সমাজের মূল স্রোতধারা থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন অনগ্রসর সম্প্রদায়। তারা প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন সনাতনী পেশায় নিয়োজিত। কালের বিবর্তনে অন্যান্য পেশার মানুষ পেশা পরিবর্তন করে কেউবা প্রচলিত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে প্রাচীন পেশা থেকে সরে এসে স্বচ্ছল জীবযাপন করছেন। কিন্তু কিছু মানুষ তাদের পূর্বপুরুষের পেশায় নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। এরা অনগ্রসর জনগোষ্ঠী যারা সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক দিয়ে পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠী। চরম অবহেলিত, বিছিন্ন, উপেক্ষিত জনগোষ্ঠী হিসেবে এরা পরিচিত। অনগ্রসর জনগোষ্ঠী হিসেবে জেলে, সন্যাসী, ঋষি, বেহারা, নাপিত, ধোপা, হাজাম, নিকারী, পাটনী, কাওড়া, তেলী, পাটিকর, সুইপার, মেথর বা ধাঙ্গর, ডোমার, ডোম, রাউত, ও নিম্নশ্রেণির পেশার জনগোষ্ঠী। সমাজসেবা অধিদপ্তরের জরিপমতে বাংলাদেশে অনগ্রসর জনগোষ্ঠী প্রায় ১৪, ৯০, ০০০ জন। এই পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলস্রোতে আনতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০১৮-১৯ পর্যন্ত এ কর্মসূচি বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন নামে পরিচালিত হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ কর্মসূচি পৃথক হয়ে ‘অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি’ নামে স্বতন্ত্র কর্মসূচি হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে এ কার্যক্রমের বিশেষ ভাতা ও শিক্ষা উপবৃত্তির নগদ সহায়তায় জিটুপি পদ্ধতিতে উপকারভোগীর মোবাইল হিসাবে প্রেরণ করা হচ্ছে। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ৫০ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর অক্ষম ও অসচ্ছল ব্যক্তিকে ভাতা প্রদান; শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত লক্ষ্যভুক্ত শিক্ষার্থীদের মাসিক হারে প্রাথমিক স্তরে ৭০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৮০০ টাকা, উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ১০০০ টাকা এবং উচ্চতর স্তরে ১২০০ টাকা শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান ও ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে কর্মক্ষম অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছ। ২০১২ -২০১৩ অর্থ বছর হতে পাইলট কর্মসূচি হিসেবে দেশের ৭টি জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করে এ কর্মসূচি শুরু হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে নতুন ১৪ জেলাসহ মোট ২১টি জেলায় এ কর্মসূচি সম্প্রসারিত হয় এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পূর্বের ২১ জেলাসহ নতুন ৪৩টি জেলায় কর্মসূচি সম্প্রসারণ করে মোট ৬৪ জেলায় এ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ কর্মসূচির আওতায় শিক্ষা উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখা ছিল ২১৯০৩ জন, ভাতা পেয়েছে ৪৫২৫০ জন, প্রশিক্ষণ পেয়েছে ১২১০ জন, প্রশিক্ষণোত্তর সহায়তা পেয়েছে ১০০০ জন। এ কর্মসূচির আওতায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা তাদের নিজ পেশায় দক্ষতা অর্জন করে পেশার পরিধি বাড়িয়েছে, অনেকে বিভিন্ন কর্মমুখী প্রশিক্ষণ পেয়ে পেশা পরিবর্তন করে স্বচ্ছল জীবনযাপন করছে। শিক্ষা উপবৃত্তি পাওয়ার ফলে তাদের ছেলে মেয়েরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। শিক্ষিত হয়ে সমাজের মূল স্রোতে প্রবেশ করছে। সামগ্রিকভাবে এ কর্মসূচি দেশের দারিদ্র দূরীকরণে ভূমিকা রাখছে বলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মতামত দেন।