জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রোগী ভর্তি হতে শুরু করে। কয়েক দিনের ব্যবধানে রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় ডেঙ্গু বিশেষায়িত ওয়ার্ড খুলতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। এরপর একে একে পাঁচটি ওয়ার্ড ডেঙ্গু রোগীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়। সব ওয়ার্ডই এখন ডেঙ্গু রোগীতে পূর্ণ। বর্তমানে ৮৪ জন ডেঙ্গু রোগী ওয়ার্ডগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি অবনতির কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শুরু থেকে পুরো হাসপাতালকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় জোর দেয়। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো- ওয়ার্ডগুলোতে মশার উৎপাত বিন্দুমাত্র কমেনি। এতে ২৪ ঘণ্টায় মশারির নিচে কাটছে রোগীদের। দুর্ভোগে অন্য সাধারণ রোগীরাও। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।
সরেজমিনে হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, একজন রোগীও মশারির বাইরে বের হচ্ছেন না। জরুরি প্রয়োজন ও মেডিকেল পরীক্ষার জন্য বের হলেও মশা থেকে বেঁচে চলছেন। এমনকি ডিউটি ডাক্তারও এই বিষয়ে সতর্ক রয়েছেন। এ বিষয়ে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসাসেবায় সরাসরি যুক্ত একাধিক ব্যক্তি (নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক) জানান, হাসপাতালে মশা প্রচুর। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর কানের কাছে ভনভন শব্দ রীতিমতো আতঙ্কের বিষয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে সজাগ। মশারি, অ্যারোসলসহ সবকিছুই সাপ্লাই দিচ্ছে। কিন্তু মশা তো নাছোড় বান্দা। অ্যারোসলেও কাজ হয় না। মশারিই প্রধান ভরসা। রোগীর স্বজনদের ভাষ্য, ডেঙ্গু ওয়ার্ডে এসে অনেক রোগীর স্বজনই রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। কারণ ডেঙ্গু রোগী মশারিতে ২৪ ঘণ্টা আবদ্ধ থাকলেও স্বজন হিসেবে জায়গা স্বল্পতার কারণে অনেক সময় মশারি টানানোর সুযোগ থাকে না। হাসপাতাল এলাকায় প্রচুর মশা। এটার অবসান প্রয়োজন। এমন বাস্তবতায় বড় প্রশ্ন এই মশা আসছে কোথা থেকে? এই প্রশ্নের উত্তর হাসপাতালের বাইরে বের হলেও দেখা মিলছে! রামেক হাসপাতালের বাইরের এলাকাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, মশার প্রধান উৎপাদনস্থল রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ড্রেন ও ঝোপঝাড়। আশপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) পরিচ্ছন্নতা বিভাগের অবহেলা ও স্বেচ্ছাচারিতাকে দূষছেন ভুক্তভোগীরা। অসতর্ক আশপাশের প্রতিষ্ঠানগুলোও। হাসপাতালের সামনেই অবস্থিত রাজশাহী বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার। গ্রন্থাগারের ভেতরে-বাইরে মশার উর্বর প্রজননক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রামেক হাসপাতালের ভেতরের পরিবেশ পরিষ্কার থাকলেও বাইরের ড্রেন ও আশপাশের স্থাপনাগুলোর পরিবেশ ভালো না। এ কারণে মশার এই উৎপাত। রাসিকের কোটি টাকার মশা নিধন কর্মসূচির কোনো সুবিধা মিলছে না। সরেজমিনে হাসপাতালের বাইরের এলাকা ঘুরে দেখ গেছে, শুধু ড্রেন নয়, মেডিকেল কলেজের হোস্টেল এলাকা ও আশপাশের ঝোপঝাড়ও কাটা হয়নি। সামান্য বৃষ্টি হলেই জমে থাকা পানিতে মশা জন্মাচ্ছে। এ ছাড়া হাসপাতালের সামনেই রাজশাহী বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার। সেখানেও বেহালদশা।
রাজশাহী বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার ঘুরে দেখা গেছে, গ্রন্থাগারের অধিকাংশ জায়গা এখন পরিত্যক্ত। যেখানে দিনের বেলায়ও মশার মেলা বসছে। এতে একদিকে যেমন এখানে পড়াশোনা করতে আসা শিক্ষার্থীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে, তেমনি অনিরাপদ করছে হাসপাতাল এলাকাকেও। রাজশাহী বিভাগীয় গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ বলছে, গ্রন্থাগারে পরিচ্ছন্নতার জন্য জনবল নেই। এ কারণে তারা রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে একাধিকবার ঝোপঝাড় পরিষ্কারের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। কাউন্সিলর অফিসে একাধিকবার লিখিতভাবে চিঠি দিয়েও জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে মশার উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। রামেক হাসপাতালের প্রধান ফটক ও বহির্বিভাগের সামনের ড্রেন যে শুধু মশার উর্বর জায়গা তাই নয়, জনদুর্ভোগেরও কারণ। ড্রেন ভর্তি হয়ে উপচে পড়ছে ময়লা পানি। পাশ দিয়ে হেঁটে চলাচলেও দুর্গন্ধ, সন্ধ্যা হলেই মশার অসহ্য যন্ত্রণার মুখে পড়ছেন সেবাপ্রার্থীসহ অন্যান্যরা। অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের দোকানগুলোতেও মশার উৎপাদন হচ্ছে। অথচ এ বিষয়ে কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ জানান, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছেই। গত সোমবার ২৪ ঘণ্টায় ২২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে ৮৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।