রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া গ্রামের পঙ্কজ কুমার মহন্ত। এরইমধ্যে রাজশাহী কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। শখের বসে বাগান করতেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি সৌন্দর্য বর্ধক গাছ সাকুলেন্ট, ক্যাকটাস এবং এডেনিয়াম তৈরি এবং বিক্রয় করাকে দিয়েছেন বাণিজ্যিক রূপ। চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় তার বার্ষিক আয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। পঙ্কজ কেউরাজোরা তার পৈত্রিক ৩০ শতক জমির উপর তৈরি করেছেন এই ফার্ম। তিনি ভারত, থাইল্যান্ড ও চীন থেকে ইনপোটারদের মাধ্যমে চারা সংগ্রহ করেন।
বর্তমানে বাগানের পলি হাউজের নিচে কিছুটা উঁচু চৌকির উপর চাষ করেছেন প্রায় ৩০০ প্রজাতির ৪০ হাজারের বেশি সাকুলেন্ট, ক্যাকটাস, এবং এডেনিয়াম। তাই নিজের বাগানের নাম রেখেছেন ‘সাকুলেন্ট প্যারাডাইস’। সাকুলেন্ট এক বিশেষ ধরনের উদ্ভিদ, যা পানি সংগ্রহ করে জমা রাখে শরীরে। এজন্য তাদের পাতা বেশ পুরু ও রসাল হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা সাকুলেন্ট প্রজাতির উদ্ভিদের জন্য বিখ্যাত। আমাদের দেশে বাসাবাড়ির সজ্জার জন্য কিংবা বাগানের জন্য এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে।
সর্বনিম্ন ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা দামের গাছ আছে তার বাগানে। আর সাকুলেন্টের দাম ২৫০ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা। তবে সহজ শর্তে ঋণ ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এর চাষ আরো বাড়বে বলে দাবি স্থানীয়দের। চাষি পঙ্কজ কুমার মহন্ত জানায়, ছোট বেলা থেকে গাছাপালার প্রতি আমার আলাদা একটা আকর্ষণ ছিল। শহরে লেখাপড়ার সময় আমি ক্যাকটাস, সাকুলেন্ট সম্পর্কে জানতে পারি। তখন থেকেই আমি ক্যাকটাস, সাকুলেন্ট সংগ্রহ করা শুরু করি। এখন আমার ফার্মে ২৫০ থেকে ৩০০ প্রজাতির সাকুলেন্ট এবং ১৫০ থেকে ২০০ প্রজাতির ক্যাকটাস আছে এবং সাকুলেন্টের একক ফার্ম হিসেবে এটা আমার জানা মতে বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় ফার্ম। এবং আমার এই অর্জনটার পেছনে আমাদের এখানকার যে কৃষি কর্মকর্তারা রয়েছে তারা আমাকে সার্বক্ষণিক সাহয্য ও সহযোগিতা করেন এবং যে কোনো সমস্যায় আমি তাদের দ্বারস্ত হই।
তিনি আরো বলেন, এগুলো বিক্রি করার জন্য সবচেয়ে উপযোগী মাধ্যম হলো অনলাইন। আর বর্তমানে এটা অফলাইনেও ভালো বিক্রি হয়। অনেকেই বাইরে থেকে আমার ফার্ম দেখতে আসে। আমার যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সেটা হচ্ছে যে, আমি এটা করে সবার কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। নিজের ইচ্ছাতেই অনেক কিছু করা যায়।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবির মাহামুদ জানায়, এই ফার্মটা প্রথম এতো বড় সাকুলেন্ট ও ক্যাকটাসের ফার্ম আমাদের শ্রদ্ধেয় উপ-পরিচালক ও কৃষি কর্মকর্তার নির্দেশ ক্রমে আমরা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সব সময় আসি এবং তাকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ প্রদান করে থাকি। এই ফার্ম দেখে এলাকার অনেক তরুণ যুবক তারা উদ্যোগতা হিসেবে আগ্রহ প্রকাশ করছে। আমাদের সার্বিক সহযোগিতায় পঙ্কজ কুমার অনেকটা স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। আমরা তার সার্বিক মঙ্গল কামনা করি।
শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন মুকুল জানায়, পঙ্কজ লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজের উদ্যোগে নিজের জমিতে সাকুলেন্ট, এডেনিয়াম এবং ক্যাকটাসের যে ফার্মটা তৈরি করেছে এটা বোধ করি রাজশাহী জেলাতে আর কোথাও এরকম নেই। এখানে সে নিজস্ব উদ্যোগে নিজম্ব উদ্ভাবনে এই কাজটা করছে। সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থার সাপোর্ট পেলে এই ফার্মটা আরো ভালোভাবে করতে পারবে।