ঢাকা ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রামে ফের আমন আবাদে কেটে যাচ্ছে বন্যার ক্ষত

চট্টগ্রামে ফের আমন আবাদে কেটে যাচ্ছে বন্যার ক্ষত

গত আগস্ট মাসের শুরুতে অতিবৃষ্টিতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে চট্টগ্রাম বিভাগের চার জেলা। এই বন্যার পানিতে তলিয়ে মারা গেছে প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ। কেড়ে নিয়েছে কৃষকের বেঁচে থাকার শেষ সম্বল রোপা আমন ও বীজতলা। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, পটিয়া ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা। এমন পরিস্থিতিতে চলতি মৌসুমে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা তৈরি হয়। তবে সব শঙ্কা উড়িয়ে চট্টগ্রামে এরইমধ্যে ফের লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ আমন আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। এতে ঘুঁচে যাচ্ছে বন্যার ক্ষত। গতকাল শনিবার এ তথ্য জানান চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শষ্য) মো. ওমর ফারুক। তিনি বলেন, বন্যার পর আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য কাজ শুরু করে কৃষি বিভাগ। বীজতলা তলিয়ে যাওয়ায় ৩ উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ৩০ মেট্রিক টন ধানবীজ বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি কম সময়ে ফলন হয় এমন জাতের ধান রোপণ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। ফলস্বরূপ অল্প সময়ে জেলায় লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ আমন আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় এক লাখ ৭৯ হাজার ৬৩ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এর মধ্যে এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় এক লাখ ৭৮ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্যে হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৭৬৮ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের আবাদ হয়েছে এক লাখ ৪৮ হাজার হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ধানের আবাদ হয়েছে ২৩ হাজার ২৫৪ হেক্টর জমিতে।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বন্যায় ও অতিবৃষ্টির কারণে জেলায় আমন আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বীজতলা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চারা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে জেলায় বিভিন্ন এলাকায় চারা সংকটের কারণে আমন আবাদ পিছিয়ে পড়েছে। তবে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষক বীজ ও নানা পরামর্শ প্রদান করেছে কৃষি বিভাগ। জেলায় এরইমধ্যে শতভাগ আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। কর্মকর্তারা আরো জানান, বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চন্দনাইশ, উপজেলায়। এই তিন উপজেলায়ও লক্ষ্যমাত্রার ৯৮ শতাংশের বেশি আমন আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া বাঁশখালী ও পটিয়া উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার ৯৯ শতাংশ এবং রাঙ্গুনিয়ায় শতভাগ আমন আবাদ সম্পন্ন হয়েছে।

ফলে আমান চাষাবাদে বন্যার ক্ষত বিলীন হয়ে গেছে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি আমন মৌসুমে রাঙ্গুনিয়ার ১৫ হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বন্যার কারণে রোপা আমন এবং বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কৃষকদের উৎসাহিত করে নতুনভাবে বীজতলা তৈরি করা হয় এবং পানি নেমে যাওয়ার পর পুরোদমে কাজ করে এরইমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ চাষাবাদ সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডারখ্যাত গুমাইবিলে গিয়ে দেখা যায়, বিলের বিস্তীর্ণ কৃষি মাঠ সবুজ আকার ধারণ করেছে। যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজের সমারোহ। অথচ এই বিল ঘিরে ছিল বন্যার ক্ষত। যা বিলীন হয়ে গেছে সবুজ আমন চাষাবাদে। বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে শতভাগ চাষাবাদ সম্পন্ন হওয়ায় এখন কৃষকরা ভালো ফলনে আশার আলো দেখছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত