৩২ বছর ধরে শাবির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন ‘জসিম ভাই’
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সিলেট ব্যুরো
১৯৯১ সালে সিলেটে ঘুরতে এসে হলের ডাইনিংয়ে টেবিল বয়ের কাজের মাধ্যমে শুরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পথচলা। টেবিলবয় থেকে সহকারী বাবুর্চি এরপর প্রধান বাবুর্চি। পরে টং দোকান দিয়ে শুরু করেন খাবার বিক্রি। বলছি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) একটি খাবারের দোকানের মালিক জসিম উদ্দিনের কথা। শিক্ষার্থীদের কাছে যিনি ‘জসিম ভাই’ নামেই পরিচিত। সিলেটে আসার পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কেটে গেছে প্রায় ৩২ বছর। এই ৩২ বছরে তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে অনেক চড়াই-উতরাই। একদিকে ছোট ব্যবসা অন্যদিকে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা আর সংসার। সবকিছু সামলেই পাড়ি দিয়েছেন এ দীর্ঘসময়। লক্ষ্মীপুরের কমলনগর থানার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন। চার ছেলেমেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে সিলেটে ঘুরতে আসি। তখন আমার ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ডাইনিংয়ে বাবুর্চি হিসেবে কাজ করতেন। ভাইয়ের কথামতো বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শাহপরাণ হলের বি ব্লকের ডাইনিংয়ে কাজ শুরু করি। ওই সময় হলটিতে ডাইনিং ছিল মোট চারটি। এরপর টেবিলবয় হিসেবে দাপ্তরিকভাবে কাগজে-কলমে ১৯৯২ সালের ১৩ মার্চ হলটিতে কাজ শুরু করি। টেবিলবয় থেকে হলের ডাইনিংয়ে সহকারী বাবুর্চি এরপর প্রধান বাবুর্চি। এভাবে কেটে যায় প্রায় ১৫ বছর। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ব্যবস্থাপনায় ২০১১ সালে শাহপরাণ হলের সামনেই বসান টং দোকান। সেই থেকে শুরু হলো ‘জসিম ভাইয়ের টং’ দোকান। দিনরাত শিক্ষার্থীদের আড্ডা আর খাবার। সেই টং দোকানেই কেটে যায় প্রায় ১০ বছর। এই ছোট্ট দোকানের আয় দিয়ে ভালোই চলছিল তার সংসার। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তনের সময় তুলে দেওয়া হয় হলের সামনে থাকা তার টং দোকানটি। এর মধ্যে করোনা মহামারির সময় বন্ধ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। তখন স্থায়ীভাবে অন্যান্য টং দোকানের সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় তার দোকানটিও। একে করোনা মহামারি তার উপর উপার্জনের সব উপায় বন্ধ। তখন খরচ জোগাতে দ্বারস্থ হতে হয় নানানজনের কাছে। কখনো জুটেছে আবার কখনো ধার করে চালিয়েছেন সংসার। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও পেয়েছেন সাহায্য। ওই সময়টাতে বড় মেয়ের বিয়ের অর্থ জোগাতে করতে হয়েছে মোটা অঙ্কের ঋণ। যার রেশ টানছেন এখনো। এরপর শিক্ষক আর শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় একসময় সেখানে টং স্থাপনের অনুমতি পেলেও তা স্থায়ী হয়নি বেশি দিন। তুলে দেওয়া হয় দোকানটি। দোকান ফিরে পেতে আবার শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। এরপর আরো কিছুদিন এভাবে কাটার পর ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক সৈয়দ মুজতবা আলী হলের সামনে একটি খাবার দোকানের অনুমতি পান তিনি।