তিন সংস্থার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নাজেহাল খুলনা নগরবাসী
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
খুলনা ব্যুরো
খুলনা সিটি কর্পোরেশন, সড়ক ও জনপথ এবং ওয়াসার ধীরগতির উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। সংস্থাগুলোর ‘ধীরে চলো’ নীতির কারণে নগরীর প্রধান খানজাহান আলী সড়কসহ অধিকাংশ সড়ক এখন চলাচলের অনুপযোগী। খানাখন্দে ভরপুর এসব সড়কে বৃষ্টির পানি জমে এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। কবে নাগাদ এসব উন্নয়ন কাজ শেষ হবে তা বলতে পারছে না কেউ।
খুলনা সিটি করপোরেশন তাদের উন্নয়ন কাজ শেষ হতে আরো প্রায় দুই বছর সময় লাগবে জানালেও অন্য দুই সংস্থা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না। তবে খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেছেন আগামী এক বছরের মধ্যে সমস্ত উন্নয়ন কার্যক্রম সমাপ্ত হবে। খুলনা সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সাল থেকে নগরীর শতাধিক সড়কে এই উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। এ কাজে ব্যয় ধরা হয় ৮০০ কোটি টাকা। তবে করোনার কারণে দুই বছর পিছিয়ে থাকে সংস্থাটি। এই সময়ের মধ্যে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনাকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নয়নসামগ্রীর দামবৃদ্ধির অজুহাতে তাদের কার্যক্রম অত্যন্ত ধীরগতিতে চালাতে শুরু করে। মাসের পর মাস এমনকি বছর অতিবাহিত হলেও ছোট ছোট সড়কগুলোর দুই পাশের ড্রেন নির্মাণ কার্যক্রম শেষ করতে ব্যর্থ হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো।
দীর্ঘদিন ধরে খুঁড়ে ফেলে রাখার কারণে সড়কের দুই পাশের বাসিন্দাদের দিনের পর দিন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সেইসঙ্গে সড়কগুলোতে চলতে পারছে না যানবাহনও। ছোট-বড় দুর্ঘটনাকে সঙ্গে করে অলিগলি পথে চলতে হচ্ছে নগরবাসীকে। সিটি করপোরেশনের এই ধীরগতির কাজের সঙ্গে যোগ হয়েছে খুলনা ওয়াসার ২০৩০ কোটি টাকার পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার কাজ। ২০২৫ সালে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানা কারণে গত কয়েক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে এর কার্যক্রম। সূত্র জানায়, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সাহায্যে এই কাজ না করার কারণে খুলনা সিটি কপেৃারেশনের পক্ষ থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় খুলনা ওয়াসার কাজ।
শুধু তাই নয়, অনভিজ্ঞতার কারণে পয়োনিষ্কাশনের কাজটির জন্য যে পরিমাণ সড়ক খোঁড়ার কথা তার চেয়ে বেশি খোঁড়ায় বেহাল দশায় পরিণত হয় নগরের আহসান আহমেদ রোড, মির্জাপুর রোড, শামসুর রহমান রোড, ইস্ট লিঙ্ক রোডসহ বিভিন্ন সড়ক। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ওয়াসার কাজ বন্ধ করে দেওয়ার এটাও একটা বড় কারণ বলে জানা যায়। এসব সড়কগুলোতে পয়োঃনিষ্কাশনের জন্য ট্যাংকি ও পাইপলাইন স্থাপন করার পর তা যেনতেনভাবে পূরণ করা হয়। বর্ষার পানিতে সেই গর্তগুলোও এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। নগরীর শামসুর রহমান রোডের ব্যবসায়ী আতিয়ার পারভেজ বলেন, খুলনা ওয়াসার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের ট্যাংকি ও পাইপলাইন স্থাপনের পর কোনোরকমে মাটি-বালু দিয়ে গর্তগুলো পূরণ করে দিয়ে যায়। সড়কের মাঝ বরাবর স্থাপন করা ট্যাংকিগুলোর কারণে এখন আর এই সড়কে নিরাপদে চলতে পারছে না কোনো যানবাহন। ওই এলাকার বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, এই সড়কটির একাংশ খুঁড়ে রাখা হয়েছে মেরামত করার জন্য। অপর অংশ ওয়াসার ট্যাংকি স্থাপনে খোঁড়া হয়। যা আর মোরামত করা হয়নি। গত ৩-৪ দিনের ভারি বর্ষণে এই সড়ক এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বাড়ি থেকে বের হলেই মাখতে হচ্ছে কাদামাটি। ছেলে-মেয়েরা স্কুল কলেজে যেতে নানা সমস্যায় পড়ছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কবে যে এই সমস্যার হাত থেকে রেহাই পাব তা বলতে পারছে না কেউ। খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, গত কয়েক মাস কাজ বন্ধ থাকায় আমরা একটু পিছিয়ে পড়েছি। তবে আমরা চেষ্টা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে। এদিকে খুলনা সিটি কর্পোরেশন ও খুলনা ওয়াসার মতোই খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে নগরীর প্রধান এবং সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়ক খানজাহান আলী সড়ক। এই সড়কে চলছে প্রশস্তকরণের কাজ। ২৫ কোটি টাকার এই কাজের জন্য দুই মাস আগে খোঁড়া হয় সড়কটি। অতিবৃষ্টির কারণে এই সড়কটি এখন চলাচলের অযোগ্য হয়ে গেছে। নগরের প্রধান সড়ক হওয়ায় বাধ্য হয়ে এই সড়কে যানবাহন চালাচ্ছেন চালকরা। এক কিলোমিটারের বেশি এই সড়কের দুই পাশ দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩-৪ হাজার যানবাহন চলাচল করে। ভারী ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে খুঁড়ে রাখা সড়কের দুই পাশে সৃষ্টি হয়েছে কয়েকশ’ গর্ত। সেসব গর্তে জমে থাকা পানি আর কাঁদায় এখন এমন অবস্থা যে সড়কটিকে আবাদি জমি বললেও ভুল হবে না। এ ব্যাপারে খুলনা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, বৃষ্টির কারণে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। বৃষ্টির পরিমাণ একটু কমলেই আমরা আবার কাজ শুরু করব।