সিলেটের শ্রেষ্ঠ হাসপাতাল যখন নিজেই রোগাক্রান্ত
প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সিলেট ব্যুরো
সিলেট বিভাগের চার জেলার মধ্যে মাতৃস্বাস্থ্য সেবায় চলতি বছর শ্রেষ্ঠ হয়েছে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল। এই হাসপাতালে চিকিৎসকসহ নানাবিধ সংকটে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার প্রায় ২২ লাখ মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে সার্জারি, অ্যানেস্থেসিয়া, চক্ষু, গাইনি, শিশু, অর্থোপেডিক্স, কার্ডিওলজিসহ ১৬টি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ৪৪টি পদ শূন্য রয়েছে। এটিই জেলার সব মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল। অথচ চিকিৎসক ও টেকনোলজিস্ট সংকট, রোগ নির্ণয়ের মেশিনগুলো নষ্ট হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি ও রক্তের ৪/৫টি পরীক্ষা ছাড়া অন্য পরীক্ষা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগী, এতে উদ্বিগ্ন তাদের স্বজনরা। জানা গেছে, মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ৫৩টি চিকিৎসক পদের ১৬টি রয়েছে শূন্য। এছাড়াও নার্সিং কর্মকর্তার ৪টি, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ১৬টি এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর আটটি পদ আছে শূন্য। সব মিলিয়ে ৪৪টি পদ রয়েছে শূন্য। হাসপাতালটিতে ৫৩ জনের জায়গায় চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৩৭ জন। হাসপাতালে রোগীদের পাশাপাশি বহির্বিভাগের রোগীদেরও চাপ সামলাতে হয় তাদের। ফলে প্রত্যাশিত চিকিৎসা পায় না রোগীরা। তবে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালের বেশিরভাগ চিকিৎসক স্থানীয় ক্লিনিকের সঙ্গে জড়িত থাকায় হাসপাতালের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। তাই বাধ্য হয়ে বাড়তি টাকা খরচ করে স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হচ্ছে। এছাড়া, দালালদের দৌরাত্ম্য আর অপরিচ্ছন্নতার জন্য পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর বলেও অভিযোগ রয়েছে রোগীদের। সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিটি ওয়ার্ড ও কেবিন অপরিচ্ছন্ন। যত্রতত্র ময়লা ও হাসপাতালে ব্যবহৃত পুরোনো জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বহির্বিভাগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে করাতে হচ্ছে চিকিৎসা, আবার অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন। জানা যায়, হাসপাতালে এক্সরে মেশিন নষ্ট, প্যাথলজি রিএজেন্টের অভাব এবং রোগ নির্ণয়ের অন্যান্য মেশিনগুলো দীর্ঘদিন চালু না থাকায় বাকি সব যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ফলে এই অবস্থায় সাধারণ রোগীদের অধিক টাকায় অন্যত্র এমনকি সিলেট কিংবা ঢাকায় পরীক্ষাসহ চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে হয়। এছাড়াও রোগীদের ওঠানামার একমাত্র লিফট নষ্ট হয়ে টানা এক সপ্তাহ বন্ধ ছিলো, মেরামত হলেও প্রায়ই লিফট বন্ধ থাকে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। সদর উপজেলার জগৎসী এলাকার মজিদ খাঁ জানান, গত কয়েকদিন আগে আমার বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে আসি। লিফট নষ্ট থাকায় আমি ও আমার বোনজামাই অসুস্থ বাবাকে কোলে করে দোতলায় উঠানো নামানো করি। ওয়ার্ড ও কেবিনে চিকিৎসায় নার্স ও স্টাফদের বিরুদ্ধে রয়েছে আগত রোগী ও রোগীর স্বজনদের অভিযোগ। এই অবস্থায় রোগীরা হাসপাতালে এসে যথাযথ চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ক্ষুব্ধ। রাজানগর উপজেলার টেংরা গ্রামে আব্দুল মোতালিব বলেন, এই হাসপাতালের কয়েকজন নার্স ও স্টাফের অবহেলা, দুর্ব্যবহারে রোগীরা প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। হাসপাতালে একজন সুস্থ মানুষ আসলে নিজেই রোগাক্রান্ত হওয়ার ভয় রয়েছে। হাসপাতালের ভেতরে বাইরে রয়েছে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশ। রোগী থাকার ওয়ার্ডগুলোতে আছে বিশ্রী দুর্গন্ধ, জানান স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা কুলাউড়া উপজেলা হাজিপুর এলাকার মোবারক মিয়া। রোগীদের অভিযোগ, ভর্তি রোগীদের ওয়ার্ড ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ডাক দিলে বাজে ব্যবহার করেন। নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয় না বলে জানান তারা।