রংপুরে ১ মাসে পানিতে ডুবে ১১ শিশুর মৃত্যু

প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রংপুর ব্যুরো

পুকুর ও খাল-ডোবায় পড়ে শিশু মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। রংপুর জেলায় ১ মাসে পানিতে ডুবে ১১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মা ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকায় শিশু শাহ ফারদিন হোসেন বাইরে খেলছিল। কিছুক্ষণ পর সন্তানকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন মা, কোথাও না পেয়ে বাড়ির পেছনের পুকুরে ফারদিনকে ভাসতে দেখেন। পরে তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি গত রোববার রংপুরের কাউনিয়া ৫ নম্বর বালাপাড়া ইউনিয়নের হরিশ্বর গ্রামের। নিহত শাহ ফারদিন হোসেন শাহ্ বাড়ির শাহ ফয়সাল রশিদের একমাত্র ছেলে। সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ পরিবারের সদস্যরা। এমন অসাবধানতা আর অসচেতনতার কারণে রংপুরে গত ১ মাসে জেলায় ১১ শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৫ জুলাই রংপুরের তারাগঞ্জে পানিতে ডুবে সাদমান নামের ৪ বছরের শিশুর মৃত্যু হয়। তারাগঞ্জ উপজেলার মেনানগর পঞ্চায়েতপাড়া গ্রামে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। সাদমান ওই গ্রামের ইব্রাহীম হোসেনের ছেলে। গত ৭ জুলাই ঈদের পর বাবা-মায়ের সঙ্গে পৃথকভাবে নানাবাড়িতে বেড়াতে এসেছিল হাসান (১২) ও কন্যা দৃষ্টি মনি (১৩)। তারা সেখানে পুকুরে গোসল করতে নেমে সবার অজান্তে পানিতে ডুবে মারা যায়। দুজনে সম্পর্কে খালাতো ভাই বোন। ঘটনাটি রংপুরের গঙ্গাচড়ার খলেয়া ইউনিয়নের সলেয়াশাহ বাজার সংলগ্ন লালচাঁদপুর মুসাপাড়া গ্রামে ঘটে। ৬ আগস্ট রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের মবফারপাড়া এলাকায় পানিতে ডুবে দুই ভাইবোনের মৃত্যু হয়। নিহত দুই শিশু হলো- ওই এলাকার ওবায়দুল হকের দেড় বছর বয়সি মেয়ে রহিমা বেগম এবং আবু তালেবের দুই বছর বয়সি ছেলে সাইদ মিয়া। তারা দুজন সম্পর্কে চাচাতো ভাই-বোন। পরিবার সূত্রে জানা যায়, বাড়ির বাইরে ওই দুই শিশু খেলছিল। একপর্যায়ে সবার অগোচরে পুকুরে পড়ে যায় তারা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর দুপুরে পুকুর থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করেন স্বজনরা। একই দিনে রংপুরের তারাগঞ্জে উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের উজিয়াল শান্তিপাড়া গ্রামে বাড়ির পাশে খেলতে গিয়ে পুকুরে ডুবে মারা গেছে দুই শিশু। শিশু দুটি সম্পর্কে তারা চাচাতো ভাই। নিহত রাকিব হোসেন (৯) ফরিদ উদ্দিনের ছেলে ও সিয়াম হোসেন (৮) সাদ্দাম হোসেনের ছেলে। এর আগে ২ জুন মাসে রংপুরের বদরগঞ্জে বাড়ির পাশে খালের পানিতে ডুবে তানজিরুল ইসলাম (৬) ও মনির হোসেন (৫) নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই এবং ৬ জুন একই উপজেলায় পুকুরের পানিতে ডুবে মোবাশ্বেরা (৬) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। এ বিষয়ে জাতীয় কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম রংপুরের সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, বাংলাদেশ তো বটেই, উত্তরের রংপুর বিভাগে পুকুর ও খাল-ডোবায় পড়ে শিশু মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখনই সচেতনতাসহ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক অধিদপ্তর রংপুরের উপ-পরিচালক (অতি: দায়িত্ব) সেলোয়ারা পারভীন বলেন, এ ব্যাপারে কাজ করার সুনির্দিষ্ট কোনো প্রকল্প নেই। তবে কিশোর-কিশোরী ক্লাব ও পথশিশুদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর বিষয়ে সচেতনমূলক আলোচনা করা হয়। এ বিষয়ে আমাদের অভিভাবকদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে।