ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে নিজস্ব স্থাপনা, বাড়ি, আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখা এবং পানির আধার বিনষ্ট করা এলাকাবাসীর নাগরিক দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। গতকাল শনিবার বাসাবো কালিমন্দির সংলগ্ন এলাকায় ডেঙ্গু রোগ বিস্তাররোধে মশক নিধনে জনসম্পৃক্ততা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ পরবর্তী সময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ডিএসসিসি মেয়র এ মন্তব্য করেন। শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, সব তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টা ওয়ার্ডের মধ্যে যে সব ওয়ার্ডে ১০ জনের বেশি রোগী পেয়েছি, সে সব ওয়ার্ডকে আমরা ‘লাল চিহ্নিত’ করেছি। লাল চিহ্নিত মানে বিপজ্জনক। সেখানে রোগীর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। সে আশঙ্কা থেকেই আমরা লাল চিহ্নিত করেছি এবং এলাকাবাসীকে সম্পৃক্ত করেছি। বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা, বাড়ির মালিক, সব স্থাপনার মালিক, সব সামাজিক সংগঠন, রেড ক্রিসেন্ট, স্কাউটস সবাইকে সম্পৃক্ত করে এই ওয়ার্ডগুলোতে আমরা দিনব্যাপী বিশেষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সকালে লার্ভিসাইডিং ও বিকালে এডাল্টিসাইডিংসহ চিরুনি অভিযান পরিচালনা করব। যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের এই কার্যক্রমে এগিয়ে এসেছে এবং অংশগ্রহণ করেছে আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। নিজস্ব স্থাপনা, বাড়ি, আঙিনাসহ সব জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখা এবং পানির আধার বিনষ্ট করা এলাকাবাসীর নাগরিক দায়িত্ব।
এ কার্যক্রমে লক্ষ্য উল্লেখ করে ডিএসসিসি মেয়র আরো বলেন, নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মাধ্যমে আমাদের প্রতিদিনকার যে কার্যক্রম সেটাও ব্যাপক। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা (ডেঙ্গু রোগে প্রকোপ) নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি। গত বৃহস্পতিবারে আমাদের রোগীর সংখ্যা ৭০-এর নিচে চলে এসেছে। কিন্তু সেখানে আমরা কোনো সন্তুষ্টির ঢেঁকুর নিতে চাই না। এটা ভরা মৌসুম। এখানো বর্ষা শেষ হয়নি। গতকালও বৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং পানি কিন্তু কিছুক্ষণ পরপরই জমবে। যেহেতু ভাদ্র মাস ভরা মৌসুম সুতরাং মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম আমরা আরো বেগবান করেছি। যেহেতু আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি সেহেতু এই সুযোগে আমরা যদি একদম নির্মুলের পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে সামনের দিনে আর বৃদ্ধি হতে পারবে না। আমাদের লক্ষ্য হলো মশক প্রজননের আধার বিনষ্ট করা। আমরা যতই সোর্স রিডাকশন করতে পারব, আমাদের কার্যক্রম ততই ফলপ্রসূ হবে। সেজন্য জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করতেই আমরা এই কার্যক্রম নিয়েছি।
এ সময় মার্শাল এগ্রোভেট নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কারো মাধ্যমে (কীটনাশক) আমদানি করি না। ২০১৯ সালের পর থেকে আমরা সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী উৎপাদনকারীর কাছ হতে সরাসরি আমদানি করি। সে প্রতিষ্ঠানও কিন্তু সরকার কর্তৃক নির্ধারিত। সেখানে সব অনুমতি যেমন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অনুমতি, কীটনাশক যারা নিয়ন্ত্রণ করেন, তাদের অনুমতি নেওয়া রয়েছে এবং আমাদের কীটনাশক কমিটি আমাদের যে কীটনাশক নির্ধারণ করে দেয় এর বাইরে আমরা কোনো কীটনাশক ব্যবহার করি না। আমরা শুধু (আমদানিকৃত কীটনাশকের) মিশ্রণটা উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে করে থাকি। উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে যথাযথভাবে এবং আমাদের নির্ধারিত মূল্যের চাইতে কম মূল্যে তারা কাজ পেয়েছে। আমাদের সঙ্গে তাদের যে চুক্তি এখন পর্যন্ত আমরা সেটির কোনো ব্যত্যয় লক্ষ্য করিনি। সুতরাং অন্য কোথাও ঘটনা ঘটলেও আমাদের এখানে এ ধরনের (ঘটনা ঘটানোর) কোনো সুযোগ নেই। যথাসময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জরিপের ফলাফল জানানোর আহ্বান জানিয়ে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপের ওপরই নির্ভর করি। প্রাকমৌসুম যে জরিপ হয়েছে, সে জরিপ অনুযায়ী আমরা এরই মধ্যে কাজ সম্পন্ন করেছি। এখন মৌসুমের যে জরিপ সেটার জন্য আমরা অপেক্ষায় আছি। এখানে একটি বিষয়, প্রাকমৌসুম জরিপটা অনেক বিলম্বিত হয়েছিল। আমরা আশা করব যে, ভরা মৌসুমের জরিপটা যেন আমরা যথাসময়ে পাই। তাহলে আমাদের কার্যক্রমটা আরও কার্যকরভাবে নিতে পারব। মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস গতকাল হাজারীবাগের ৫ নম্বর ওয়ার্ড এবং কদমতলীর ৫৩ ও ৬০ নম্বর ওয়ার্ডেও ডেঙ্গু রোগ বিস্তাররোধে মশক নিধনে জনসম্পৃক্ততা কার্যক্রমে অংশ নেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, পরিবহন মহাব্যবস্থাপক মো. হায়দর আলী, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির, ২ নম্বর অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা সুয়ে মেন জো, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চিত্তরঞ্জন দাসসহ সংশ্লিষ্ট অঞ্চল ও ওয়ার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও কাউন্সিলরবৃন্দ অংশ নেন।