বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ও মুক্তিযুদ্ধের ধারায় এগিয়ে চলায় মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী রাজনীতি বড় চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম। বক্তারা বলেন, গত প্রায় ১৫ বছর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত মূল্যবোধকে ধারণ করে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। তবে এসব সম্ভাবনা মোটেই শঙ্কা ও চ্যালেঞ্জ মুক্ত ছিল না। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রেক্ষাপট, পরিণতি ও আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সভার আলোচকরা বলেন, অতীত ও বর্তমানকে বাদ দিয়ে ভবিষ্যৎ গড়া যায় না। গত প্রায় ১৫ বছর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত মূল্যবোধকে ধারন করে রাষ্ট্র চলছে বলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্ব অঙ্গনে মর্যাদাশীল একটি অবস্থানে যেতে পেরেছে। সারা বিশ্বের নজর এখন বাংলাদেশের দিকে। দারিদ্র্য বিমোচন ও জঙ্গি-সন্ত্রাস দমনের রোল মডেল। পরবর্তী আফগানিস্তান নয়, এখন বিশাল এক সম্ভাবনার নাম বাংলাদেশ। কিন্তু এই মাসে অগ্রযাত্রা এখন শঙ্কায়। হেফাজত-জামায়াতের বিষয়ে তরুণ প্রজন্মকে সতর্ক করে বক্তারা বলেন, বর্তমান বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী রাজনীতি। ধর্মান্ধতা, জামায়াত-হেফাজতের আস্ফালন দিনকে দিন বাড়ছে। এর বিপরীতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি দুর্বল হয়েছে। নীতি ও আদর্শ নয়, ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক পক্ষের বড় দুর্বলতা। তবে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম, নতুন ভোটার যদি সচেতন ও সতর্ক থাকে এবং উপলব্ধি করে তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য কোনো ধরনের রাষ্ট্র ও রাজনীতি অপরিহার্য, তাহলে সব শঙ্কা ও চ্যালেঞ্জ উতরিয়ে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে। আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, বর্তমান সময়ে রাজনীতি বিমুখ একটা প্রজন্ম তৈরি হয়েছে। এই প্রজন্মকে যদি আমরা প্রকৃত ইতিহাস না জানাতে পারি তবে এটি জাতির জন্য দুঃখজনক। এতে বিপদের সময় মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না। যুক্তরাষ্ট্র ও সিভিল সোসাইটির সমালোচনা করে তিনি বলেন, সারাবিশ্বে ৬৪টি দেশে আমেরিকা সরকার পতন ঘটিয়েছে। তারা জামায়াতের মতো দলকে মডারেট দল বলছে। সিভিল সোসাইটির সদস্য হিসেবে কারা বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে দেখা করছে? এই ‘অধিকার’ হেফাজতকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। যারা যাচ্ছেন তাদের অধিকাংশের পরিবার মুসলিম লীগের ব্যাকগ্রাউন্ড। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা প্রশংসনীয়। তিনি যেভাবে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে কথা বলছেন তা অভাবনীয়। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাষ্টি ড. সারোয়ার আলী বলেন, বঙ্গবন্ধু তার দলের লোকজনের মধ্যে লোভের বিস্তারের বিষয়ে সতর্ক করেছেন। এই লোভ থেকে আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে রক্ষা করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ধারায় বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। সে লক্ষ্যে সবাইকে কাজ করতে হবে। হারুণ হাবিব বলেন, বক্তাদের বক্তব্যে আমাদের ব্যর্থতার বিষয়টি উঠে এসেছে। আমরা ভেবেছিলাম মুক্তিযুদ্ধের পর পরাজিত শক্তি আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু তা হয়নি। বরং তারা আরো শক্তিশালী হয়ে আক্রমণ করেছে। সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতাবিরোধীরা নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সাম্প্রতি সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা নতুন করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এমনকি তারা মুক্তিযোদ্ধাদেরও বিচারের দাবি করছে। আওয়ামী লীগের তরুণ অনেক নেতাও সাঈদীর মৃত্যুতে মর্মাহত হয়েছেন। এটি উদ্বেগের। এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের মতো কুশিলবদেরও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যায় অংশগ্রহণকারীদের বিচার হয়েছে, একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে নিরপেক্ষভাবে তৎকালীন সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের কার কি ভূমিকা ছিল, তা বের করতে হবে। আমরা দেশি-বিদেশি কুশিলবদের পরিচয় করিয়ে শেতপত্র প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি। নারী নেত্রী অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেন, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ আমেরিকা আমাদের স্বাধীনতাকে কখনো মেনে নিতে পারেনি। তারা এখনো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে কাজ করছে। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমারিকা যে ভূমিকা নিচ্ছে, তা উদ্বেগের। এটি প্রতিরোধে সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে।