরণ করার জন্য তিনি শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান। মুনীর চৌধুরী বলেন, মানুষের জীবনের প্রতিটি কার্যকলাপ মহান আল্লাহ্ তায়ালার রাডারে সর্বক্ষণ রেকর্ড হচ্ছে এবং মৃত্যুর পর প্রত্যেককে তার কর্মফল ভোগ করতে হবে। পদ, পদবি অর্থবিত্ত এবং আভিজাত্য সব হারিয়ে মানুষ একদিন কবরের অন্ধকার জগতের বাসিন্দা হয়ে যাবে। সেখানে তাকে তার ভালোমন্দ প্রতিটি কাজের শাস্তি বা পুরস্কার ভোগ করতে হবে, এটি হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করলে মানুষ কোনো অপরাধ করতে পারে না।