রংপুর মহানগরীতে যানজট সমস্যা এখন নগরবাসীর নিত্যদিনের ভোগান্তির কারণ। যত্রতত্র অবৈধ পার্কিংয়ের পাশাপাশি রাস্তা ও ফুটপাত চলে গেছে হকারদের দখলে। ফুটপাতে হাঁটার জায়গা না থাকায় পথচারী চলাচলে সড়কে বেড়েছে যানজট। সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও যানজট পরিস্থিতি অনেকটাই অনিয়ন্ত্রিত। নগরের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে ছোট-বড় সব সড়কই এখন ব্যাটারিচালিত অটো ও চার্জার রিকশার দখলে। বৈধ-অবৈধ মিলে ৪০ হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও চার্জার রিকশা চলাচল করছে। অথচ সিটি কর্পোরেশন থেকে নিবন্ধন (লাইসেন্স) দেওয়া রয়েছে ৮ হাজার ২৪০টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার। দুর্ঘটনাপ্রবণ ও বিপজ্জনক এসব হালকা যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হলেও বাস্তবে চিত্র উল্টো। গত সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিন দেখা যায়, নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো রিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ঠাসা। যাত্রী দেখলেই চালকরা যেখানে-সেখানে রিকশা বা অটোরিকশা থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে। আবার সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীর আশায় অটোরিকশাগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। থেমে থেমে কোথাও অটোরিকশার জটলা তৈরি হয় আবার কোথাও দীর্ঘ সারি হয়ে যায়। এই দীর্ঘ সারির কারণে পথচারীদের সড়কের এক পাশ থেকে অন্য পাশে যাওয়াও বেশ কষ্টকর। ইশারা করে ও বাঁশি বাজিয়ে হাঁপিয়ে উঠছে ট্রাফিক পুলিশ। অথচ এক বছর আগে নগরীতে ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল পোস্ট স্থাপন করা হলেও চালুর উদ্যোগ নেই। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি দায় চাপাচ্ছে সিটি কর্পোরেশন ও মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি)। শহর ঘুরে দেখা যায়, রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক) সংলগ্ন সাবেক ওরিয়েন্টাল হলের সামনে হকাররা সারি সারি দোকান বসিয়েছে। এ কারণে ফুটপাত দিয়ে চলোচল করতে পারছে না পথচারী। ফুটপাতের পাশেই অর্ধেক সড়কজুড়ে বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ দোকান। তাছাড়া সড়কে অটোরিকশা, রিকশা পার্ক করে রাখা হচ্ছে। একই অবস্থা জেলা পরিষদ কমিউনিটি সেন্টারের সামনেও। রাস্তা দখল করে কাপড়, ফলের দোকান বসিয়ে সারাবছরই বেচাকেনা চলে। নগরীর টাউন হল, জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট, পায়রা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড়, প্রেসক্লাব, শাপলা চত্বর, লালবাগ এলাকার বেশিরভাগ ফুটপাত হকারদের দখলে। এতে সাধারণের চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ফুটপাতের ওপরেই ছাউনি দিয়ে পণ্য ঝুলিয়ে রেখেছে। নগরীর রাস্তা প্রশস্ত হলেও জনসাধারণ সুফল পাচ্ছে না। ফুটপাত দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটার কোনো উপায় নেই। রসিকের কাছে এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত ফুটপাত চলাচলের উপযোগী করা হোক। জানা যায়, যানজট নিরসনে রসিক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পরীক্ষামূলকভাবে পায়রা চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড় ও লালকুঠি মোড় এলাকায় ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল পোস্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ২০২২ সালের শুরুতে ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে পোস্টগুলো স্থাপন করা হয়। জাহাজ কোম্পানি ও লালকুঠি মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যাল পরিচালনায় বসানো হয় যন্ত্রপাতি। বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়ে ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যালের লাইটপোস্ট স্থাপন করা হয়। কিন্তু আজও এসব সিগন্যাল পোস্ট চালু হয়নি। যানজট নিরসনে রসিক সহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন আরএমপি ট্রাফিক বিভাগ। উপকমিশনার (ট্রাফিক বিভাগ) মেনহাজুল আলম বলেন, নগরীর তিনটি পয়েন্টে ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল পোস্ট শিগগির চালু করা হবে। এ নিয়ে মেয়রের সঙ্গে কথাও হয়েছে। রসিক মেয়র মোস্তফা বলেন, সিগন্যাল পোস্টগুলো স্থাপনের পর কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে। পরে ঢাকার কোম্পানি এনে ত্রুটিগুলো সারানো হয়েছে। এগুলো দ্রুতই চালু করা হবে। তিনি আরও বলেন, রাস্তা পারাপারে নগরের সিটি বাজার ও বাস টার্মিনাল এলাকায় পথচারীদের চলাচলের সুবিধার্থে দুটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। আগামীতে গুরুত্বপূর্ণ সড়কে এধরনের আরো কয়েকটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনার কথাও জানান রসিক মেয়র।