রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাদেশ অনুসারে পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশের কথা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের বিভাগের ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও ফলাফল প্রকাশ হয়নি। এতে সেশনজটের আশঙ্কায় আছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ৩য় বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয়েছে ৪ মাস। তবে ফলাফল কবে পাবে তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে শঙ্কা। শিক্ষকদের অবহেলার ফলেই ফল প্রকাশ হচ্ছে না বলে জানান শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, ঠিকমতো ক্লাস না নেওয়া, পরীক্ষা নিতে গড়িমসি করা এমন সব বিষয়ে। বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ সেশনের ২য় বর্ষের তত্ত্বীয় পরীক্ষা শুরু হয় গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর এবং শেষ হয় এবছরের জানুয়ারি মাসের ২৫ জানুয়ারি। ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হয় মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে। এছাড়াও, ২০১৮-১৯ সেশনের ৩য় বর্ষের তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হয়েছে ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে ২৩ শে মে। ৩ মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। এর আগে ২০১৮-১৯ সেশন তাদের ২য় বর্ষের ফলাফল পেয়েছিল প্রায় ৮ মাস পর। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক আবদুল্লাাহ আল মারুফ। এবং ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা কমিটির অধ্যাপক লতিফুর রহমান সরকার। এর আগে, ২০১৮-১৯ সেশন তাদের ২য় বর্ষের ফলাফল পেয়েছিল প্রায় ৮ মাস পর। বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, শুরুতেই ঠিকমতো ক্লাস নেয় না শিক্ষকরা। শেষের দিকে গিয়ে অতিরিক্ত চাপ দেওয়া হয় তাদের। এছাড়াও যতদিন ফল না দেবে, ততদিন ক্লাস না নেওয়া। থিওরির ১ মাস পরে ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া। পরীক্ষার মধ্যে ক্লাস নেওয়া। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও ফলাফল প্রকাশিত হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২০১৯-২০ সেশনের এক শিক্ষার্থী বলেন, করোনার কারনে আমাদের দেড় বছরেরও বেশি সময় ক্ষতি হয়েছে। আমাদের এই একাডেমিক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের বিভাগের শিক্ষকরা কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ক্লাস পরীক্ষা নিতে গড়িমসি এবং বিলম্বে ফলাফল প্রদান বিভাগের নিয়মিতরীতি হয়ে দাঁড়িয়ে। আমরা বিভাগের শিক্ষার্থীরা আমাদের শিক্ষকদের এরূপ আচরণে খুবই হতাশ। একই বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের অন্য আর এক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষকরা ঠিকমতো ক্লাস নেয় না আমাদের। ক্লাস না নেওয়ার ফলে শেষে আমাদের অতিরিক্ত চাপ দিয়ে ফেলে। ফলাফল দিতে প্রতিবারই দেরি করে। থিওরি পরীক্ষার পরে আমাদের ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে হয়। শিক্ষকরা পরীক্ষার পরে গিয়ে ব্যবহারিক ক্লাসগুলো নেয়। আমাদের পরীক্ষা মাঝে বন্ধের সময়ও শিক্ষকরা ক্লাস নেয়। তিনি আরও বলেন, করোনার দেড় বছর পিছিয়ে আছি, তা থেকে উত্তরণের আমাদের শিক্ষকরা কোনো ভূমিকাই নেয়নি। আমরা অনেক সময় সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করার কথা বলেছি তারা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের কথা বলে। তাহলে ৮ মাসে রেজাল্ট দেওয়াটা কোন নিয়মে আছে? আমাদের সেশনের অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা এখন মাস্টার্সে। আর আমরা এখনো মাত্র চতুর্থ বর্ষে। এভাবে আমরা হতাশায় পরে যাচ্ছি। আমরা চাই দ্রুত এর সমাধান হোক। এবিষয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মারুফ বলেন, আমাদের রেজাল্ট প্রস্তুত হয়ে গেছে। ছোট একটা সমস্যার জন্য আমরা ফলাফল প্রকাশ করতে পারছি না। আশা করি সামনে সপ্তাহের মধ্যে আমরা ফল প্রকাশ করতে পারব। এবিষয়ে ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সিতাংশু কুমার পাল বলেন, আমরা সব সময় চাই দ্রুত ফলাফল প্রকাশ করতে। কিন্তু বিভিন্ন সময় অনেক নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে দেরি হয়ে যায়। অনেক সময় খাতা প্রথম পরীক্ষক ও দ্বিতীয় পরীক্ষকের মার্কের ব্যবধান হলে তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে খাতা পাঠাতে হয়। তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাসে আসে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ শিক্ষকদের ব্যাপার।