রংপুর জেলার ৮ উপজেলায় দিন দিন বাড়ছে নেপিয়ার ঘাস চাষ। উন্নত জাতের এই ঘাস গবাদিপশুর খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে কৃষকরা আয় করছেন হাজার হাজার টাকা। খড়ের বিকল্প গরু-ছাগলসহ অন্যান্য গবাদিপশুকে খাদ্য হিসেবে দেওয়া হচ্ছে নেপিয়ার ঘাস। খড়ের দামের তুলনায় এই ঘাস সাশ্রয়ী হওয়াতে পশু পালনকারীরাও ঝুঁকছেন। আবার অনেকেই এই ঘাস চাষ করে হচ্ছেন আত্মনির্ভরশীল। কিন্তু সবকিছুর দাম যখন বেড়েই চলছে তখন পাল্লা দিয়ে নেপিয়ান ঘাসের দামও বাড়ছে। জেলার বদরগঞ্জ, পীরগাছা, কাউনিয়া, তারাগঞ্জ, গংগাচড়া, পীরগগঞ্জ, মিঠাপুকুর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকহারে নেপিয়ার ঘাসের চাষ হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরেও দেখা গেছে, কৃষি ও পতিত জমি এবং বাড়ির আশপাশে নেপিয়ার ঘাসের ছড়াছড়ি। খড়ের চেয়ে এখন এই ঘাসের চাহিদা অনেক বেশি। কৃষক ও খামারিরা নেপিয়ার ঘাস চাষে উদ্যোগী হয়ে উঠছেন। বিশেষত খড়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বিদেশি জাতের এই ঘাস। নেপিয়ার ঘাসের চাষে তেমন পরিশ্রম করতে হয় না। কৃষকরা অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে লাভবান হচ্ছেন। এ জাতের ঘাস রোপণের এক থেকে দুই মাসের মাথায় কাটার উপযোগী হয়ে যায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে গোড়া থেকে চারা গজায়। সেক্ষেত্রে দেড় থেকে দু’মাসের মধ্যে কাটার উপযোগী হয়। একটি গোছা থেকে ১২-১৫ কেজি ঘাস হয়। একটি গরুর জন্য প্রতিদিন ৭-১০ কেজি ঘাস প্রয়োজন হয়। একবার বীজ বুনলে বা চারারোপণ করলে কয়েক বছর ঘাস পাওয়া যায়। ফলে খরচ কম হয়। মিঠাপুকুর উপজেলা মির্জাপুর ইউনিয়নের বুজরুখ হরিপুর গ্রামের মো. খোরশেদ আলম ১বিঘা বর্গা নিয়ে নেপিয়ান ঘাস লাগিয়েছেন। তিনি বলেন, এতে করে তার ৪-৫টি গরুর প্রতিদিনের খাদ্যের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। তাকে গরুর জন্য অন্য কোনো ঘাসের চিন্তা করতে হচ্ছে না। রংপুর সদর উপজেলার পানাপুকুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কৃষক ও খামারিরা নেপিয়ার ঘাস চাষ করছেন তাদের নিজস্ব গবাদিপশুর খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য। আবার কেউ কেউ বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করেছেন। খামারি রতন শেখ বলেন, আমার খামারে ৫৭টি গরু রয়েছে। খড়ের দাম বেশি হওয়ায় এখন এই ঘাস খাওয়ানো হচ্ছে। নেপিয়ার ঘাস চাষ গরুর খাবারের চাহিদা মিটছে। কৃষক তাহের বলেন, ছয় বছর ধরে নেপিয়ার ঘাস চাষ করছি। এতে লাভ বেশি। খরচ খুবই কম। গাভির দুধও বেশি হয়। এই ঘাস চাষের জন্য বীজ বোনা এবং চারা লাগানো যায়। বীজ বুনলে দেড় মাস এবং চারা লাগালে এক মাসের মধ্যে ঘাস বড় হয়ে যায়। প্রতিমাসে অল্প ফসফেট, পটাশ এবং ইউরিয়া সার দিতে হয়। মাঝে মধ্যে একটু সেচও দিতে হয়। তিনি আরো বলেন, এই ঘাস চাষ করে গরু-ছাগলকে খাওয়ানোর পাশাপাশি জমি থেকে ঘাস বিক্রিও করছি। ঘাসের টাকায় সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ, জমির সার-কীটনাশক কেনার জন্য আগের মতো কষ্ট করতে হয় না। গ্রামের অনেকেই ঘাস চাষ করে লাভবান হয়েছেন। রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় নেপিয়ার ঘাসের চাহিদা অনেক বেশি। নেপিয়ার ঘাস একটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। একবার লাগালে কয়েক বছর ধরে ঘাস পাওয়া যায়। অন্য ফসলের মতো নেপিয়ার ঘাসের পরিচর্যা করা লাগে না। সময়মতো সেচ আর সামান্য সার দিলেই ভালো ফলন হয়। অনেক কৃষক এবং খামারি এখন নেপিয়ার ঘাস চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। নেপিয়ার জাতের ঘাস গরুর খাবারের ছয়টি উপাদানের সুষম চাহিদা পূরণ করে। অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জোবাইদুল কবীর বলেন, কম বেশি সব জায়গাতে এখন নেপিয়ার ঘাস চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে বেশি চাষাবাদ হয়, মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ, পীরগাছা ও সদর উপজেলায়। এখন খড়ের বিকল্প হিসেবে ঘাসের চাহিদা বেড়েছে। কৃষক ও খামারিরা নিজেরাই ঘাস উৎপাদনে ঝুঁকছেন। অন্যান্য ফসলের চেয়ে এখন ঘাস চাষে লাভ বেশি। প্রতিটি উপজেলাতে নেপিয়ার ঘাসের বাজারও তৈরি হয়েছে।