ছোট-বড় টিলাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে সিলেট নগরী; কিন্তু গত তিন-চার দশকে বহু টিলা কেটে সমতল করে ফেলা হয়েছে। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে, জীব-বৈচিত্র্য ধ্বংস করে এসব জায়গায় আবাসিক এলাকা, আধুনিক ভবন গড়ে তোলা হয়েছে বলে পরিবেশবাদীদের অভিযোগ। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) বলছে, ১৯৫৬ সালে ভূমির মাঠ জরিপের তথ্যে সিলেটের ছয় উপজেলায় ১ হাজার ২৫টি টিলার অস্তিত্ব ছিল। এর বাইরে আরো তিনটি উপজেলায় বেশ কিছু টিলা ছিল। এর মধ্যে অন্তত ১০০ টিলা পুরোপুরি কিংবা আংশিক সাবাড় হয়ে গেছে। সেই ১ হাজার ২৫টি টিলার মধ্যে নগর ও উপকণ্ঠ মিলিয়ে সিলেট সদর উপজেলায় টিলা ছিল ১৯৯টি। এর বাইরে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ৪১৩টি, বিয়ানীবাজারে ২৭০টি, জৈন্তাপুরে ৯৮টি, গোয়াইনঘাটে ৪৪টি ও কোম্পানীগঞ্জে একটি টিলা ছিল সে সময়। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় ২৫১ দশমিক ৮ একর টিলাশ্রেণির ভূমি এবং দক্ষিণ সুরমা ও কানাইঘাট উপজেলায়ও কিছু টিলার কথা এসেছিল জরিপে। তবে কী পরিমাণ টিলা সিলেটে ছিল, আর তার কতটা এখনো টিকে আছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পরিবেশ অধিদপ্তর দিতে পারেনি। পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, কী পরিমাণ টিলা রয়েছে সেই হিসাব ভূমি অফিসে আছে। টিলা কাটা বন্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অভিযান পরিচালনা করা হয়। টিলা কাটা বন্ধে সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তর জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছে। পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীদের ভাষ্য, সবচেয়ে বেশি টিলা উজাড় হয়েছে নগরী ও উপকণ্ঠে। আইনের ফাঁক গলেই টিলা কাটা হচ্ছে। সিলেটের জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমান বলেন, ২০০০ সালে জরিপে সিলেট অঞ্চলের ব্যক্তি মালিকানাধীন অনেক টিলার শ্রেণি পরিবর্তন হয়েছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি কেউ চাইলে বেচাকেনা করতে পারেন। অনেকে টিলাকে ‘টিলা বাড়ি’ হিসেবে রের্কড করেছেন। এভাবে শ্রেণি পরিবর্তন করেই এসব টিলা কাটা হয়েছে বলে বেলার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ শাহেদা আক্তারের ভাষ্য। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জনসংখ্যা এখন ৫ লাখ ৩২ হাজারের বেশি, যা ২০১১ সালে ৪ লাখ ৭৯ হাজারের মতো ছিল। জনসংখ্যা যত বেড়েছে, তত বেশি আবাসনের প্রয়োজন হযেছে এই শহরে। সিলেট নগরীতে যত টিলা উজার হয়েছে তার অধিকাংশ স্থানেই আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে টিলা কেটে সরকারি স্থাপনাও হয়েছে। গত দুই দশকে নগরীর আখালিয়া, ব্রাহ্মণশাসন, করেরপাড়া, গ্রিনসিটি, দুসকি, জাহাঙ্গীর নগর, বালুচর, বড়গুল এলাকায় টিলা কেটে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। সবশেষ নগরীর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের হাওলদারপাড়ার ‘মজুমদার টিলা’ কেটে গড়ে তোলা হয়েছে ‘শান্তিনিকেতন’ আবাসিক এলাকা। পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘এর কারণ মূলত পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্লিপ্ততা। পরিবেশ অধিদপ্তরসহ স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতাই সিলেট বিভাগের পাহাড় টিলা ধ্বংসের অন্যতম কারণ।