বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে ও জনবহুল এলাকায় তামাকের বিজ্ঞাপন, প্রচারণার হার সবচেয়ে বেশি করা হচ্ছে। অন্যদিকে সরকার ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যকে ব্যাহত করতে তামাক কোম্পানিগুলো কিশোর তরুণদের ধূমপানে আকৃষ্ট করছে। দেশব্যাপী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনে সিগারেট কোম্পানিগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘দেশব্যাপী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন : সিগারেট কোম্পানি বেপরোয়া’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট (বাটা) সহ বেশ কয়েকটি সংগঠন সম্প্রতি দেশের ১৬টি জেলায় ২২ হাজার ৭২৩টি বিক্রয়কেন্দ্রে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার লঙ্ঘনের চিত্র পেয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের (বাটা) আয়োজনে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি), এইড ফাউন্ডেশন, প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠন, টোব্যাকো কন্ট্রোল রিসার্চ সেল (টিসিআরসি), ডেভলপমেন্ট অ্যাকটিভিটিজ অব সোসাইটি (ডাস), গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি, মানস-মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা, জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতি (নাটাব) এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটির নির্বাহী পরিচালক একেএম মাকসুদ। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাস্-এর টিম লিডার আমিনুল ইসলাম বকুল, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক বজলুর রহমান, অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর প্রজেক্ট ম্যানেজার হামিদুল ইসলাম হিল্লোল, নাটাবের প্রজেক্ট ডিরেক্টর একেএম খলিলউল্লাহ, মানস-এর প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর উম্মে জান্নাত, এইউ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার আবু নাসের অনিক। সংবাদ সম্মেলনে সঞ্চালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের হেড অব প্রোগ্রামস সৈয়দা অনন্যা রহমান। সভায় বক্তারা বলেন, সিগারেট কোম্পানিগুলোর মদদে ঢাকার রেস্টুরেন্টগুলো ধূমপানের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। দুইটি বিদেশি তামাক কোম্পানির সরাসরি মদদ ও অর্থায়নে দেশে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ধূমপানের স্থান গড়ে উঠছে এবং এতে কিছু কিছু মালিক সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করছেন। যা ক্রমেই ভয়াবহতায় রূপ নিচ্ছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে এটা বন্ধ করতে হবে। তারা আরো বলেন, নাটক, সিনেমায় জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পীদের ধূমপানের দৃশ্য প্রদর্শন বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। তামাক কোম্পানি এসব নাটক, সিনেমায় পৃষ্ঠপোষকতা করছে।
বর্তমানে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে নির্মিত ওয়েব সিরিজগুলো তরুণদের মাঝে অধিক জনপ্রিয়। এ সুযোগে তরুণদের মধ্যে ধূমপানসহ তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারের দৃশ্য দেখানো হচ্ছে যা তাদের ধূমপানে উৎসাহিত করছে। অতিদ্রুত কোম্পানির এ কূটকৌশলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ই-সিগারেটের ভয়াবহতা সম্পর্কে বক্তারা বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে ই-সিগারেটকে নিরাপদ হিসেবে তুলে ধরে তরুণদেরকে ই-সিগারেটে আসক্ত করছে। বিভিন্ন প্রচারণার মাধ্যমে ই-সিগারেটকে আধুনিক ফ্যাশন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। ই-সিগারেট নেশাদায়ক এবং ক্ষতিকর বিধায় ভারতসহ এরই মধ্যে বিশ্বের ৪৭টি দেশ ই-সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে।