বরিশালে মশার উৎপত্তিস্থলে চলছে ডেঙ্গু চিকিৎসা!
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বরিশাল ব্যুরো
দেশের দক্ষিণাঞ্চলবাসীর চিকিৎসার ভরসাস্থল বরিশাল শে-র-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের প্রধান গেটেই জন্মাচ্ছে মশা! হাসপাতাল কম্পাউন্ডে ডাবের খোসা, চায়ের কাপ, জমে থাকা পানি-কাদায় প্রতিদিন জন্ম হচ্ছে মশার। হাসপাতালের চারপাশে অপরিচ্ছন্ন ড্রেন, ঝোপঝাড়, ময়লা আবর্জনা আর জমে থাকা পানি মশার উৎপত্তিস্থলে রূপ নিয়েছে। তাই মশার রাজত্বের মধ্যেই মেঝেতে শুইয়ে চলছে ডেঙ্গু ও সাধারণ রোগীদের একসঙ্গে চিকিৎসা। ফলে হাসপাতালের ভেতরে বাইরে দুই স্থানেই অনিরাপদ অবস্থায় রয়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। তাই অনতিবিলম্বে এসব সমস্যা দূরিকরণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালের প্রধান গেট অতিক্রম করে একটু এগিয়ে বাম পাশে জমে থাকা পানিতে মশা জন্মে বসে আছে। ডান পাশে গেট নির্মাণকাজ চলছে, তার পাশেও জলাবদ্ধতায় মশার দেখা মিলেছে। হাসপাতালের ড্রেনগুলোর পানি নিস্কাষণ না হওয়ার কারণে এসব ড্রেন মশার অভয়াশ্রমের রূপ নিয়েছে। এমন অপরিচ্ছন্ন-অনিরাপদ সড়ক দিয়ে হাসপাতালের মেডিসিন ভবনে ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা নিতে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। এর পরই শুরু হয় হাসপাতালের ওয়ার্ডের অভ্যন্তরে ভোগান্তি। শেবাচিমের মেডিসিন ভবনের দ্বিতীয় তলার ২০২ নম্বর রুমের ডেঙ্গু কর্নারে ময়লা মেঝেতে হাঁটছে তেলাপোকা, ভনভন করে উড়ছে মশা। দুর্গন্ধের মধ্যে শুয়ে ৬ দিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন বরগুনার বেতাগী উপজেলার বাসিন্দা মেরি বেগম (৫৫)। গরমের কারনে মশারি না টানিয়ে দিব্যি শুয়ে শুয়ে আছেন মেরি। তার পাশের সিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন বরিশাল সদর উপজেলার বাসিন্দা শ্বাসকষ্টের রোগী ফাতেমা বেগম (৫০)। তিনি এই ডেঙ্গু কর্নারে চার দিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই রুমের পাশে অবস্থাও একই। সেখানে ডেঙ্গু রোগী মুলাদীর তাসলিমা বেগম (২৪) চার দিন ধরে মশারিহীন অবস্থায় টাইফয়েড রোগী সুমাইয়ার সঙ্গে একই রুমে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এমনিভাবে পাঁচ তলাবিশিষ্ট মেডিসিন ভবনের প্রত্যেক ফ্লোরেই নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ সাধারণ রোগীদের সঙ্গে চলছে ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা। ফলে কেউ না বললে চেনার উপায়ই থাকছে না কে ডেঙ্গু রোগী আর কে সাধারণ রোগী। এছাড়া নোংরা টয়লেট, অসহ্য গরমে অতিষ্ঠ হয়ে আছেন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তরা। মেডিসিন ভবনের তৃতীয় তলায় চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগী বরগুনার মহিবুল্লাহ জানান, হাসপাতাল কম্পাউন্ডের মধ্যেই ময়লা আবর্জনা আর পানি জমে আছে। এতেই জন্ম নিচ্ছে মশা। এসব মশা সারাদিন উড়ে বেড়ায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মশারি দিয়ে গেলেও তা টানানোর কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি হাসপাতালের কর্মীদের জানালে তারা বলেছেন, ‘মশারি রাখার নিয়ম রেখে দেন’। তাছাড়া হাসপাতালের পরিবেশ মোটেও ভালো না। মাটিতে শুয়ে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। দুটি টয়লেটের একটিও ব্যবহারযোগ্য না। দ্বিতীয় তলার ডেঙ্গু কর্নারে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজন রেশমা আক্তার জানান, ডেঙ্গু কর্নারের মধ্যে ময়লা-আবর্জনা, তেলাপোকাসহ অন্যান্য পোকা দৌঁড়ে বেড়াচ্ছে। মশা ভনভন করে উড়লেও দেখার কেউ নেই। হাসপাতাল কর্মীদের বললে তারা কোন রকম ঝাড়ু দিয়ে চলে যায়, তাতে ময়লা পরিষ্কার হয় না। এখন মাকে সুস্থ করতে এসে নিজে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার শংকায় রয়েছি। হাসপাতালের তৃতীয় তলার চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগী মাওলানা সোহাইল বলেন, ময়লা পরিষ্কার করতে বললে হাসপাতালের কর্মীরা তা কর্ণপাত করেন না। সাংবাদিক এই রুমে প্রবেশ করার পর ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে। অপরিষ্কার টয়লেটে যেতে হলেও আধাঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এমন অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে চিকিৎসা নেওয়া অসম্ভব। শেবাচিম হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, মশার বিস্তার ঠেকাতে নিয়মিত কর্মসূচি চলছে। মশার ওষুধ ছিটিয়েছি। নিয়মিত হাসপাতাল কম্পাউন্ড পরিষ্কার করা হলেও তা অল্প সময়ে নোংরা হয়ে যায়। ডেঙ্গু রোগীদের এক সঙ্গে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টি জানা নেই, খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক এইচএম সাইফুল ইসলাম জানান, পানি সরিয়ে দিলেও তা ময়লার কারণে নিস্কাষণ হয় না। সংকির্ণ ড্রেনে অল্পতেই পানি জমে যায়। জনবল সংকটের মধ্যেই হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে প্রধান গেটের নির্মাণ কাজ করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। এ কারণেও পানি জমে থাকছে। নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করতে গণপূর্ত বিভাগকে বলেছি, তারা আমাদের কথা কর্ণপাত করছেন না। গণপূর্ত বিভাগের সহায়তা না পেলে এই কাজ করা কষ্টকর। বরিশাল গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (মেডিকেল কলেজ গণপূর্ত উপবিভাগ) কামাল হোসেন হাং জানান, গত অর্থ বছর হওয়া টেন্ডারে ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়ে প্রধান গেটের অবকাঠামো দাঁড় করানো হয়েছে। টাকা শেষ হয়ে গেলেও বাকি টাকার বরাদ্দ পাওয়া যায়নি, দ্রুত বিষয়টির সুরহা হবে। এছাড়া রোগীদের কষ্ট লাঘবে নির্মাণাধীন গেটের পাশে জমে থাকা পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর বাইরে ড্রেনসহ ময়লা-আবর্জনা পরিচ্ছন্নের দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।