রাবি-রুয়েট

দুই বছরে ১১ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাজশাহী ব্যুরো

দুই বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) আত্মহত্যা করেছেন ১১ শিক্ষার্থী। যেখানে রাবির আছেন ৯ জন আর রুয়েটের আছে দুইজন। শুধু রুয়েট বা রাবি নয়, আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। পারিবারিক কলহ, প্রেমঘটিত জটিলতা, বেকারত্ব, নিঃসঙ্গতা, পরীক্ষা নিতে প্রশাসনের গড়িমসি, ফলাফল দিতে বিলম্ব, নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে ব্যর্থ হওয়া, ফলাফল আশানুরূপ না হওয়া, মানসিক চাপ, পারিবারিক চাপসহ বিভিন্ন কারণে শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে বলে মনে করছেন দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বিশেষজ্ঞরা। সর্বশেষ গত ৮ জুন চিরকুটে ‘স্বেচ্ছায় মৃত্যু’ লিখে আত্মহত্যা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) লোক প্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. তানভীর ইসলাম। এর আগে গত ২০ মে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) সিএসই বিভাগের ১৭ সিরিজের শিক্ষার্থী সামিউর রহমান ছাত্রাবাসের নিজ রুমে আত্মহত্যা করেন। তার তিন দিন আগে ১৭ মে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের লেফটেন্যান্ট সেলিম হলে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৮ সিরিজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তানভীর ফাহাদ রুমি। গত বছরের ২০ ডিসেম্বর যশোরের নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মৃত্যুঞ্জয়ী সেন। একই বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর বিয়ের ৩ মাসের মাথায় সুইসাইড নোট লিখে স্বামীর বাসায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছন্দা রায়। গত বছরের ১৩ মে দুপুরে নিজ ঘরে বাঁশের আড়ার সঙ্গে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন রাবির ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী সাদিয়া তাবাসসুম। মৃত্যুর আগে লিখে যান ‘চোরাবালির মতো ডিপ্রেশন বেড়েই যাচ্ছে। মুক্তির পথ নেই। গ্রাস করে নিচ্ছে জীবন। মেনে নিতে পারছি না।’ ৬ জুন স্বামীর সঙ্গে অভিমান করে গলায় ফাঁস দেয় জান্নাতুল মাওয়া দিশা নামের আরেক শিক্ষার্থী। তিনি নাট্যকলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। একইভাবে গত বছরের ৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ৩টায় গলায় গামছা পেঁচিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রাবির প্রাচ্যকলা ডিসিপ্লিনের সাবেক শিক্ষার্থী সোহাগ খন্দকার। প্রেমের সম্পর্ক বিচ্ছেদের পর হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ইশতিয়াক নামে রাবির আরো এক শিক্ষার্থী। ১৭ ফেব্রুয়ারি ভোর ৬টার পর নিজ বাসায় বিষপান করেন তিনি। ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরুল কায়েস ও ১৯ ডিসেম্বর নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী দেবজ্যোতি বসাক পার্থও বেছে নেন আত্মহত্যার মতো ঘৃণ্য পথ। মায়ের সঙ্গে অভিমান করে আত্মহত্যা করেন ইমরুল। আত্মহত্যার প্রবণতার বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিমত জানতে কথা হয় রুয়েটের মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইসতিয়াক সাইফুল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, সুইসাইডের মতো একটা ব্যাপারে কখনো একটা কারণ থাকতে পারে না। একাডেমিক প্রেশার, পারসোনাল সমস্যা অথবা অন্য কোনো কারণ এক সঙ্গে চাপ তৈরি করে। তিনি আরো বলেন, রুয়েট প্রশাসনেরও কিছু সমস্যা আছে। যেমন, রেজাল্টটা ঠিক সময়ে না দেওয়া। আমাদের সিস্টেম অনুযায়ী আমরা যদি কোনো সাব্জেক্টে লক খাই তাহলে আগামী সেমিস্টারে মিড ব্রেকের সময় লক টা ক্লিয়ার করতে হবে। যদি রেজাল্টই না দেয় তাহলে কীভাবে বুঝব কোনটাতে লক খেয়েছি। যদি এই সেমিস্টারে আবারো লক খাই তাহলে অনেকগুলো এক সাথে হয়ে গেলে কন্টিনিউ করা কঠিন হয়ে যায়, যার কারণে হতাশা কিংবা ডিপ্রেশন চলে আসে। এই কারণে হয়তো দেখা যায় কারও মধ্যে সুইসাইডের টেনডেন্সি চলে আসে। রুয়েটের আরেক শিক্ষার্থী সুমাইয়া রহমান ঐশী বলেন, পারিবারিক সমস্যার কথা কাউকে বলতে না পারা। মা বাবার মধ্যকার সম্পর্ক ভালো না হওয়া, অর্থনৈতিক সমস্যা ইত্যাদি আত্মহত্যার কারণ হতে পারে। কেউ মানসিক চাপে থাকলে তার উচিত বন্ধুবান্ধবের সাথে কথা বলা, শিক্ষকদের সাথে কথা বলা, প্রয়োজনে মানসিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। এছাড়া আত্মহত্যা প্রতিরোধে প্রশাসনের উচিত পরীক্ষা নিতে গড়িমসি না করা। ফলাফল দিতে বিলম্ব না করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার পেছনের কারণ জিজ্ঞাসা করলে রাবির মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাদেকা বানু অসুস্থ প্রতিযোগিতার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, আমাদের সময়েও আমরা ফেল করেছি। কিন্তু আত্মহত্যার পথ বেচে নিইনি। কিন্তু বর্তমান জেনারেশনে কেউ তাদের অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট না। আস্তার জায়গাটি তৈরি করতে পারছে না।