শ্যামপুর সুগার মিলের কর্মচারীদের মানবেতর জীবনযাপন
প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রংপুর ব্যুরো
১৯৬৪ সালে প্রায় ১০০ একর জমির ওপর গড়ে ওঠে রংপুরের শ্যামপুর সুগার মিল। শ্যামপুর চিনিকল বন্ধ থাকায় দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন শ্রমিক ও কর্মচারীরা। অন্যদিকে আখ চাষিরা ঝুঁকছেন ভিন্ন ফসল উৎপাদনে। কিন্তু তাতে লাভ না হওয়ায় দুর্ভোগে রয়েছেন তারাও। সরেজমিন শ্যামপুর চিনিকলে গিয়ে দেখা যায়, নিরিবিলি ও শান্ত পরিবেশ, সবুজ গাছগাছালির ছায়া। শ্রমিক-কর্মচারীদের নেই কোনো কোলাহল। লতা-পাতায় সবুজে ঘেরা প্রথম দেখায় যে কারো মনে হতে পারে এটি একটি পানের খেত। চিনিকলটি বন্ধ থাকায় এভাবেই সরকারের কেনা কোটি কোটি টাকার যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে অযত্ন আর অবহেলায়। ১৯৬৪ সালে প্রায় ১০০ একর জমির ওপর গড়ে ওঠে। উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬৭ সালে। ২০০০ সাল পর্যন্ত মিলটি লাভজনক থাকলেও পরে লোকসানের মুখে পড়ে। এতে ২০২০-২১ মাড়াই মৌসুমে মিলের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন। সেই থেকে মিল এলাকায় বন্ধ হয় আখ চাষ। আখ চাষি রশিদ মিয়া বলেন, আখ চাষ করলে বছরে একটা মোটা টাকা পাওয়া যায়। মিলটা চললে আমাদের অনেক উপকার হতো। আখ চাষের জমিতে অন্যান্য ফসল চাষ করে লাভ করা যাচ্ছে না, এজন্য খুব দুর্ভোগে আছি। শ্যামপুর সুগার মিলের কর্মচারী আসাদ মিয়া বলেন, তিন মাস থেকে কোনো বেতন পাই না। পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছি। কীভাবে দিন পার করছি একমাত্র আল্লাহ্ পাক জানেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি দ্রুত যাতে মিলটি চালু করা হয়। রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মো. বেলাল উদ্দিন বলেন, চিনিকলের পরিত্যক্ত জমিগুলোতে হাঁড়িভাঙা আমের চাষ করে এই শিল্পের সঙ্গে কাজে লাগিয়ে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব। এতে করে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা সম্ভব। শ্যামপুর সুগার মিলের ইনচার্জ মাসুদ সাদিক বলেন, গত তিন মাসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটিসহ বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। দীর্ঘদিনের বেতন আটকে থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছি আমরা। বন্ধ সুগার মিলটি পুনরায় চালু করার দাবি জানাই। চিনিকলটি চালু হলে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হতো। অনেক বৈদেশিক মুদ্রা আমাদের জন্য সাশ্রয় হতো। চিনিকলটিতে ২০২০ সাল পর্যন্ত স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে কর্মকর্তা কর্মচারী ছিলেন ৭৪৪ জন। বর্তমানে আছেন ৬৬ জন। এদিকে, ২ আগস্ট রংপুর জিলা স্কুল মাঠের মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্যামপুর চিনিকল পুনরায় চালুর আশ্বাস দেওয়ায় সরকারপ্রধানের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন শ্যামপুর চিনিকল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন।
শ্যামপুর সুগার মিলস এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান বলেন, শ্যামপুর সুগার মিল পুনরায় চালু করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় অঙ্গীকার আমাদের আনন্দিত করেছে। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।