গাজীপুরে বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের আশায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জড়ো হয়েছেন স্টাইলক্রাফট লিমিটেডের শ্রমিকরা। একই দাবিতে গত বুধবার সকালে সড়ক অবরোধ করেন তারা। পরে শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম শ্রমিকদের পাওনা আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। তার আশ্বাসে ২ ঘণ্টা পর শ্রমিকরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন। জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে গত বুধবার শ্রমিকরা অবরোধ প্রত্যাহার করে বাড়ি ফিরে গেলেও গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কয়েক হাজার শ্রমিক মিছিল নিয়ে গাজীপুরের রাজবাড়ীতে অবস্থিত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে জমায়েত হয়। এ সময় তারা তাদের পাওনা বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের টাকা পরিশোধেরে দাবি জানান। পরে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি এনডিসি মোস্তফা আব্দুল্লাহ নুর, সহকারী কমিশনার ও সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট শোয়েব ইভান শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা শ্রমিকদের জানান, শ্রমিকদের সমস্যাটি সমাধান করার জন্য গতকাল বিকালে জেলা ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিটির জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে। সেখানে আপনাদের (শ্রমিক) প্রতিনিধি ও মালিকপক্ষ উপস্থিত থাকবে। আমরা আশা করি সভায় আপনাদের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে। শ্রমিকদের অভিযোগ, মালিকপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা ও দায়িত্বহীনতার কারণে স্টাইলক্রাফট নামের তৈরি পোশাক কারখানাটিত কয়েক মাস পরপরই বেতন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। কারখানাটিতে প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। মালিকপক্ষের কাছে জুন, জুলাই মাসের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস পাওনা রয়েছে। বকেয়া বেতন-ভাতা নিয়ে তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ জুলাই কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে মালিক পক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের সমঝোতা চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ১ আগস্ট তাদের বেতন পরিশোধ করার কথা। মালিকপক্ষ এক তারিখে বেতন পরিশোধ না করে কারখানা থেকে চলে যায়। পাওনা বকেয়া না পেয়ে ১ আগস্ট শ্রমিকরা অসন্তুষ্ট হয়েও বাড়ি ফিরে যায়। কিন্তু গত বুধবার সকালে ৮টার দিকে কারখানায় কাজে যোগদান করতে এসে শ্রমিকরা কারখানার গেটে কারখানা বন্ধের নোটিশ দেখতে পায়। বকেয়া পরিশোধ না করে কোনো কিছু না জানিয়ে এভাবে হঠাৎ রাতে কারখানা বন্ধের নোটিশ দেওয়ায় সকালে শ্রমিকরা আন্দোলনে নামেন। উত্তেজিত শ্রমিকরা ঢাকা-জয়দেবপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এ কারণে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তি পড়েছেন যাত্রী ও পথচারীরা। পরে ঘটনাস্থলে যায় মহানগর ও শিল্প পুলিশ। কারখানায় কর্মরত কামরুন্নাহার, রোকেয়াসহ কয়েকজন শ্রমিক অভিযোগ করেন, চলতি মাসসহ তিন মাসের বেতন বকেয়া থাকায় বাড়ি ভাড়া, দোকানের বাকি টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাই অবিলম্বে বেতন ভাতা পরিশোধে সরকার ও প্রশাসনের সহযোগিতা চাইছেন শ্রমিকরা। শিল্প পুলিশের পরিদর্শক রেজাউল করিম জানান, বেতন ভাতা পরিশোধের জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে শ্রমিকদের সঙ্গে কারখানার মালিকের সমঝোতা চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ১ আগস্ট জুন মাসের বেতন ও আগামী ৮ আগস্ট শ্রমিকদের ঈদ বোনাস দেয়ার কথা। কিন্তু মালিক পক্ষ বেতনাদি পরিশোধ না করেই কারখানা ছয় দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন। গত বুধবার সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগদান করতে এসে বন্ধের নোটিশ দেখতে পেয়ে উত্তেজিত হয়ে আন্দোলনে নামেন। জিএমপির সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল ইসলাম জানান, সকালে শ্রমিক আন্দোলনের জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের আলোচনা গতকাল বৃহস্পতিবার আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা আন্দোলন প্রত্যাহার করলে সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।